
আকবর হোসেন,তালা:
সাতক্ষীরার তালায় টাকার বিনিময়ে মেডিকেল অফিসার এবং সমাজসেবা অফিসারের স্বাক্ষর নকল করে প্রতিবন্ধি কার্ড তৈরীর জন্য সমাজসেবা অফিসে ফরম জমা করেছে একটি চক্র। তবে এর নেপথ্যে তালা দোহার গ্রামের গফ্ফার শেখ এর স্ত্রী ফিরোজা বেগমের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
সরজমিনে সমাজসেবা অফিসে গিয়ে দেখা যায়, এক ব্যক্তি প্রতিবন্ধি কার্ড নেয়ার জন্য বাহিরে দাড়িয়ে আছে। দাড়ানোর কথা জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আমার প্রতিবীন্ধ ফরম জমা করা হয়েছে কয়েকদিন হলো। এখনও পাইনি, বিষয়টি উপজেলা সমাজসেবা অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, তাদের ফরমে স্বাক্ষর জাল করার জন্য কার্ড করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরও বলেন আমার স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে। ডাক্তারের স্বাক্ষর জাল কিনা সেজন্য সমাজসেবা সুপারভাইজার এনামুল ইসলামকে সাথে নিয়ে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার অতনু কুমার ঘোষ এর নিকট গেলে, তিনি ১২টি ফরমে তার স্বাক্ষর নকল করা হয়েছে বলে জানান।
যাদের ফরম গুলোতে স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে তা হলো, তালা জালালপুর ইউনিয়নের গৌতমকাটি গ্রামের আতিয়ার রহমানের স্ত্রী ফুলঝুড়ি বেগম(৫৭), শ্রীমন্তকাটি গ্রামের লুৎফর রহমানের পুত্র মোঃ ইয়াছিন মোড়ল(১৭), জেঠুয়া গ্রামের সুশিল চক্রবর্তিও পুত্র বিকাশ চক্রবর্তি(৩৮), জেঠুয়া গ্রামের রামকান্ত অধিকারীর পুত্র গোকুল অধিকারী(৬১), আটুলিয়া গ্রামের সালাম মোড়লের স্ত্রী তাসলিমা বেগম(৪০), জেঠুয়া গ্রামের বিশ^জিৎ হালদারের পুত্র শান্ত হালদার(১৮), আটঘরা গ্রামের ভুট্্র মোড়লের স্ত্রী মর্জিনা বিবি(৩৮), জেঠুয়া গ্রামের পবিত্র কুমারের স্ত্রী ভারতি রানী(৪৭), একই গ্রামের শংকর বিশ^াসের পুত্র গোপাল বিশ^াস(২৪), সাধন কুমার ঘোষ এর পুত্র অর্পন ঘোষ(৮), দোহার গ্রামের শহর আলীর পুত্র ুসবুজ সরদার (২১) এবং ফয়েজ উদ্দিন এর পুত্র এনায়েত আলীর বিশ^াস।
এছাড়া আরও কোন ফরম চোখের আড়ালে হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। তবে এর নেপথ্যে তালা দোহার গ্রামের গফ্ফার শেখ এর স্ত্রী ফিরোজা বেগমের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে। তিনি আগামী নির্বাচনে ঐ এলাকার মহিলা মেম্বর প্রাী বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফিরোজা বেগমের কাছে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, শ্রীমন্তকাটি গ্রামের লুৎফর রহমানের নিকট হতে চা পান খাওয়ার জন্য ৫ শত টাকা নিয়েছেন। ডাক্তার ও সমাজসেবা অফিসারের সই জাল করে কেন ফরম জমা দিয়েছেন এ বিষয়ে তিনি জানান, আমি কোন সই জাল করিনি। আগামীকাল অফিসে এসে সব জানাবো।
এ বিষয়ে শ্রীমন্তকাটি গ্রামের লুৎফর রহমান বলেন, ফিরোজা বেগমকে আমি নিজেই চা পান খাওয়ার জন্য ৫শত টাকা দিয়েছিলাম।
এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিসার শেখ আব্দুল আওয়াল জানান, ফরমে আমার নিজের স্বাক্ষরের কোন অপশন না থাকলেও স্বচ্ছ, নির্ভ‚ল ও যাচাই বাছাই করার জন্য এবং প্রকৃত প্রতিবন্ধিদের সনাক্ত করার জন্য নিজের একটি সীল ব্যবহার করেছি। এর পরেও ১২টি প্রতিবন্ধি ফরমে আমার স্বাক্ষর সহ ডাক্তারের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। যেই এর সাথে জড়িত থাক না কেন তাদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে তালা হাপসপাতালের ডাক্তার অতনু ঘোষ জানান, ১২টি ফরমে আমার স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। তাহাছাড়া আমি প্রতিবন্ধি ফরমে স্বাক্ষর করার সময়, প্রত্যেক ব্যক্তিকে ভালোভাবে দেখে তার পরে ফরমে স্বাক্ষর করি। তাছাড়া কে কোন ধরনের প্রতিবন্ধি সেটি ফরমে লিখে দেয়, যা নকল ফরমে নেই।
এ বিষয়ে তালা হাসপাতালের টিএইচএ ডাক্তার রাজিব সরদার জানান, আমি এই সকল ফরম স্বাক্ষর করার জন্য আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার অতনু ঘোষকে দায়িত্ব দিয়েছি। যাতে কোন সমস্যা না হয়। তার পরেও স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।