
আহাদুর রহমান (জনি): চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৪) প্রকল্পে ব্যাপক টেন্ডারবাজির অভিযোগ উঠেছে তালা উপজেলা এলজিইডি এর উপজেলা প্রকৌশলী রথীন্দ্র নাথ হালদার এর বিরুদ্ধে। যার ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। উপজেলা প্রকৌশলীর মদদদাতা হলেন জেলা অফিসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। এসব লুটপাটের টাকার একটি পার্সেন্ট তার পকেটেও যায় বলে অভিযোগ আছে। আরও অভিযোগ আছে এই প্রকল্পের মোট অংকের প্যাকেজের সর্বনি¤œ দরদাতাকে টেন্ডার না দিয়ে কৌশলে নামমাত্র চুক্তিদর দেখিয়ে কিছু টেন্ডার বিক্রি করেছেন তিনি। এছাড়াও তার পূর্বসুরি প্রকৌশলীর একই পন্থায় বিক্রি করা টেন্ডারগুলো তদন্ত পূর্বক বাতিল না করে চলমান রেখেছেন। যার কিছু কিছু সমাপ্তও হয়েছে। সাতনদীর অনুসন্ধানে ইতোমধ্যে ‘সাতক্ষীরা এলজিইডি’র হরিলুট-পর্ব ১’ শীর্ষক একটি পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। আজ থাকছে তার দ্বিতীয় পর্ব।
সাতনদীর অনুসন্ধানে জানা যায়, তালা উপজেলা এলজিইডি’র অধীনে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে একই বছরের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৭টি স্কুলের অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ নির্মানের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। ১৪ অক্টোবর’২০ থেকে টেন্ডারগুলোর কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার এ স্কুলগুলোর ঠিকাদাররা হলো
১) সারসা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স রৌশণী এন্টারপ্রাইজ। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ১,০৭,৭৮,৯৮৬টাকা, চুক্তিমূল্য ১,০৭,৪৫,২৩০টাকা, (চুক্তি দর) ০.৩১৪%।
২) ঝড়গাছা দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স রৌশণী এন্টারপ্রাইজ। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ১,০২,০৬,৫৬০টাকা, চুক্তিমূল্য ১,০১,৮৫,০০০টাকা, (চুক্তি দর) ০.২১০%।
৩) ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স এম এম ব্রাদার্স । যার প্রাক্কলিতক মূল্য ৮৬,৮১,৬১৬টাকা, চুক্তিমূল্য ৮৬,৭০,০০০টাকা, (চুক্তি দর) ০.১৩৪% ।
৪) ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স এম এম ব্রাদার্স । যার প্রাক্কলিতক মূল্য ৭৯,৫৯,০১০টাকা, চুক্তিমূল্য ৬৪,৫৬,৬৪৯টাকা, (চুক্তি দর) ১৮.৮৭৭%।
৫) কায়েমখোলা রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স বসু ট্রেডার্স। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ১,১২,৩৮,৪১৯টাকা, চুক্তিমূল্য ১,১২,১৯,৩৮২.৫১৮ টাকা, (চুক্তি দর) ০.১৭০%।
৬) রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স বসু ট্রেডার্স। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ১,০৫,৫৪,৪৭৯টাকা, চুক্তিমূল্য ৮৯,১৫,২৭৩.৩২৯ টাকা, (চুক্তি দর)১৫.৫৩১%।
৭) সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স রফিকুল ইসলাম (জেডি)। যার চুক্তিমূল্য ১,৪৭,৭০,০০০.৪৫১ টাকা, (চুক্তি দর)০.০৫০%।
৮) পাঁচপাড়া পূর্ব সরকারি প্রাথমিক সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স রৌশণী এন্টারপ্রাইজ। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ৭৯,৩৬,৫২৯টাকা, চুক্তিমূল্য ৬৭,৭২,৯৩২,৮১৩টাকা, (চুক্তি দর) ১৪.৬৬২%।
৯) কানাইদিয়া রথখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স বসু ট্রেডার্স। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ১,১১,৩৬,৭১৩টাকা, চুক্তিমূল্য ১,১১,১৯,৫৩৪.৪৭৭ টাকা, (চুক্তি দর) ০.১৫৫%।
১০) কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মোঃ আবদুল হাকিম। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ১,৩০,১৫,২০০টাকা, চুক্তিমূল্য ১,২৯,৯৮,৪৩৬ টাকা, (চুক্তি দর) ০.১২৯%।
১১) খলিশখালী যদুনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মোঃ আবদুল হাকিম। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ১,০৬,৯৬,৬৪৮টাকা, চুক্তিমূল্য ১,০৬,৭৮,৭৬৩.০৩৪ টাকা, (চুক্তি দর) ০.১৬৮%।
১২) ধূলন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মোঃ রফিকুল ইসলাম। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ৮১,৭৯,০০৭টাকা, চুক্তিমূল্য৮১,৭৫,২৯৪.৫১২ টাকা, (চুক্তি দর) ০.০৪৬%।
১৩) বালিয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স এম এম ব্রাদার্স । যার প্রাক্কলিতক মূল্য ৮৭,০৫,৬২৮টাকা, চুক্তিমূল্য ৬৯,৭৯,০৯৫.৮৬৭টাকা, (চুক্তি দর) ১৯.৮৩৩%।
১৪) চাঁদকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মোঃ রফিকুল ইসলাম। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ৮৮,৫৮,৬১৩টাকা, চুক্তিমূল্য ৭১,৯০,৫৫৪.০১৫টাকা, (চুক্তি দর) ১৮.৮৩%।
১৫) হাজরাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মোঃ রফিকুল ইসলাম। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ৯০,২১,৩৫৪টাকা, চুক্তিমূল্য ৭২,০০,০০০.৮০৭টাকা, (চুক্তি দর) ২০.১৯০%।
১৬)আলাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স এম এম ব্রাদার্স । যার প্রাক্কলিতক মূল্য ১,২৬,০৬,৩৬৭টাকা, চুক্তিমূল্য ১,০৬,৮৮,৫৬১.৫৭৩টাকা, (চুক্তি দর) ১৫.২১৩%।
১৭) নগরঘাটা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মানের কাজ পায় মেসার্স রৌশণী এন্টারপ্রাইজ। যার প্রাক্কলিতক মূল্য ৯৪,৫৯,৫১১টাকা, চুক্তিমূল্য ৮৯,২০,০০০টাকা, (চুক্তি দর) ৫.৭০৪%।
এগুলোর মধ্যে মেসার্স রৌশণী এন্টার প্রাইজ কাজ পায় ৪টি, মেসার্স এম এম ব্রাদার্স কাজ পায় ৪টি, মেসার্স বসু ট্রেডার্স কাজ পায় ৩টি, মেসার্স রফিকুল ইসলাম (জেডি) কাজ পায় ১টি, মোঃ আব্দুল হাকিম কাজ পায় ২টি, রফিকুল ইসলাম(কালিগঞ্জ) কাজ পায় ১টি, মোঃ রফিকুল ইসলাম (কলারোয়া) কাজ পায় ২টি করে। উপরোক্ত পরিসংখ্যানগুলো দেখলেই প্রশ্ন ওঠে সাতক্ষীরার প্রায় দু’শ ঠিকাদারের মধ্যে নাম মাত্র কয়েকজনই কি কাজগুলোর বিজ্ঞপ্তির সন্ধান পেয়ে টেন্ডার জমা দিয়েছেন। যেখান ১৮ থেকে ২০ % চুক্তিদরে কাজ হয় সেখানে দ্বিগুন প্যাকেজের কোটি টাকার কাজ গুলো মাত্র কয়েক হাজার টাকা কমেই মিলে গেল? এসব উত্তর অন্য কোন পর্বে পেতে চোখ রাখুন সাতনদীতে।