
লিটন ঘোষ বাপি: দেবহাটা উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ ইউনিয়ন নওয়াপাড়া। কিছুদিন পরই ঘোষণা হবে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী তফশিল। দলীয় প্রতীকে এবারও ভোট হবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে।
তাই আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। সম্ভাব্য প্রার্থী ও নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জল্পনা-কল্পনা। হাটে, বাজারে, চায়ের দোকানে, মাঠে-ঘাটে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। সেই সাথে সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এলাকার প্রতিটি গ্রাম পর্যায়ে গণসংযোগ, মটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে শো-ডাউন বাড়িয়েছেন।
এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি। সাথে নিজের অবস্থান ও জানান দিচ্ছেন। অনেকেই লবিং শুরু করেছেন দলীয় মনোনয়ন প্রাত্যাশায়। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন ।
নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সহ আঙ্গসংগঠনের সম্ভাব্য দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ৫ জন।
তবে মামলার জটে পলাতক থাকায় দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল কারোর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি তবে ইউনিয়ন জুড়ে জামায়াত- বিএনপির হয়েছেন বড় অংকের ভোট ব্যাংক। জামায়াত অংশ না নিলেও তাদের ভোট জয় পরাজয় নির্ধারণ করতে পারে।
৩৬.৩১ বর্গকিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট নওয়াপাড়া ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ৩২ হাজার ৮৭০জন। এখানে পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে বর্তমান ভোটার সংখ্যা ২৩ হাজার ২৭৪ জন। মুলত আগামী ইউপি নির্বাচনে এসকল ভোটাররাই ব্যালটের মাধ্যমে নওয়াপাড়া ইউনিয়নের আগামী দিনের অবিভাবক নির্ধারণ করবেন।
২০১৬ সালের ২২ মার্চ নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকের প্রার্থী ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমান। দীর্ঘদিন ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকার উন্নয়ন করার পর ইউপি চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে গেল ১০ ডিসেম্বর উপনির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে উপজেলা পরিষদের হাল ধরেছেন তিনি। তাই আগামী ইউপি নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দী না থাকায় প্রার্থীতার নতুন সমীকরণ সৃষ্টি হয়েছে নওয়াপাড়া ইউনিয়নে।
এখানে ইতোমধ্যেই যেসকল ব্যাক্তিরা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা ঘোষনা দিয়েছেন তাদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের টানা ৯ বছরের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন সাহেব আলী। দীর্ঘদিন ধরে মানুষের সুখে দুঃখে পাশে থেকে জনগনের আস্থা ও ভালবাসা কুড়িয়ে বেশ সুবিধা জনক অবস্থানে রয়েছেন তিনি। তার পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দীতায় রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি শরৎ চন্দ্র ঘোষ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুল হক লাভলু, প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল গনির পুত্র সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল কাইয়ুম ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দীন খোকন। এদের সকলেই আওয়ামী লীগে সম্পৃক্ত এবং সকলেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়াও নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তিন বারের নির্বাচিত সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহনেচ্ছুক বলে জানিয়েছেন। তবে তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সমর্থন না নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে চান বলেও জানিয়েছেন।
অন্যদিকে এ ইউনিয়নে বিএনপি বা জামায়তের পক্ষ থেকে এখনও চেয়ারম্যান প্রার্থী নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় বেশ সংশয়ে রয়েছেন তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিগত নির্বাচনে পরাজিত হওয়া বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিমও এখনো নিজের প্রার্থীতার বিষয়ে নিশ্চিত নন।
ইউনিয়নের সাধারণ ভোটাররা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সবাই আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থাকলেও ইউনিয়নটি মুলত বিএনপি ও জামায়ত অধ্যুষিত। যদি বিএনপির পক্ষ থেকে রেজাউল করিম অথবা জামায়তের পক্ষ থেকে অন্যকোন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সাথে বিএনপি বা জামায়তের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দীতা হতে পারে।
আলমগীর হোসেন সাহেব আলী বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে তৎকালীন নৌকার মাঝি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মুজিবর রহমানকে সমর্থন জানিয়ে কাজ করেছি। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০১৩ সালে রাজপথে থেকে বিএনপি-জামায়তের সহিংসতা কর্মকান্ড মোকাবেলার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। জনপ্রতিনিধি না হয়েও বছরের পর বছর মানুষের বিপদে আপদে পাশে থেকে সাধ্যমতো সহায়তা করে এসেছি। জনগন আমার সাথে আছে, আশা করি উন্নয়নের স্বার্থে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিবেন।
শরৎ চন্দ্র ঘোষ বলেন, দীর্ঘদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরবর্তীতে সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে প্রস্তাবিত কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি পদে আমাকে রাখা হয়েছে। আমি সবসময় দলকে সুসংগঠিত করতে কাজ করেছি ২০১৩ সালে বিএনপি জামায়ত আমার আমার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। আমি নওয়াপাড়াকে একটি মাদকমুক্ত ও মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আশাকরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়ে সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করার সুযোগ দিবেন।
মাহমুদুল হক লাভলু বলেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে আমি সবসময় মানুষের সেবা করেছি। দলকে সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেছি। এখন ইউনিয়নের উন্নয়ন করার লক্ষে আমি চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছি। আমিও দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী।
আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমার বাবা প্রয়াত আলহাজ্ব আব্দুল গণি দীর্ঘদিন এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পরবর্তীতে দশ বছর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে আমৃত্যু সাধারণ মানুষের সেবা করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমিও মানুষের কল্যানে আত্মনিয়োগ করতে চাই। তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন না দিয়ে অন্য কাউকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়ে সেই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবো।
মহিউদ্দীন খোকন বলেন, আমি এলাকার উন্নয়ন ও জনগনের কল্যাণে কাজ করার ব্রত নিয়েই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। আশাকরি সকলের সমর্থন ও দলীয় মনোনয়ন পাব। নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে নওয়াপাড়াকে একটি আধুনিক ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলবো।
দলীয় নৌকা প্রতীকের প্রাথী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কাদের ভুমিকা থাকবে এ বিষয়ে দেবহাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- তৃণমুল নেতৃবৃন্দের ভোটাভুটির মাধ্যমে বাছাই করা হবে, উপজেলা এবং জেলার ৬ জনের বোর্ড সে সকল নেতৃবৃন্দ তৃণমুল পর্যায়ে ভাল অবস্থানে থাকবে তাদের মধ্যে থেকে ৩ জনকে তালিকা করে কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কেন্দ্র বিভিন্ন গয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে তথ্য নিয়ে গ্রহনযোগ্য ব্যক্তিকে নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন দিবেন।
ইতিমধ্যে ইউনিয়নের বিভিন্ন জনপদে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ড, মিটিং, গনসংযোগ, ব্যানার, ফেষ্টুন, লিফলেট এর মাধ্যমে তাদের প্রচার প্ররোচনা শুরু করেছে।