জাতীয় ডেস্ক:
দলীয় সরকারের অধীন আর কোনো নির্বাচনেই ইসলামী আন্দোলন অংশ নেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘দেশ, জাতি সবার জন্যই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন। আসুন, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যাঁর যা কিছু আছে, তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ি।’
দুপুরে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম এসব কথা বলেন। একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের লক্ষে করণীয় ঠিক করতে দলের এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপি, জামায়াত, এবি পার্টিসহ ১৫টি দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
মতবিনিময় সভায় ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ রেজাউল করিম জাতীয় সরকারের একটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। তাতে বলা হয়, আপিল বিভাগের একজন গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠিত হবে। বর্তমান সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে, এই সরকারে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ জাতীয় সরকারে থাকবেন না। এ ছাড়া নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন করে জাতীয় সরকারকে নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথাও প্রস্তাব করা হয়।
পরে সমাপনী বক্তব্যে সৈয়দ রেজাউল করিম বলেন, ‘এই সরকার তাদের অধীন নির্বাচন করার পাঁয়তারা করছে, এটা আমরা কেউ চাই না। এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন।’
সভায় অংশ নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বরিশাল সিটি নির্বাচনে আক্রমণের শিকার হয়ে শান্তিপূর্ণ অবস্থানের জন্য ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তিনি ইসলামী আন্দোলন ঘোষণা যেন পূরণ হয় সেই প্রত্যাশা করেন। একই সঙ্গে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, স্বীকার করি, অতীতে দেশ পরিচালনায় বিএনপির ভুল-ত্রুটি ছিল। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগকে এক কাতারে মেলানো অবিচার হবে।
সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বলেন, ‘একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেশের জন্য যেমন প্রয়োজন, আওয়ামী লীগের জন্যও প্রয়োজন। কারণ, অন্যের ওপর ভর করে ক্ষমতায় এলে দাম থাকে না। ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ, আর ২০০৮ থেকে ২০১৮ সালের আওয়ামী লীগ এক না। ’৯৬–তে আওয়ামী লীগের একজন ইউনিয়নের সভাপতিকেও থানার ওসি সম্মান করত, এখন এমপিরাই বলেন, তাঁদের কথা ওসিরা শোনেন না। শুনবেন কেন, তারাই তো তাকে বিনা ভোটে এমপি বানিয়েছেন।’
এদিকে কল্যাণ পার্টির সভাপতি সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি, দেশের স্বার্থ ও নিরাপত্তার কথা চিন্তায় রেখে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। আর এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন ২০২৩–এ আরেকটি গণ-অভ্যুত্থান।
খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, দলীয় সরকার নয়, নির্বাচনকালীন একটি সরকার হতে হবে, বর্তমান সংসদ ভেঙে দিতে হবে। কারণ, পৃথিবীর কোথাও সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হয় না।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবদুল লতিফ মাসুম বলেন, নানামুখী চাপে সরকার এখন প্রান্তিক অবস্থানে আছে। ইসলামী আন্দোলন সরকার হটানোর যে ডাক দিয়েছে, এটা হচ্ছে শেষ পেরেক।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনে প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ, আশরাফ আলী আকন, মহাসচিব ইউনুছ আহমাদ, ইনসাফ কায়েম কমিটির শওকত মাহমুদ, জামায়াতে ইসলামের প্রতিনিধি খলিলুর রহমান মাদানী, জাতীয় পার্টির রওশনপন্থী নেতা গোলাম মসীহ, ফরায়েজি আন্দোলনের আবুল হাসান প্রমুখ।