হাবিবুর রহমান: তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট কলারোয়ায় হামলার ঘটনায় আদলতে একটি পিটিশন মামলা হয় । ওই মামলা পরে থানা পুলিশ রের্কড করে। তদন্তের সময় মামলাটি তিনটি ধারায় বিভক্ত হয়ে তিনটি পৃথক মামলায় রুপ নেয় । ঘটনার দিনে আমি পেশাগত দ্বায়িক্ত পালনের জন্য কলারোয়া উপজেলা সদরে পৌঁছাই। ওই সময় আমি যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক রানার এবং ঢাকার আজকের কাগজে কাজ করতাম। ঘটনার দিনে তৎকালীন যুবদলের সাধারন সম্পাদক আব্দুল কাদের বাচ্চু আমার ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় তৎকালীন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি সুভাষ চৌধুরী কলারোয়া থানায় একটি সাধারন ডয়েরি করেন। ওই সাধারন ডায়েরি পরে মামলায় রুপান্তর করা হয়। মামলাটি তদন্ত করেন তৎকালীন কলারোয়া থানার এস. আই হুমায়ন কবির । ওই মামলায় ভিকটিম ছিলাম আমি ।ভিকটিম থাকার পরও ওই মামলায় আমি সাক্ষ্য প্রদান করিনি। সাক্ষ্য না দেওয়ার কারন ছিল আমি পেশাদার একজন সংবাদকর্মী হিসাবে একটি রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের সাথে বিবাদে জড়াতে চাইনি । ওই সময় আমি সাক্ষ্য না দিলেও পরবতীর্তে যখন শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার বিচার শুরু হয়, তখন ১/২/২০২০ ইং তারিখে ( মামলা নং- জি আর ১৫১/২০১৫, জি আর ২৫৯/২০১০ কলারোয়া)আমাকে আদালতে সাক্ষ্য প্রদানে বাধ্য করানো হয়। এই সাক্ষ্য প্রদানের পূর্বে ঢাকা হাইকোটের অতিরিক্ত অ্যাটনি জেনারেল শেখ মুনীর সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে আমাকে চায়ের দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যান।
শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় আমি দল নিরোপেক্ষ সাক্ষী উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার চায় আমি যেন ,অরাজনৈতিক ব্যাক্তি হিসাবে নিরপেক্ষ সাক্ষী দেই। প্রতি উত্তরে আমি বলি মামলার তদন্তের সময় পুলিশ আমাকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করেনি ,আমি কিভাবে সাক্ষী হলাম ? আমিতো সাক্ষী দিবনা । কারন আমি তো পেশাদার সম্পাদক। আমি একটি দৈনিক পত্রিকার মালিক ও বটে। । একটি বড় রাজনৈতিক মামলায় সাক্ষী দিলে আমি পেশাগত ভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হবো। এ সময় তার পাশে থাকা একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা আমাকে আদালতে হাজির হয়ে সাক্ষী দেওয়ার জন্য পিড়াপিড়ি করেন। ওই দিন আমি ভেবে দেখি বলে সার্কিট হাউজ ত্যাগ করি । কয়েকদিন পর আমার অফিসে ওই একই গোয়েন্দা সংস্থার দুজন কর্মকর্তা এসে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলায় সাক্ষী দেওয়ার বিষয়ে আমার সিদ্ধান্ত জানতে চান। বিষয়টি আমি আবারো তাদেরকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি। কিন্তু তারা নাছোড়বান্ধা হয়ে বলেন, আমাকে সাক্ষী না দিলে এমপি হাবিবকে আটকানো যাবেনা। এর ২/৩দিন পর ওই গোয়েন্দা সংস্থাটির কয়েকজন সদস্য আমার অফিসে এসে বলেন, স্যার আপনাকে চায়ের দাওয়াত দিয়েছেন আমাদের অফিসে। তাদের কঠোর মনোভাব দেখে আমি তাদের অফিসে যাই । সেখান গেলে আমাকে একজন অচেনা অফিসারকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। ওই কর্মকর্তা শুরুতে ক্রোধের শুরে কথা বলা শুরু করেন। আমার পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় পড়াশুনা করে ,চাকুরি করেন সবকিছুই বলা শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে বলেন , পিপি যেভাবে বলবে সেইভাবে দুটি মামলায় সাক্ষী দিবেন আদালতে, না হলে আপনার ছেলে নেই হয়ে যাবে। এ রকম হুমকি পেয়ে আমি দিশেহারা হয়ে যাই। এরপর হুমকির মুখে পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে তাদের কথা মত চিফ- জুডিশিয়াল ও অতিরিক্ত জজ-২ আদালতে পৃথক দুটি মামলায় তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘ জবানবন্ধি দেই -যা ছিল আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের চাহিদা মোতাবেক।
লেখক: সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সাতনদী।