
লিটন ঘোষ বাপি:
আগামী ১০ ডিসেম্বর দেবহাটা উপজেলা পরিষদ উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন আর তাই উপ-নির্বাচনকে ঘিরে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে উপজেলা ব্যাপী বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী আমেজ। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মনোনয়ন দাখিলের শেষ তারিখ ১৫ নভেম্বর, মনোনয়ন বাছাইয়ের তারিখ ১৭ নভেম্বর, আপিল দাখিলের শেষ তারিখ ১৮-২০ নভেম্বর, আপিল নিষ্পত্তির শেষ তারিখ ২১-২২ নভেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৩ নভেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ২৪ নভেম্বর এবং ভোটগ্রহণ ১০ ডিসেম্বর।
তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রার্থীরা উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে চলেছে দিন-রাত। সাধারণ জনগণের সাথে শুরু করেছে গণসংযোগ দিচ্ছ নানা প্রতিশ্রুতি। দেখলে মনে হয় উপ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে গণসংযোগের প্রতিযোগিতা।
চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মুদির দোকান, শপিং মল,কাঁচাবাজার, হাট-বাজার সর্বত্রই সাধারণ জনগণ এমনকি প্রশাসনিক কর্মকর্তা সকলের মুখে মুখে নির্বাচনী আলোচনা এর সাথে সাথে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের নিয়ে নানামুখী চিন্তা-ভাবনা ।
কে হতে চলেছে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান ? সে কি পারবে দেবহাটা উপজেলাকে সাতক্ষীরার ভিতরে মডেল উপজেলা করে গড়ে তুলতে ? তা নিয়েও দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারন জনগনের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
এরই মধ্যে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের জন্য বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সভানেত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত রাজনৈতিক কার্যালয় ধানমন্ডি-৩ এ গিয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব আল ফেরদৌস আলফা, জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম, উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান সবুজ, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মহরম আলহাজ্ব আব্দুল গনির মেজ পুত্র দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক রনি।
তাই ইতিমধ্যে অনেকেই শুরু করেছেন গণসংযোগ। যেহেতু উপনির্বাচন সেহেতু স্ব”ছ ও জবাবদিহিতা মুলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে মনে করেন সাধারণ জনগণ। আর সে ক্ষেত্রে নির্ভয়ে ভোট প্রদানের নিশ্চয়তাও আশা করেন তারা।
তথ্য মতে,দেবহাটা উপজেলা ৫ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। মোট ভোটার সংখ্যা ৯৮ হাজার ।গত ২৪ মার্চ ২০১৯ তারিখে উপজেলা নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল গনি আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। উক্ত নির্বাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। কিš‘ গত ৬ আগস্ট ২০২০ তারিখে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল গনি মহামারী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হয়।
এরপর পরই শুরু হয় সম্ভাব্য প্রার্থী ও উপ-নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা-কল্পনা। অনেকে শুরু করেন গণসংযোগ। বিভিন্ন এলাকার মানুষের কাছে গিয়ে নিজের অব¯’ান জানান দি”েছন মনোনয়ন প্রত্যাশীর অনেকে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশা করে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন ।
এদিকে উপ-নির্বাচনে বিএনপি ভোটযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চায় বলে দলীয় একাধিক সুত্রের মাধ্যমে বিষয়টি জানা গেছে।
দেবহাটা উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন নিয়ে নিজের প্রার্থিতা বিষয় আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব মজিবর রহমান বলেন,দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত যে আমি নৌকার টিকিট পাব কারণ আমি দুইবার উপজেলা আ’লীগের নির্বাচিত সভাপতি।
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনে আ¯’া অর্জন করতে পেরেছি। উপজেলার বিদ্যুৎ, রাস্তা- ঘাট, স্কুল-কলেজ সহ বিভিন্ন স্তরে আমার অবদান রয়েছে তাই আমি আশাবাদী নৌকার প্রতীক আমি পাব আর উপজেলা চেয়ারম্যান হতে পারলে দেবহাটা উপজেলা কে আমি আধুনিকায়ন করে সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে রোল মডেল তৈরি করব।
আসন্ন উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন সামনে রেখে উপজেলা ব্যাপী মানুষের সাথে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি। উপ-নির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে দলীয় প্রার্থী ক্ষেত্রে আমি খুবই আশাবাদী, আমি মনে করি নৌকার টিকিট আমি পাব। দেবহাটা রাজনীতির মাটি ও মানুষের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমি দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের পর পর তিনবার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
২০১৯ সালের ২৪ মার্চ দেবহাটা উপজেলা পরিষদের নির্বাচন উপলক্ষে তৃণমূল নেতাকর্মীদের ভোটে যে কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় সেখানে কাউন্সিলদের বিপুল ভোটে একক প্রার্থী হিসেবে আমি নির্বাচিত হয়। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নিলে আমি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করিনি এমনকি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবেও নয়। তাই আমি মনে করি তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত অনুযায়ী কেন্দ্র যদি সঠিকভাবে নির্বাচিত করে তাহলে উপনির্বাচনে কেন্দ্র থেকে আমি নৌকার মাঝি হিসেবে মনোনীত হব। আর আমি উপজেলা পরিষদের উপ নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হতে পারলে উপজেলাকে সাতক্ষীরা জেলার ভিতরে মডেল উপজেলা হিসেবে রূপান্তরিত করব।
উপজেলা উপ-নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ শুরু করেছে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজ সেবক ও সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব আল ফেরদৌস আলফা। উপ নির্বাচন নিয়ে তিনি দৈনিক সাতনদী কে জানান, নিরপেক্ষ ভোট হলে নির্বাচনে জনগণ আমাকে বিজয়ী করবে। ব্যবসায়ী জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুরু করেছি আজও তা অব্যাহত আছে ।
জেলা পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সততার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। জেলা পরিষদ থেকে কোটি টাকার উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড করেছি মানুষের জন্য। উপজেলার সাধারণ মানুষ চাই আমি উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করি তাই মানুষের চাওয়া কে সম্মান জানিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে নিজের প্রার্থিতা বিষয়ে উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান সবুজ বলেন, জনগণের ভালোবাসার কারণেই আজ আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দীর্ঘদিন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছি। সততার সাথে কাজ করেছি। যদি নৌকার প্রতীক পায় তবে বিপুল ভোটে জয়ী হব এবং দেবহাটা উপজেলা কে সন্ত্রাস দুর্নীতি ও মাদকমুক্ত উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো।
উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচন নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছে জেলা আওয়ামীলীগ নেতা আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম । নিজের প্রার্থীতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি।আমি স্কুল ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। তৃণমূল সংগঠন কে সুসংগঠিত করতে মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করে যাচ্ছি। আমি আশা করি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন আমি পাব। আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারলে উপজেলা কে আধুনিকায়ন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বুকে ধারণ করে মানুষের সেবা করে যাব।
উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে নিজের প্রার্থীতা সম্পর্কে উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান স ম গোলাম মোস্তফা বলেন, আমার বাবা ছিল মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। বাবার পথ ধরেই ৭৩ সালে আমি ছাত্র লীগের যোগদান করি। ৫ বছর দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে দেবহাটা উপজেলাকে আধুনিকায়নের চেষ্টা করেছি । বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও আদর্শ নিয়ে উপজেলা গড়ে তুলতে চাই। তাই দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারলে আমি জয়লাভ করবো আর উপজেলা চেয়ারম্যান হয়ে দেবহাটা উপজেলাকে আরো আধুনিকায়ন করে ডিজিটাল উপজেলা হিসেবে গড়ে তুলবো।
উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে নিজের প্রার্থিতা বিষয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবদুল গনির ছেলে দেবহাটা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক রনি বলেন, আমার বাবা সারাজীবন ধরে মানুষের পাশে থেকে মানুষের সেবা করে গেছেন।
দীর্ঘদিন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। আমি আমার বাবার রেখে যাওয়া অসমাপ্ত কাজগুলো মানুষের কল্যাণের জন্য করতে চাই তাই আমি দলীয়ভাবে নৌকার টিকিট পেলে উপজেলা নির্বাচনের জয়ী হয়ে বাবার স্বপ্ন গুলোকে পূরণ করে উপজেলাকে আধুনিকায়ন করে তুলতে চায়।
অন্যদিকে বিএনপি ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে চায় বলে দলীয় একাধিক সূত্রের মাধ্যমে বিষয়টি জানা গেছে। উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক বাবু জানিয়েছেন, আমরা এ নির্বাচনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে চিঠি পেয়েছি। তবে এখনো আমাদের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। উপজেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবো।
এছাড়া মামলার জটে পলাতক থাকায় দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের দায়িত্বশীল কারোর সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলাজুড়ে জামায়াতের রয়েছে বড় অংকের ভোট ব্যাংক। জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নিলেও তাদের ভোট জয় পরাজয় নির্ধারণ করতে পারে।
তবে উপজেলার সাধারণ জনগণের ধারণা যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তবে উপজেলাবাসী যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবে। যোগ্য ব্যক্তিই হবেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। যার হাত ধরে দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত, ডিজিটাল উপজেলা হিসেবে দেবহাটা উপজেলাকে গড়ে তুলতে পারবে। তাই কে হবে দেবহাটা উপজেলা পরিষদেও নতুন চেয়ারম্যান তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।