সরকারের আর্থিক ক্ষতি প্রায় দুই কোটি টাকা
১৭টি স্কুলের টেন্ডার নির্বাহী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকৌশলীর মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা
আহাদুর রহমান (জনি): চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৪) প্রকল্পে ব্যাপক টেন্ডারবাজির অভিযোগ উঠেছে তালা উপজেলা এলজিইডি এর উপজেলা প্রকৌশলী রথীন্দ্র নাথ হালদার এর বিরুদ্ধে। যার ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় দুই কোটি টাকা। উপজেলা প্রকৌশলীর মদদদাতা হলেন জেলা অফিসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা। এসব লুটপাটের টাকার একটি পার্সেন্ট তার পকেটেও যায় বলে অীভযোগ আছে। আরও অভিযোগ আছে এই প্রকল্পের মোট অংকের প্যাকেজের সর্বনিম্ন দরদাতাকে টেন্ডার না দিয়ে কৌশলে নামমাত্র চুক্তিদর দেখিয়ে কিছু টেন্ডার বিক্রি করেছেন তিনি। এছাড়াও তার পূর্বসুরি প্রকৌশলীর একই পন্থায় বিক্রি করা টেন্ডারগুলো তদন্ত পূর্বক বাতিল না করে চলমান রেখেছেন। যার কিছু কিছু সমাপ্তও হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তালা উপজেলা এলজিইডি’র অধীনে ২০২০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে একই বছরের ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ১৭টি স্কুলের অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ নির্মানের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়। ১৪ অক্টোবর’২০ থেকে টেন্ডারগুলোর কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার এ স্কুলগুলো হলো ১) সারসা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ২) ঝড়গাছা দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৩) ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৪) ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৫) কায়েমখোলা রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৬) রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৭) সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৮) পাঁচপাড়া পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ৯) কানাইদিয়া রথখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১০) কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১১) খলিশখালী যদুনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১২) ধূলন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১৩) বালিয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১৪) চাঁদকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১৫) হাজরাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১৬)আলাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়; ১৭) নগরঘাটা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়গুলোর অতিরিক্ত শ্রেণী কক্ষ নির্মাণের জন্য ঘোষিত টেন্ডারের নাম মাত্র সর্বনিম্ন মূল্যে দেওয়া হয়। অন্যান্য ঠিকাদার আর কম চুক্তিদরে এসব টেন্ডারে অংশ গ্রহণ করলেও অজ্ঞাত কারণে টেন্ডার পায় নাম মাত্র সর্বনিম্ন মূল্য উল্লেখ করা ঠিকাদাররা।
কিভাবে হলো টেন্ডারবাজি-
চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী (পিইডিপি-৪) প্রকল্পের এসব টেন্ডারে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে বড় প্যাকেজের টেন্ডারগুলো পছন্দের ঠিকাদারদের কাছে বিক্রী করে দেন উপজেলা প্রকৌশলী। এক্ষেত্রে টেন্ডারগুলোর চুক্তিদর কম দেখিয়ে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। যা নিচের চুক্তিদর গুলো দেখলেই বুঝা যাবে।
১) সারসা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ০.৩১৪%; ২) ঝড়গাছা দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ০.২১০%; ৩) ঘোনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ০.১৩৪%; ৪) ফুলবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ১৮.৮৭৭%; ৫) কায়েমখোলা রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ০.১৭০%; ৬) রাঢ়ীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ১৫.৫৩১%; ৭) সৈয়দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ০.০৫০%; ৮) পাঁচপাড়া পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ১৬.৬৬২%; ৯) কানাইদিয়া রথখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ০.১৫৫%; ১০) কৃষ্ণনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ০.১২৯%; ১১) খলিশখালী যদুনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ০.১৬৮%; ১২) ধূলন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ০.০৪৬%; ১৩) বালিয়াদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ১৯.৮৩৩%; ১৪) চাঁদকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ১৮.৮৩%; ১৫) হাজরাকাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ২০.১৯০%; ১৬) আলাদিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ১৫.২১৩%; ১৭) নগরঘাটা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সর্বনিম্ন টেন্ডার দেখানো হয়েছে (চুক্তি দর) ৫.৭০৪%।
কারা কারা জড়িত-
একাধীক ঠিকাদার ও এ খাতে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এসব কাজের মূল হোতা জেলা অফিসের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী। তার সাথে জড়িত ছিলেন তৎকালীন তালা উপজেলা কার্যালয়ের সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম। এসব কাজের মধ্যে ১-১২নং স্কুল গুলোর অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ নির্মাণের কার্যাদেশ প্রদান করেন তৎকালী উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মজিদ মোল্লা। প্রায় দুই কোটি টাকার দুর্নীতি করে । যার ভাগ পেয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলী রথীন্দ্র নাথ হালদার। উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল মজিদ মোল্লা চলতি বছরের ১৪ই জানুয়ারী অবসর গ্রহণ করেন তারপর থেকে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বর্তমান উপজেলা প্রকৌশলী রথীন্দ্র নাথ হালদার। কিন্তু এতসব অনিয়ম দেখেও তিনি কোনরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। বরং ভাগ পেয়ে পূর্বসুরির অনিয়ম বহাল রেখে উক্ত কাজগুলো নির্বিঘ্নে চলমান রেখেছেন। আবদুল মজিদ মোল্লার সময় যে সকল টেন্ডারের কার্যাদেশ দেয়া হয়নি সেগুলোরও কার্যাদেশ দিয়েছেন রথীন্দ্র নাথ হালদার। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, এসব টেন্ডারগুলোর কাজ বহাল রাখতে তিনি মোটা অংকের উৎকোচও গ্রহণ করেছেন। তবে বর্তমানে ইস্যুকৃত টেন্ডারগুলোয় উপজেলা প্রকৌশলীকে টেন্ডারমূল্যের ১-২% অর্থ না দিলে কার্যাদেশ দেননা বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ঠিকাদার।
এসব অভিযোগ নিয়ে তালা উপজেলা প্রকৌশলী রথীন্দ্র নাথ হালদার এর মোবাইলে যোগাযোগ করলে ‘আপনি অফিস টাইমে ফোন দেন’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।