পাটকেলঘাটা অঞ্চলে চলছে নিরব চাাঁদাবাজি-রুখবে কে?
নিজস্ব প্রতিবেদক:
তুমি কোন দল করো? ১৫ বছর আওয়ামী লীগের নেতারা লুটেপুটে খেয়েছে । এখন আওয়ামী লীগারদের কোন মামলা নেওয়া হবে না, বেরিয়ে যাও। ¯œাতকোত্তর পরিবহন শ্রমিক ইলিয়াস হোসেনকে উদ্দেশ্য করে এ সব কথা বলেছেন অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান। ঘটনাটি সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা থানার।
ছাত্রদল নেতাদের চাঁদাবাজির শিকার হয়ে পাটকলেঘাটা থানার নোয়াকাটি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের পুত্র ইলিয়াস হোসেন লিখিত এজাহার নিয়ে পাটকেলঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমানের দপ্তরে গেলে মামলা রেকর্ড না করে উল্টো থানা থেকে তাকে তাড়িয়ে দেন।
ইলিয়াস হোসেন সাতনদীকে জানান, সাতক্ষীরা সিটি কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে অনার্স সহ মাস্টার্স কমপ্লিট করে এখন তিনি হামদান পরিবহনে সুপারভাইজার হিসাবে কর্মরত। গত ২ অক্টোবর ডিউটি থেকে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। পাটকেলঘাটা নেমে একটি ভ্যানযোগে নিজ গ্রাম নোয়াকাটির উদ্দেশ্যে রওনা হন সিরাজুল ইসলাম। তার ইচ্ছা ছিল কুমিরা বাজার থেকে সবজি কিনে বাড়ি ফিরবেন।
পথিমধ্যে চিহ্নিত চাঁদাবাজ চক্র ছাত্রদলের ক্যাডার বাহিনী কুমিরা প্রাইমারী স্কুলের সামনে থেকে ইলয়াস হোসেনের গতিরোধ করে। জামার কলার ধরে টেনে হিচড়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কুমিরা প্রাইমারি স্কুলের পিছনে। অনেকটা লোক চক্ষুর আড়ালে। এরপর দেশীয় ছোরা ধরে জিম্মি করা হয় ইলিয়াস হোসেনকে, দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। তাকে বলা হয় দুই লক্ষ টাকা দিবি। তাকে এও বলা হয় তোর ব্যাংকে টাকা আছে। বাড়ি থেকে চেকের বই নিয়ে আয়। জবাবে ইলিয়াস হোসেন তথ্য গোপন করে বলেন, তার কোন ব্যাংক একাউন্ট নেই। কিন্তু নাছোড়বান্দা চাঁদাবাজরা বলে তোর ব্যাংক একাউন্ট আছে। তোর মাকে ফোন কর। চেকবই নিয়ে আসুক।
এরপর অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ইলিয়াস এর কাছ থেকে তার মা নুরনাহার এর মোবাইল নং (০১৭১৬৮৬৫৩৮৫) নেওয়ার পরে আবির তার নিজ মোবাইল নম্বর (০১৭৫০১৫৪৫২৪) থেকে নুরনাহারকে ফোন দেয়। ওই ফোন ধরিয়া দেওয়া হয় ইলিয়াস হোসেনকে। বাধ্য হয়ে ইলিয়াস হোসেন মা নুরনাহারকে শোকেচের মধ্যে থাকা চেকের বই দিতে বলেন। চাঁদাবাজরা নুরনাহরের বাড়ি থেকে ৪ টি চেকের পাতা ছিড়ে আনেন।
এরপর ছোরার মুখে জিম্মি করে বøাঙ্ক চেকের ৪ টি পাতায় ইলিয়াস হোসেনএর স্বাক্ষর নেওয়া হয়। বলা হয়, ৪ দফায় ২ লক্ষ টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে ১০ অক্টোবর ৩০ হাজার পরবর্তীতে ১০ দিন পর ৪০ হাজার এভাবে দুই লক্ষ টাকা পরিশোধ করার জন্য সময় বেধে দেওয়া হয়। এছাড়াও ইলিয়াস হোসেনের নিকট থেকে ছিনিয়ে নেয় নগদ ১০ হাজার ২০০ টাকা ও ১৬ হাজার ৯০০ টাকা মূল্যের রিয়েলমি এনড্রয়েড ফোন। চেকের পাতা দিয়ে মুক্ত হন ইলিয়াস হোসেন।
বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী ও তার বাবা-মায়ের সাথে পরামর্শ করলে তারা থানায় অভিযোগ দিতে বলে। পরের দিন তার ডিউটি থাকায় কিছু দিন দেরি করে এজাহার নিয়ে গত ১০ অক্টোবর থানায় যান ইলিয়াস হোসেন।
চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের পরিচয়: পাটকেলঘাটা থানার মাহমুদপুর গ্রামের বাবর আলীর পুত্র শেখ রিজভী আহমেদ (থানা ছাত্রদলের সভাপতি সম্প্রতি বহিস্কৃত), একই উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মৃত জাহিদুল মেম্বরের পুত্র আবির হোসেন (থানা ছাত্রদলের সদস্য সচিব), আল আমিন হোসেন শিমুল (সরুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি), বড় কাশিপুর গ্রামের শেখ শাহাজান আলীর পুত্র শেখ নাজমুল হোসেন, দাইপাড়া গ্রামের আব্দুল মাজেদের পুত্র মিরাজ (পাটকেলঘাটা হারুন অর রশিদ ডিগ্রি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব)। এই ৫ জন সকলেই ছাত্রদলের নেতা। তারা ইলিয়াস হোসেনকে জিম্মি করে। ৫ জনকে চিনতে পারলেও অন্যদের ইলিয়াস হোসেন চিনতে পারেন নি।
যেভাবে জিম্মি করে চেকের পাতায় ইলিয়াস হোসেনের স্বাক্ষর নেওয়া হয়: আবির হোসেন ইলিয়াস হোসেনকে বলে মাকে ফোন দিয়ে চেকবই আন। বুকে ছুরা ধরে মৃত্যুর হুমকি দেয় নাজমুল। নাজমুল হুমকী দিয়ে বলে, সে ১৩ জন ওসির বডি গার্ডের দায়িত্ব পালন করেছে। তার কাছে আছে অস্ত্র। তারা ইলিয়াস হোসেন এর একটি ভিডিও বক্তব্য দিতে বাধ্য করে। তারা তাদের ফোনে এটি রেকর্ড করে নেয়। ভিডিও রেকর্ড করে নাজমুল। পিছনে দাড়ানো ছিল আবির ও শিমুল। ভিডিও বার্তায় কি বলতে হবে তা শিখিয়ে দেয় আবির ও শিমুল। এরপর প্রায় সন্ধ্যার সময় ইলিয়াস হোসেনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখন সময় ছিল ৫ টা ৪৫ মিনিট।
এ ঘটনার পূর্বে ইলিয়াস হোসেনের ০১৭২৯-৩৬৫৩২৩ নম্বরে আবির ০১৭৫০১৫৪৫২৪ নম্বর থেকে ও রিজভী ০১৭১৬৭৩১২৩০ নম্বর থেকে চাঁদা চেয়ে ফোন দিয়েছে বারংবার।
ছাত্রদল ক্যাডারদের চাঁদাবাজি: ইলিয়াস হোসেনকে জিম্মি করেই তার কাছে থাকা নগদ ১০ হাজার ২০০ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। দুই লক্ষ টাকা পর্যায়ক্রমে দেওয়ার জন্য ৪ টি বøাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। অভিযুক্ত ৫ জনই ছাত্রদলের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পদধারী নেতা। ইতিমধ্যে কুকর্মের জন্য কেউ কেউ বহিস্কারও করেছেন।
ওসি হাফিজুর রহমানের কর্মকান্ড ভাবিয়ে তুলেছে সাধারণ মানুষকে: নিজেকে ছাত্রদলের নেতাও পরিচয় দেন ওসি হাফিজুর রহমান। সাতনদীকে তিনি শুক্রবার দুপুর ১২ টায় জানিয়েছেন, “ইলিয়াস হোসেন এর অভিযোগ সঠিক নয়। চাঁদাবাজির ঘটনাও সঠিক নয়। ইলিয়াস হোসেন ছাত্রদলের নেতাদের নিকট থেকে চাকুরি দেয়ার নামে ৪০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। কয়েক ঘন্টা পর ফোন ভ্যাক করে তিনি বলেন, ইলিয়াস হোসেন এখন ঢাকাতে আছে। ফিরলে দু পক্ষকে নিয়ে বসবো।
ছাত্রদল নেতাদের বক্তব্য: ছাত্রদল নেতা আবির হোসেন দাবি করেন, তিনি বহিস্কার হন নি। স্বপদে বহাল আছেন। তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে বলেন আমি এখন এমপি হাবিবের গাড়ি বহরে আছি। (৯:৪৫ মিনিট)। তিনি এখন আমার এলাকায়। তিনি দাবি করেন, ইলিয়াস হোসেনের অভিযোগ মিথ্যা। তার কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেই নাই। চেকের ৪ টি বøাঙ্ক পাতায় ইলিয়াস হোসেন স্বেচ্ছায় স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। তিনি এও দাবি করেন, তার মামা আবদুস সালামের নিকট থেকে চাকরি দেওয়ার নামে দেড় মাস আগে ৪০ হাজার টাকা নেয়। সেই টাকা আদায়ের জন্য চেক নেওয়া হয়েছে।