নিজস্ব প্রতিবেদক: নানা বিতর্কের মাধ্য দিয়ে আজ শেষ হলো বিবাহিত, অছাত্র ও মাদকাসক্তদের নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ। কমিটি ঘোষণায় টাকা আদায়, টেন্ডারবাজি, জমিদখল, আর একের পর এক চাঁদাবাজির অভিযোগে আছে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। গতবছরের ২৪ মে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য এস এম আশিকুর রহমানকে সভাপতি ও সুমন হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরন, জমিদখল সহ নানাবিধ অভিযোগ আছে। জমি দখলের জন্য তার একটি বিশেষায়িত বাহিনী আছে। গত মাসের ২৮ এপ্রিল ছাত্রলীগের সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শাখার রাজিব ইমরাকে সভাপতি ও হাসানুজ্জামাকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়। কিন্তু বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়ার বিষয়টি সামনে এলে পহেলা মে সদর উপজেলা কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। এদিকে উপজেলা ও থানা পর্যায়ে ছাত্রলীগের কমিটি দিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দুই পোস্টের বিনিময়ে কমিটি প্রতি ২০ লক্ষ টাকা করে আদায় করছে। এভাবে প্রায় পৌনে কোটি টাকা আদায় করেছে আশিকের নেতৃত্বাধীন গ্রæপটি। তাদের ও তাদের ঘোষিত কমিটির নেতাদের এসব কর্মকান্ডে বিরক্ত হয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য। জেলা ছাত্রলীগের এক সদস্য এ তথ্য দেন। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি সপ্তাহকাল ব্যাপী চেষ্টা করেও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে দেখা করতে পারেননি এসএম আশিকুর রহমান।
সর্বশেষ মেয়াদ প‚র্তির তিনদিন প‚র্বে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউনিয়নের মৎস চাষি স্বপন মন্ডলের ঘের দলবল নিয়ে দখল করতে যায় ছাত্রলীগ সভাপতি। এসময় স্থানীয়দের তোপের মুখে তারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
এদিকে ক্ষমতা পাওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের অংঙ্গ সংগঠনের এক নেতার জমিতে বালি ফেলাকে কেন্দ্র করে চাঁদা দাবি করে আশিক ও তার দলবল। চাঁদা না দেয়ায় কয়েকদফায় তার ওই জমিতে গিয়ে টিনসেড ভাংচুর করে। অবশেষে তিন দফায় এক লক্ষ টাকা চাঁদা আদায় করে শান্ত হয় তারা। এখন তার ব্যবহৃত কার্যালয়টিও দখল করে অস্থায়ী ভাবে ব্যবহার করছে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল ইটাগাছায় মুজিবুর রহমানের ৭ শতক জমি দেড় লক্ষ টাকার বিনিময়ে শাহাজান বিশ্বাসদের দখল করিয়ে দেয় ছাত্রলীগ সভাপতি আশিকের নেতৃত্বে একদল ছাত্রলীগ নেতা। তাদের সহায়তা করে পৌর ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।
জেলা পরিষদের মালিকানাধীন তালা-ইসলামকাটি-সুজনশাহা-পাটকেলঘাটা সড়কের দু’ধারের ৯৫৪টি গাছ বিক্রির জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়। টেন্ডার জমা দেয়ার সময় অন্যান্য ব্যবসায়ীদের বাধা প্রদান করে ছাত্রলীগ। শুধু মাত্র একজনকেই টেন্ডার দাখিল করতে দেয়া হয়। এ নিয়ে বেশ মোটা অংকের টাকা আদায় করে ছাত্রলীগ।
গতমাসে সাতানি বাজারস্থ কবীর নামের এক ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ীকে মাইক্রোযোগে অপহরন করে আশিকের নেতৃত্বাধীন গ্রæপটি। কবীরের কাছে এক ব্যক্তির ১০ লক্ষ টাকা পাওনা আদায়ের জন্য মোটা অঙ্কের কমিশনে এই কাজ করে আশিক। এ নিয়ে মামলার প্রস্তুতি গ্রহণ করলেও ছাত্রলীগের ভয়ে শেষ পর্যন্ত মামলা করেনি কবীর। কবীরের মোবাইল নম্বরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে পারিবারিক নিরাপত্তার কথা বলে ফোন কেটে দেয় কবীর।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির নেতৃত্বে একটি গ্রæপের সদস্য ঈদের সময় দেবহাটা থেকে ২০০ বোতল ফেন্সিডিল সংগ্রহ করে সাতক্ষীরায় বিক্রির করে। সম্প্রতি ডুমুরিয়ায় ইয়াবাসহ আটক হয় বাহিনীর সে। তবে সভাপতি আশিকের প্রচেষ্টায় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে তাকে মুক্ত করা হয়। ঈদুল ফিতরের সময় ভারতীয় এক পাসপোর্ট যাত্রীকে জিম্মি করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে ওই একই ব্যক্তি। ঘটনা জানার পর ভারতীয় হাইকমিশনারের চেষ্টায় ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ওই ভারতীয়কে ছেড়ে দেয় তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান জানান, এসবই অপপ্রচার। একটি গ্রæপ কেন্দ্রে আমাদেরকে হেয় করতেই এসব প্রচার দিয়ে বেড়াচ্ছে
সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের এসব বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৩রা নভেম্বর জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন আংশিক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়। পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়ে আগ্রহীদের নিকট থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহবান করেন। জীবনবৃত্তান্ত জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর। ঘোষণা পেয়ে ৬৪জন জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়ে লবিং গ্রুপিং শুরু করে। সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও আওয়ামী লীগের একাধীক সংসদ সদস্য তাদের মতামতও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠান। একজন সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অছাত্র ও বিবাহিত কাউকে দিয়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি না করার জন্য পরামর্শ দেন। কিন্তু সেসব পরামর্শ আমলে না নিয়ে বিতর্কিতদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত আংশিক কমিটির সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান আশিক, সহ-সভাপতি হাসিম উদ্দিন হিমেল, ফজলে রাব্বী শাওন, সাধারণ সম্পাদক মোঃ সুমন হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী শাহেদ পারভেজ ইমন, হাসানুজ্জামান শাওন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মহিদুল ইসলাম ও মাসুম পারভেজ হালিম।