লিটন ঘোষ বাপি, দেবহাটা থেকে: আগামী ১০ ডিসেম্বর দেবহাটা উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন আর তাই উপ-নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের নিয়ে উপজেলা ব্যাপী বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী আমেজ।
প্রতিক বরাদ্দ হবার পর থেকেই প্রার্থীরা উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ছুটে চলেছে দিন-রাত। সাধারণ জনগণের সাথে শুরু করেছে গণসংযোগ চাইছে দোয়া, আশীর্বাদ ও সমর্থন। দিচ্ছে নানা প্রতিশ্রুতি। দেখলে মনে হয় উপ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে গণসংযোগের প্রতিযোগিতা।
চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মুদির দোকান, শপিং মল, কাঁচাবাজার, হাট-বাজার সর্বত্রই সাধারণ জনগণ এমনকি প্রশাসনিক কর্মকর্তা সকলের মুখে মুখে নির্বাচনী আলোচনা। আর এর সাথে সাথে শুরু হয়েছে প্রার্থীদের নিয়ে নানামুখী চিন্তা-ভাবনা ।
কে হতে চলেছে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান? কে বসবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারে? সেকি পারবে দেবহাটা উপজেলা কে সাতক্ষীরা ভিতরে মডেল উপজেলা করে গড়ে তুলতে? তা নিয়েও দলীয় নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারন জনগনের মধ্যে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
ইতিমধ্যে এই উপ-নির্বাচনকে ঘিরে প্রাার্থীদের নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। উপনির্বাচন নিয়ে নানা মুখী বিতর্কের মধ্যেও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতা মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে অনেকেই মনে করেন। আর সে ক্ষেত্রে নির্ভয়ে ভোট প্রদানের নিশ্চয়তাও আশা করেন তারা।
দেবহাটা উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে নৌকার মাঝি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন ৪নং নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দেবহাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান। অপর দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কমিটির সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পেয়েছেন আনারস প্রতিক এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অজিয়ার রহমান পেয়েছেন আম প্রতিক।
দেবহাটা উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচন নিয়ে নিজের প্রার্থিতা বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মুজিবর রহমান বলেন, আমি দুইবার উপজেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মনে আস্থা অর্জন করতে পেরেছি।
তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত কে প্রাধান্য দিয়ে আমার উপর আস্থা রেখে নৌকার মাঝি হিসাবে উপজেলা উপ-নির্বাচনে আমাকে মনোনিত করেছেন। তাই আমি মনে করি দেবহাটাবাসী উপজেলা নির্বাচনে আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করবেন। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দেবহাটা উপজেলা কে আধুনিকায়ন করে সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে ডিজিটাল উপজেলায় রুপান্তরিত করব।
অপরদিকে, উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে আনারস প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ শুরু করেছে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম।
নিজের প্রার্থীতা বিষয়ে তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করি। আমি স্কুল ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। তৃণমূল সংগঠন কে সুসংগঠিত করতে মানুষের পাশে থেকে তাদের সেবা করে যাচ্ছি। আমি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারলে উপজেলা কে আধুনিকায়ন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বুকে ধারণ করে মানুষের সেবা করে যাব।
তথ্যমতে, দেবহাটা উপজেলা সর্বশেষ ভোটার তালিকা অনুযায়ী উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা রয়েছে ১ লক্ষ ১২ হাজার ৪ শত ১২ জন।
তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৭ হাজার ১ শত ৫ জন ও মহিলা ভোটার ৫৫ হাজার ৩ শত ৭ জন। ৫ টি ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অনুযায়ী কুলিয়া ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৫ হাজার ৬ শত ৮৬ জন। তার মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ১ শত ১২ ও মহিলা ১২ হাজার ৫ শত ৭৪ জন। পারুলিয়া ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৮ শত ৪৫ জন। তার মধ্যে পুরুষ ১৪ হাজার ১ শত ৩৬ ও মহিলা ১৩ হাজার ৭ শত ৮ জন। সখিপুর ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৮ হাজার ৪ শত ৩২ জন। তার মধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৩ শত ৬৬ ও মহিলা ৯ হাজার ৬৬ জন। নওয়াপাড়া ইউনিয়নে মোট ভোটার ২৫ হাজার ৩ শত ৭৫ জন। তার মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৯ শত ৭১ ও মহিলা ১২ হাজার ৪ শত ৪ জন। এছাড়া দেবহাটা সদর ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৫ হাজার ৭৪ জন। তার মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৫ শত ২০ ও মহিলা ৭ হাজার ৫ শত ৫৪ জন।
উল্লেখ্য, গত ২৪ মার্চ ২০১৯ তারিখে উপজেলা নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল গনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। কিন্তু গত ৬ আগস্ট ২০২০ তারিখে উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল গনি মহামারী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলে উপজেলা চেয়ারম্যানের পদটি শূন্য হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসার শরিফুল ইসলাম জানান, ৩জন প্রার্থী দেবহাটা উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনের ভোট যুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আমরা আশা করি প্রার্থীরা নির্বাচনি আচরণ বিধি মেনে ভোটার কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
কে হবে দেবহাটা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান? তার জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
তবে উপজেলার সাধারণ জনগণের মনে করেন যদি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় তবে আমরা যোগ্য প্রার্থীকেই বেছে নেবো। যোগ্য ব্যক্তিই বসবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের চেয়ারে। যার হাত ধরে আমরা উপজেলাবাসী একটি দুর্নীতিমুক্ত, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত, ডিজিটাল উপজেলা হিসেবে দেবহাটা উপজেলা কে গড়ে তুলতে পারব।