
ফুলেল শুভেচ্ছা বিনিময়, আলোচনা সভা, কেক কাটা ও এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব স ম আলাউদ্দীন প্রতিষ্ঠিত দৈনিক পত্রদূতের ২৬তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত হয়েছে…(তথ্য বিবরণী)। শনিবার দৈনিক পত্রদূত ভবনে জেলার বরেণ্য সাংবাদিক, শিক্ষক, রাজনীতিক, কবি-সাহিত্যিক ও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ‘সাতাশে পত্রদূত’ শিরোনামে অনুষ্ঠানটি মিলনমেলায় পরিণত হয়। অনুষ্ঠানে শুরুতে শহীদ স ম আলাউদ্দীন, মরহুম গোলাম রহমান, সরদার আনিসুর রহমান, জালাল উদ্দীন, প্রয়াত চঞ্চল সিংহ সহ সকল প্রয়াত সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
দৈনিক পত্রদূতের সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি মো. আনিসুর রহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক কালের চিত্র পত্রিকার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, দৈনিক পত্রদূতের উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, যুগান্তর ও এনটিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি সুভাষ চৌধুরী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জিএম মনিরুল ইসলাম মিনি, সাবেক সহ-সভাপতি ও দ্য এডিটরস্ এর সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওয়াজেদ কচি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও পত্রদূতের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য শেখ হারুন-উর-রশিদ, সাংবাদিক ড. দিলীপ কুমার দেব, এড. বদিউজ্জামান, গোলাম সরোয়ার, রবিউল ইসলাম, শফিউল ইসলাম খান, কবি সৌহার্দ সিরাজ, মুহা. জিল্লুর রহমান, এম জিললুর রহমান, আব্দুল জলিল, আমিরুজ্জামান বাবু, আব্দুস সামাদ, সৈয়দ রফিকুল ইসলাম শাওন, সাখাওয়াতউল্যাহ, আসাদুজ্জামান সরদার, আশরাফুল ইসলাম খোকন, শেখ রফিকুল ইসলাম, আব্দুল আলিম, শাহজাহান কবীর, আব্দুর রহিম, শেখ শরিফুল ইসলাম, বিধান চন্দ্র মন্ডল প্রমুখ। সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দৈনিক পত্রদূতের বার্তা সম্পাদক এসএম শহীদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানের সূচনালগ্নে সাপ্তাহিক সূর্যের আলো’র পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান পত্রিকাটির সম্পাদক আব্দুল ওয়ারেশ খান চৌধুরী। ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন স ম আলাউদ্দীন পুত্র ইকবাল পারভেজ জয়সহ অন্যরা।
আলোচনা সভায় দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক লায়লা পারভীন সেঁজুতি বলেন, পত্রদূত প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স ম আলাউদ্দীন। তিনি আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি বেঁচে থাকলে আজকের এই দিনটি অন্যভাবে পালিত হতো। স ম আলাউদ্দীন আমাদের প্রেরণা। স ম আলাউদ্দীন আমাদের সাহস। তার প্রতিষ্ঠিত পত্রদূত আজ অনেক দূর এগিয়েছে। তিনি বেঁচে থাকলে হয়তো আরও এগিয়ে যেতে পারতো। তিনি সকলকে কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা জানান।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার প্রতিষ্ঠাকালীন নির্বাহী সম্পাদক সুভাষ চৌধুরী বলেন, ১৯৯১-১৯৯৬ মেয়াদের সরকারের বিরুদ্ধে তখন তুমুল আন্দোলন চলছে। সরকার বিরোধী হরতাল ধর্মঘট অবরোধের মধ্যেও স ম আলাউদ্দীনকে দেখেছি ভোমরা স্থল বন্দরে যাতায়াত করতে। দেখেছি সাতক্ষীরার উন্নয়নে ছুটে বেড়াতে। এমনই সময়ে জন্মলাভ করে দৈনিক পত্রদূত। দৈনিক পত্রদূত আমি প্রথম থেকেই দেখভাল করতাম। যে পত্রিকায় লেখা থাকতো সম্পাদক প্রকাশক স ম আলাউদ্দিন।
দৈনিক পত্রদূত এর নামকরণ করেছিলেন স ম আলাউদ্দীন। তিনি আমাকে পত্রিকার জন্য কয়েকটি নাম প্রস্তাব করতে বলেছিলেন। আমি যে নামগুলি দিয়েছিলাম তার একটি ছিল দৈনিক বর্ণমালা। আশ্চর্য ব্যাপার আলাউদ্দিন সাহেব নিজেও এক বা একাধিক নাম ঠিক করে এনেছিলেন। আমি বর্ণমালা বলতেই তিনি বললেন- কেনো ‘দৈনিক পত্রদূত’ নাম দেওয়া হলে খারাপ কিসের। ঈষিকার জলিল ভাই দৈনিক পত্রদূতের লোগো করেছিলেন।
ডিক্লারেশন পাবার পর প্রেস এবং পত্রিকা ছাপা নিয়ে পড়েছিলাম মহাসংকটে। সে কাহিনী বড়। তবে পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা ছাপা হয়েছিল খুলনা থেকে দৈনিক পূর্বাঞ্চলের প্রেসে। এর প্রধান শিরোনাম ছিল যাত্রা শুরুর অঙ্গিকার। লিখেছিলাম আমি। দৈনিক পূর্বাঞ্চলে পত্রদূতের প্রথম প্রকাশে যারা আন্তরিকভাবে সব ধরনের সহায়তা করেছিলেন তারা হলেন পূর্বাঞ্চল সম্পাদক মো. লিয়াকত আলি ও সাতক্ষীরাস্থ পূর্বাঞ্চল প্রতিনিধি মো. আব্দুস সাত্তার। যিনি সম্পাদক সেই সম আলাউদ্দিন এবং যারা প্রকাশনায় সহায়তা করেছিলেন সেই লিয়াকত আলি ও সাতক্ষীরার আব্দুস সাত্তার এই তিনজনের কেউই আর জীবিত নেই। আর যেদিন খুলনার ময়লাপোতা মোড়ে বসে বারবার চা খেয়ে প্রকাশনার জন্য রাত কাটিয়েছিলাম আমি, আবদুস সাত্তার এবং তালার সাংবাদিক ফজলুল হক মনি তিনিও আর আমাদের মাঝে নেই। এভাবেই দৈনিক পত্রদূত প্রকাশ হতে থাকে। প্রকাশনা নিয়ে মাঝে মাঝে অনেক সমস্যাও হতো। বিশেষ করে সংবাদ ছাপার ক্ষেত্রে। কোন সংবাদ প্রকাশ হবে আর কোন সংবাদ প্রকাশ হবে না তা স ম আলাউদ্দীন আমাদের নির্দেশনা দিতেন। সত্য প্রকাশে তিনি ছিলেন অবিচল। এনিয়ে কয়েকবার দৈনিক পত্রদূত অফিস আক্রান্ত হয়েছে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। ককটেল ফাটানো হয়েছে। তবুও দমে যায়নি পত্রদূত। বরং সাহসীকতা ও দায়িত্ব নিয়ে তুলে ধরেছে মাটি ও মানুষের খবর।
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও দৈনিক পত্রদূতের উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৯৯৬ সালে স ম আলাউদ্দীনকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের পর সাতক্ষীরার মানুষ একটি ঐক্যবদ্ধ সাংবাদিক সমাজ পেয়েছিল। স ম আলাউদ্দীন হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সেদিন শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে সাংবাদিকরা সমাবেশ করেছিলেন। ১৯৯৮ সালে ভূমিহীন আন্দোলন হয়। এই ভূমিহীন আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় স ম আলাউদ্দনি হত্যার বিচার দাবিতে সাতক্ষীরাবাসি আন্দোলন শুরু করে। ১৯৯৮ সালের ৯ ডিসেম্বর নিষ্ক্রিয় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবকে সক্রিয় করেছিলেন যারা তারা প্রায় সবাই এখানে উপস্থিত আছেন। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে যে ধারাবাহিকতা তৈরী হয়েছিল তা ভেঙে তছনছ করে দেওয়ার পায়তারা চালানো হচ্ছে। এখন গডফাদার নব্য কোটিপতিরা আজ প্রেসক্লাব দখলের ষড়যন্ত্র করছে। যারা সাতক্ষীরার সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নিয়েছেন তাদেরকে আজ উল্টো স্রোতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সাতক্ষীরার উন্নয়নকে বাঁধাগ্রস্ত করতে একটি মহল নানা ধরণের ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে।
আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে প্রায় ৭০ হাজার ঘর উপহার দিচ্ছেন। উন্নয়নের বাতাবরণ উন্মোচিত হয়েছে। পদ্মাসেতু দক্ষিণ বঙ্গের মানুষের জন্য আশীর্বাদ। এই সেতু উদ্বোধন হলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ঢেউ লাগবে। কিন্তু সাতক্ষীরায় কতিপয় অযোগ্য নেতৃত্বের কারণে উন্নয়নের সেই ঢেউ লাগবে কীনা সন্দেহ। আজ বসন্তের কোকিলেরা দুর্নীতির মাধ্যমে স্কুল কলেজ মাদ্রাসায় অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে লুটে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। আজ সময় এসেছে এসব দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। তিনি আরও বলেন, আজ স ম আলাউদ্দীনকে নিয়ে মিটিং করে প্রশ্ন তোলা হয় সাতক্ষীরা নিউমার্কেটের সামনে। অথচ এই স ম আলাউদ্দীন সাতক্ষীরায় বিএনপির শাসনামলে ১৯৯২ সর্বপ্রথম বঙ্গবন্ধুর নামে বঙ্গবন্ধ পেশাভিত্তিক স্কুল এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার অধ্যক্ষ ছিলেন স ম আলাউদ্দীন। কিন্তু আজ অনেক নব্য বসন্তের কোকিলরা সাতক্ষীরার নিয়ন্তা হবার স্বপ্ন দেখছেন। এই নব্য বসন্তের কোকিলদের থেকে দূরে থাকার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে মো. আনিসুর রহিম সকলকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, পত্রদূত অনিয়ম-দুর্নীতি বিরুদ্ধে কথা বলে। সমাজের অসংগতির বিরুদ্ধে কথা বলে। অসহায় নির্যাতীতদের পাশে দাঁড়ায়। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় পত্রদূত সর্বদা সোচ্চার। তিনি সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান। আলোচনা সভায় বক্তারা অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এদিকে দৈনিক পত্রদূতের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম দৈনিক পত্রদূতের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদককে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। দুপুরে দৈনিক ইত্তেফাক ও একুশে টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি জিএম মনিরুল ইসলাম মনি ফুল দিয়ে পত্রদূতকে শুভেচ্ছা জানান। শুভেচ্ছা জানান এসএসসি ৯১ এর সদস্যরা। এছাড়া দৈনিক সাতনদী সম্পাদক হাবিবুর রহমান, সংকল্প সম্পাদক রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী, ভয়েস অব সাতক্ষীরার সম্পাদক এম কামরুজ্জামান, ছড়ার ডাকের সম্পাদক নাজমুল হাসান প্রমুখ পৃথক পৃথকভাবে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুণ অর রশিদ, বশির আহমেদ, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুর রশিদ, প্রবীন সাংবাদিক সেলিম রেজা মুকুল, কাজী শওকত হোসেন ময়না, আইয়ুব হোসেন রানা, আতিয়ার রহমান আসিফ পারভেজ বিরু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।