প্রিন্ট এর তারিখঃ জানুয়ারী ১১, ২০২৫, ৯:১০ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ আগস্ট ২৩, ২০২২, ১২:৫৬ অপরাহ্ণ
তালার সন্ত্রাসী মশিয়ার এখন বেপরোয়া
আলোচিত লুৎফর নিকারী হত্যা মামলার প্রধান আসামী সে;
আওয়ামীলীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা তিনি;
বিরোধপূর্ণ জমি দখল দেওয়ার মূলহোতা সে;
শিবির নেতা থেকে হঠাৎ বনে যাওয়া আওয়ামী লীগ নেতার আছে নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী;
আলোচিত লুৎফর নিকারী হত্যা মামলার বাদী ও স্বাক্ষীদের হুমকি প্রদর্শন;
হাবিবুর রহমান: তালায় চাঞ্চল্যকর লুৎফর নিকারী হত্যা মামলার প্রধান আসামী তৎকালীন শিবির নেতা হতে হঠাৎ করে বনে যাওয়া কথিত আওয়ামী লীগ নেতা সরদার মশিয়ায় এখন বিরোধী জমি জবর দখল করা সহ নানান অপকর্ম করে জড়িত হয়ে পড়েছেন। আর তার এই কাজে হাইব্রিড আওয়ামী লীগের পাতিনেতা, চরমপন্থী বাহিনীর সদস্য, সরকারী কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত ভূমিদস্যু,দখলবাজ ও চাঁদাবাজদের কজ¦ায় আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে উপজেলা।
তথ্য মতে প্রকাশ, তালায় আলোচিত তালা মৌজার এসএ ১৪৩ খতিয়ানের সাবেক ২৭৭, হাল দাগ ২০৫১ আরএস খতিয়ান ২০৬৫, ডিপি খতিয়ান ২একর ৯৩.৭৫ শতক এসএ মালিক হাবিল শেখ, কাদের শেখ, আকিমুদ্দিন শেখ, তিনভাইর নামে সমান অংশে রেকর্ড হয়। পারিবারিক আপোষ সুত্রে আলোচিত সম্পত্তি একক ভাবে আকিমুদ্দিন শেখ, পিতা লঙ্কর শেখ, সাং-মোবারকপুর একক ভাবে ভোগদখল করেন। মাঠজরীপের আমিন খতিয়ানের ৯ কলামে অত্র দাগে আবুল কাশেম শেখ পিতা হাবিল শেখ গংদের দখলনাই উল্লেখ করেন। এবং উক্ত জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে কিন্তু তদতসত্বেও নিসত্ববান ব্যক্তির কাছ হতে এই সন্ত্রাসী মশিয়ার ভূয়া ও তঞ্চক দলিল তৈরী করে জমিতে জবর দখল করার চেষ্টা করে আসছেন। তা সাথে সংযুক্ত আছেন আওয়ামী লীগের পাতিনেতা, চরমপন্থী বাহিনীর সদস্য, সরকারী কর্মচারীদের নিয়ে গঠিত তালিকায় রয়েছে তারই আপন বড় ভাই ভূমিদস্যুদের গডফাদার সরদার গোলজার, শফি সরদার, শিমুল, তৎকালীন চরমপন্থী বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড সিরাজুল মোড়ল, উপজেলা সমবায় অফিসের কর্মকর্তা অজয় কুমার ঘোষ, উপজেলা নির্বাহী অফিসের অফিস সহকারী মনিরুজ্জামান মনির সহ আরও অনেকে।
অপর দিকে এই সন্ত্রাসী মশিয়ারের বিষয়ে আরও খোঁজ নিয়ে জানা যায় গত ১৭ আগষ্ট (সোমবার) রাত ১১টার দিকে তালা উপজেলার নলবুনিয়া বিলের সরকারি খালে মাছ ধরার সময় ঘেরে মাছ চুরির অভিযোগ এনে লুৎফর নিকারীর ছেলে সেলিম নিকারীকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন সাবেক শিবির নেতা বর্তমান কথিত বহিস্কৃত আ’লীগ নেতা সরদার মশিয়ার রহমান। সঙ্গে ছিলেন সরদার মশিয়ারের সহযোগী হাজরাকাটি গ্রামের মোসলেম শেখের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী তালা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি তুহিন শেখ ও বারুইহাটি গ্রামের জাবেদ আলী বিশ্বাসের ছেলে রনি বিশ্বাস। তিনজন একত্রে সেলিম নিকারীকে হত্যার চেষ্টা করছে এমন খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সেলিম নিকারীর বাবা লুৎফর নিকারী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে মশিয়ার রহমান তাকে বুকে লাখি মেরে খালে ফেলে দেন। এরপর গ্রামবাসীরা লুৎফর নিকারীকে উদ্ধার করে তালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। এ ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠে গোটা তালা উপজেলা। ঘটনার পর মঙ্গলবার সকালে লাশ নিয়ে তালা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করে হত্যাকারী মশিয়ার রহমানের ফাঁসির দাবিতে থানা ঘেরাও করে গ্রামবাসী।পুলিশ তোপের মুখে মশিয়ার রহমানকে গ্রেফতার করে ও ঘটনায় জড়িত তিনজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করে। মামলা বাদী হন নিহতের ছেলে সেলিম নিকারী। কিন্তু এই মামলাটির প্রধান আসামী সন্ত্রাসী সরদার মশিয়ার তার অন্ধকার পেশীশক্তির বলে ও কালো টাকার বিনিময়ে তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা (তালা থানার সেকেন্ড অফিসার) এসআই প্রীতেশ রায়ের মাধ্যমে এফআই আর এ বর্ণিত সাক্ষীদের জবানবন্দী গ্রহণ না করে বিতর্কিত চার্জশিট প্রেরণ করেন।
প্রকাশ থাকে যে, এই সন্ত্রাসী মশিয়ারের শাস্তির দাবিতে গত ১৯ আগষ্ট সাতক্ষীরা সদরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন সরকারি দলের এসব খুনী ও সহযোগীদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়া হাজার হাজার গ্রামবাসী। ওই দিন রাতেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠণিক সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় সন্ত্রাসী মশিয়ার রহমানকে। মশিয়ার রহমানকে সন্ত্রাসী হিসেবে উল্লেখ করে তালা উপজেলাজুড়ে সন্ত্রাসী বাহিনী গঠণ করে তান্ডব চালানোর বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কার লিপিতেও উল্লেখ করা হয়েছে।
মামলার আদালতের তথ্য মতে, তালা থানা মামলা নাম্বার ১৭ তারিখ ১৮/০৮/২০২০ সালের জি আর ৭৩/২০ নং মামলায় এক তঞ্চকী চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তালা থানার সাবেক সেকেন্ড অফিসার(দায়িত্বপ্রাপ্ত) এসআই প্রীতেশ রায়। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী চুড়ান্ত প্রতিবেদন/অভিযোগ পত্র আদালতে দাখিলের পূর্বে এজাহারে বর্ণিত স্বাক্ষীদের অথাৎ ফৌঃ কাযর্ঃ বিধি ১৬১ ধারার জবানবন্দী গ্রহণ করার সময় অব্যশই সকল স্বাক্ষীদের জবানবন্ধী গ্রহণ পূর্বক অভিযোগ পত্রের সহিত সংযুক্ত বাধ্যতামূলক। কিন্তু এসকল আইনের তোয়াক্কা না করে গত ইং৩১/০৮/২১ তারিখ অভিযোগ পত্র নং ৬৮ আনয়ন করেন। অভিযোগ পত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রীতেশ রায় ৩১/০৮/২১ ইং তারিখের স্বাক্ষরিত ও ১৮/০৮/২০ তারিখের স্বাক্ষীর জবানবন্ধীর নিজ স্বাক্ষরিত ফৌঃ কাযর্ঃ বিধির কপি সংযুক্ত করেন। উল্লেখিত চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার সুরতহাল রিপোর্টে লাথি মেরে লুৎফর নিকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে লিপিবদ্ধ থাকিলেও কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে বিষয়টি চুপিসারে এড়িয়ে গিয়ে সম্পুন্ন তর্কিত একটি তদন্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
এজাহারে বর্ণিত লুৎফর নিকারী হত্যা মামলাটির ৩২৩/৩০৭/৩০২/১১৪ পিসি থাকলেও অভিযোগ পত্রে ৩৪২/৩২৩/৫০৬ ধারা উল্লেখ করেছেন। অভিযোগ পত্রে অত্র মামলার দুই নং আসামী রনি বিশ্বাস এর বিরুদ্ধে পিসি ৩৪২/৩২৩/৫০৬ ও তিন নং আসামী শেখ তুহিন এর বিরুদ্ধে পিসি ৩২৩/৫০৬ ধারার অভিযোগ পৃথক পৃথক ভাবে সত্য প্রতিয়মান হয়েছে মর্মে উল্লেখ করেন। এদিকে ১ নং আসামী সরদার মশিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে পিসি ৩০২/৩০৭/১১৪ ধারার অভিযোগ সত্যতা মেলেনি মর্মে উল্লেখ করেন। এমন শুভংকারের ফাকি মত হাস্যকর বিষয় অভিযোগ পত্রে দাখিলকৃত ১৬১ ধারার জবাবন্দীতে কোন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি। যাহা এজাহার বর্ণিত সাক্ষীদের কাছ জিজ্ঞাসা অন্তে জানিতে পারা যায়। তাই এ সকল তথ্যের উপর ভিত্তি না করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই প্রীতেশ রায় আদালতে যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাহা তার নিজ হস্তে সাজানো বলে প্রতিয়মান হচ্ছে।
কারন তদন্ত প্রতিবেদন ১ নং শুভংকরের ফাঁকি করেছেন মামলার বাদী সেলিম নিকারীর ও ১নং ২নং সাক্ষীর কোন জবাববন্ধী গ্রহণ করা হয়নি। ২ নং ফাঁকি, মামলায় ১৮/০৮/২০ তারিখ আসামীদের কোর্টে প্রেরণের পত্র(ফরোয়াডিং) এ উল্লেখ করেছেন আসামীদের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই প্রীতেশ রিমান্ড আবেদন জন্য আদালতে শুনানী করেননি বা রিমান্ডে এনে আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। ৩ নং ফাঁকি, মামলার সাক্ষী দের কাছ হতে কোন জবানবন্ধী গ্রহণ করা হয়নি। ৪ নং ফাঁকি চার্জশিটে স্বাক্ষী মুছা নিকারী, ইন্নাত আলী নিকারী জবানবন্ধী দেখানো হয়েছে মামলা রেকর্ড হওয়ার দিন অর্থাৎ মামলাটি রেকর্ড হয় ১৮/০৮/২০ ইং আবার মামলার প্রধান সাক্ষীদের জবানবন্ধী দেখানো হয় ১৮/০৮/২০ তারিখ। ৫ নং হলো- চার্জশিটে মামলার সাক্ষী দের যে জবানবন্ধী দেওয়া হয়েছে তাহা সব একই রকম। ৬নং হলো মামলার সাক্ষী মোছা: ছবিরন বেগম(৫২), মো: আসাদ নিকারী(৪৫), শাহিনুর নিকারী(৩২), তারিফ নিকারী (৫৫) স্বাক্ষ্য গ্রহণনের তারিখ ও সময় স্পষ্ট ভালো না লিখে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভুল দেখানো হয়েছে। জবানবন্ধী গুলো নিজ মনগড়া হিসেবে তৈরী করে স্বাক্ষীদের নাম উল্লেখ্য করে একই কথা বা শব্দ সংযোজন বিয়োজন করা হয়েছে। মামলায় ৩০২ ধারা হতে আসামীদের অব্যাহতি প্রার্থনার বিরুদ্ধে মঙ্গলবার নারাজি পিটিশন শুনানী অুনষ্ঠিত হবে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। উক্ত মামলার চার্জশিটে এসআই প্রীতেশ উল্লেখ করেছেন লুৎফর নিকারী স্ট্রোক জনিত কারনে মৃত্যুবরণ করেছেন।তাহার শরীরে আঘাতে কোন চিহ্ন নেই। এসকল কাজ সম্পাদন করতে এসআই প্রীতেশের সহযোগিতা করেছেন ময়না তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বয়ং। পরে নিরুপায় হয়ে আলোচিত লুৎফর নিকারী হত্যা মামলার বাদী সেলিম নিকারী আদালতের মাধ্যমে নারাজি পিটিশন দাখিল করেন।
আদালত দোতরফা শুনানী অন্তে মামলটি সিআইডি তদন্ত করার নির্দেশিকা প্রদান করেন। এ আদেশ দেন বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিজ্ঞ বিচারক মহিদুল হাসান। এসময় বাদী পক্ষের আইনজীবি হিসেবে শুনানী করেন এডভোকেট আশরাফুজ্জামান, এডভোকেট অজয় কুমার, এডভোকেট মেজবাউর রহমান অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন এডভোকেট এম হায়দার আলী।
মামলার বাদী সেলিম নিকারী বলেন, আমার চোখের সামনে পিতাকে হত্যা করেছে সরদার মশিয়ার। কিন্তু আমার পিতার হত্যাকারীর সহিত তদন্তকারী কর্মকর্তার সখ্যতা থাকায় মামলার চার্জশিট অন্য দিকে প্রবাহিত করেছেন। পরে আদালতের মাধ্যমে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়। এখন এই সিআইডি তদন্ত চলামান থাকা অবস্থায় প্রধান আসামী সরদার মশিয়ার ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমি সহ আমার পরিবার এবং মামলার স্বাক্ষীদের জীবন নাশের হুমকি প্রদর্শন করছেন। এখন আমরা ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর কারনে নিরাপত্তাহীনতার মাঝে দিনযাপন করছি। আমি আমার পিতার হত্যাকারী সরদার মশিয়ার সহ সকল আসামীদের আইনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।
আরও তথ্য সূত্রে জানা যায়, এই সন্ত্রাসী সরদার মশিয়ার আওয়ামী লীগ করার আগে শিবির নেতা ছিলেন। এদের পরিবারের সকল সদস্যরা আসলে সুযোগ সন্ধানী হিসেবে পরিচিত। যেদল যখন ক্ষমতায় আসে সেদলের নেতা বনে যান তারা। সরদার মশিয়ার ও তার বাহিনীর আসল কাজ হলো বিতর্কিত জমি জবর দখল করে নেওয়া। আর সাধারণ মানুষদের জিম্মি করে হয়রানী করা।
অপর দিকে, তালার আলোচিত বিরোধ পূর্ণ সম্পর্তি ওয়ারেশ ও দখল মালিক আলাউদ্দীন শেখ জানান, আমার পৈতিক সূত্রে ও দান সূত্রে পাওয়া সম্পর্তি এলারকার সন্ত্রাসী বাহিনী নেতা সরদার মশিয়ার ও তার সাঙ্গ পাঙ্গরা জবর দখল করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা জমি জবর দখল করার যে দলিল দেখাচ্ছেন তা সম্পুর্ণ তঞ্চকী ও ভূয়া। তারা প্রতিনিয়ত আমাকে ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে আসছে। আমরা এই সন্ত্রাসী বাহিনী প্রধান সরদার মশিয়ার, সরদার গোলজার, সিরাজুল মোড়লে, সরকারী কার্মকর্তা অজয় ঘোষ ও মনিরুজ্জামান মনিরের হাত হতে রক্ষা পেতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
Copyright © 2025 দৈনিক সাতনদী. All rights reserved.