নিজস্ব প্রতিবেদকঃ চাঁদাবাজি দখল হত্যা হুমকি সহ একাধিক সুস্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি পদ হারিয়েছেন তালা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম। পহেলা সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের দপ্তর সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। পদ হারানোর পর ফের সংগঠন পরিপন্থী কাজের সঙ্গে জড়িয়ে বিতর্কে জড়িয়েছে তিনি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার সু-স্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তালা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলামকে আগামী ০১ অক্টোবর পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের যাবতীয় কর্মকান্ডসহ তার দলীয় পদ স্থগিত করা হলো। তাছাড়া দলের সকল নেতাকর্মীদের তার সঙ্গে কোন প্রকার যোগাযোগ না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ৩০ শে আগস্ট জেলা সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের কাছে রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমি দখলের লিখিত অভিযোগ দেন ছায়রা খাতুন ও তরুন কান্তি চক্রবর্তী । এরআগে, ২২ শে আগস্ট অভিযোগ করেন শপিং ভ্যালী ফুড প্রোডাক্টস কতৃপক্ষ।
এদিকে, পদ স্থগিত হওয়ার পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন রফিকুল ইসলাম। পদ হারানোর পর তিনি একের পর এক সংগঠন পরিপন্থী কাজে জড়ানোর অভিযোগ প্ওায়া গেছে। নানাবিধ বিতর্কিত কাজে জড়িয়ে ফের আলোচনায় এসেছেন তিনি। অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হুমকি সহ সংগঠন পরিপন্থী কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তিনি। সাংগঠনিক নির্দেশনা লঙ্ঘন করে একাধিক রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে নিজেকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক পরিচয়ে উপস্থাপন করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি জোর দখল ও শপিং ভ্যালি ফুড প্রোডাক্টস কারখানাটি দখলে নিয়ে চাঁদা দাবির সুস্পষ্ট অভিযোগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার না করায় যথারীতি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে অন্যায় হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ নেক্কারজনক।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর রাতারাতি বেপরোয়া হয়ে উঠেন সেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম। সেমাই কারখানা, বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট চাঁদা দাবি ও সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল নিয়ে আলোচনায় আসেন সেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিকুল ইসলাম ওরফে দাদু ভাই। সম্প্রতি তালা উপজেলার হরিশচন্দ্রকাটি গ্রামের মৃত গৌরপদ চক্রবর্তীর ছেলে তরুন কান্তি চক্রবর্তী ও মৃত শাহবুদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী সায়রা খাতুনের কয়েকটি জমি দখল করেন রফিকুল ইসলাম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।
তালার হরিচন্দ্রকাটি এলাকার তরুন কান্তি চক্রবর্তী জানান, আমি হিন্দু হলেও বিএনপির সূচনা লগ্ন থেকেই আমি বিএনপির রাজনীতি দলের সঙ্গে জড়িত। আমার জীবদ্দশায় পাঁচ বার শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। রফিকুল ইসলাম আমার প্রায় ১৫ বিঘা সম্পত্তি সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা জোর দখল করেছে। তার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট এতগুলো অভিযোগের ভিত্তিতে দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার না করে নামে মাত্র কয়েক দিনের পদে স্থগিত করা করেছে। এখানে তার অপরাধকে আরো উৎসাহিত করার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
শপিং ভ্যালী ফুড প্রোডাক্টস কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহর হাসান জানান, তালা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম সেমাই কারখানাটি দখলে নিয়ে তালা লাগিয়ে দেয়। এরপর ৪৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল তাকে নামে মাত্র এক মাসের জন্য পদ স্থগিত করেছে। কিন্তু পদ স্থগিত হওয়ার পরে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন। তিনি দলের নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছেন। দখল, চাঁদাবাজি, হত্যা হুমকি সহ একাধিক অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে তার বিরুদ্ধে তারপরেও তাকে নামে মাত্র পদ স্থগিত রাখার বিষয়টি রিতিমত বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে রফিকুল ইসলাম জানান, হিন্দু পরিবারের যে জমি দখলের কথা উঠেছে সেটি মিথ্যা ও বানোয়াট। অপরদিকে তালার শপিং ভ্যালী সেমাই কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে কোম্পানির ম্যানেজার ও নৈশ্য প্রহরীসহ ৫০টি হত্যার হুমকি বিষয়ে বলেন দখল নয় সেখানে আমার সম্পত্তি রয়েছে। তাই আমি বলেছি ৫০টি হত্যা হলেও ওই জমি দখলে নেব। তবে এসময় চাঁদা দাবির বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।এর আগে, সাতক্ষীরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান ভুট্টো বলেন, 'দলের মধ্যে কোনো দখলদার বা চাঁদাবাজের ঠাঁই নেই। অভিযোগ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।