আশাশুনি প্রতিবেদক:
দেশের প্রথম শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনকে স্বীকৃতি এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানের দাবিতে আশাশুনিতে মানববন্ধন ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। রবিবার (২০ ফেব্রæয়ারি) দুপুর ১২টায় আশাশুনি-সাতক্ষীরা সড়কের বুধহাটা করিম সুপার মার্কেটের সামনে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
সাতক্ষীরা জেলা আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির আয়োজনে মানববন্ধন চলাকালে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যাণার্জী। সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক ও আশাশুনি প্রেসক্লাব সহ-সভাপতি সচ্চিদানন্দদে সদয়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ও প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক এসকে হাসান ও সদস্য হাসান ইকবাল মামুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বুধহাটা ইউপি চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মাহবুবুল হক ডাবলু, আশাশুনি প্রেসক্লাবের সভাপতি এসএম আহসান হাবীব, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জি এম মুজিবুর রহমান, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এড. শহিদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর, অব. লেফঃ শফিফুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ গফফার, সাংবাদিক সোহরাব হোসেন, আকাশ হোসেন, জ্বলেমিন, আরিফুল ইসলাম, গ্রা. ডাক্তার আবু হেনা প্রমুখ।
বক্তাগণ বলেন, শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন ১৯৩০ সালে নানার বাড়ি বুধহাটা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ছিল কনুই গাজী ও মায়ের নাম ছিল পরীজান বিবি। ৩ ভাইয়ের মধ্যে আনোয়ার হোসেন ছিল সবার বড়। মেধাবী আনোয়ার হোসেন বুধহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। পরে বুধহাটা বি.বি.এম কলেজিয়েট স্কুলে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়ার পর খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৪৬ সালে এসএসসি পাস করেন। তিনি খুলনার বিএল কলেজে পড়াশুনাকালীন ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন।
তরুণ আনোয়ার হোসেন আন্দোলনের একপর্যায়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুলনার তৎকালিন গান্ধী পার্কে (বর্তমানে হাদিস পার্ক) ভাষা আন্দোলনের পক্ষে ইস্তেহার পাঠ করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভাষা আন্দোলনের মিছিল থেকে ১৯৪৯ সালে পুলিশ তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে প্রথমে তাকে কোতয়ালী থানায় রাখা হয়। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় রাজশাহী কারাগারে। সেখানে পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রাখেন।
একপর্যায়ে ১৯৫০ সালে ২৪ এপ্রিল রাজশাহী জেলে খাপড়া ওয়ার্ডে গুলি চালানো হয়। ছাত্র নেতা আনোয়ারসহ কারাবন্ধী ৭ জন নিহত হন। মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলনে ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন দেশের প্রথম শহীদ। অথচ রাষ্ট্রীয়ভাবে তার কোন স্বীকৃতি নেই।
মানববন্ধন শেষে তাকে প্রথম ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান, আশাশুনি সরকারি কলেজের নাম 'শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনের' নামে নামকরণ, সাতক্ষীরা, আশাশুনি, বুধহাটাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক তার নামে নামকরণ করা, সরকারিভাবে ট্রাস্ট গঠনের দাবী সম্বলিত একটি স্মারক লিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইয়ানুর রহমান এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর হস্তান্ত করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার দাবীর সাথে একাত্বতা ঘোষণা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস প্রদান করেন।