শেখ ইমরান হোসেন, তালা থেকে: সাতক্ষীরার তালায় অনেক স্বচ্ছল পরিবার সরকারের দেওয়া ১০ টাকা কেজির চাল পাচ্ছে বলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। আর তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অনেক অস্বচ্ছল ও অসহায় পরিবার। এমন অভিযোগ ইউনিয়নের বাদ পড়া অসহায় পরিবারের।
বুধবার (১২ অক্টোবর) তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে বাদ পড়া সুবিধাভোগীরা আসেন উপজেলাতে। তারা জানান, সরকারের খাদ্য কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি চালের আগের কার্ডধারী ৫০ জনের বেশি সুবিধাভোগীর নাম বাদ দিয়েছেন চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লাল্টু, ০৮ ও ০৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওবায়দুল রহমান মিঠু জোয়ার্দার ও আনিছুর রহমান। এ বিষয়ে দলবদ্ধভাবে অভিযোগ করেছেন সাইদার মোড়ল, গফুর গাজী, খলিফা গাজী,আইজল গাজী, আনোয়ারা বেগম,শেখ আনারুল ইসলাম সহ অনেকে।
ভ্যান চালক আনারুল ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ডের মাধ্যমে চাল কিনে থাকি। এবারে নতুন তালিকা করেছে আমার নাম বাদ দিয়েছে। বলেছে আর চাল দিবে না। কার্ডটাও নিয়ে রেখে দিয়েছে। রোদে পুড়ে ভ্যান চালিয়ে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা পাই। আবার প্রতিদিন ভ্যান চালাতে পারি না। আমাকে যদি বিত্তবান বলে চেয়ারম্যান তাহলে আমার কিছু করার নাই।
দিনমুজুর সাইদার মোড়ল বলেন, আমার ১০টাকা কেজির চালের কার্ডে নাম বাদ দিয়েছে। মেম্বার আমাকে দিয়ে ১০০টাকা নিয়ে সারা দিনের কাজ বাদ দিয়ে অনলাইনে আবেদন করাইছে। আমরা গরীব মানুষ। প্রতিমাসে অন্তত চালে সাশ্রয়ী হতো। এখন আর সেটাও পাবো না। এটা আমাদের প্রতি চেয়ারম্যান ও মেম্বারের জুলুম।
না প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক জানান, আমার ০৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মিঠু জোয়াদ্দার আমার কাছে ৫ হাজার টাকা চাইছে। আমার আগের কার্ডটাও রেখে দিয়ে নাম বাতিল করে দিয়েছে। শুনেছি আমরা আর চাল পাবো না।
চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের এমন কর্মকা-ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সচেতন মহল। নাম না প্রকাশের শর্তে স্থানীয়রা বলেন,সামার্ত অনুযায়ী ১ হাজার, ২ হাজার, ৩ হাজার ৪ ও ৫ হাজার করে টাকা নিয়ে ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড করে দিয়েছে স্থানীয় মেম্বার, চেয়ারম্যান ও তাদের চামচারা। আগে যাদের কার্ড ছিলো তাদের বিত্তবান বলে কার্ড বাতিল করে দিয়েছে। এমনকি নির্বাচনী কর্মীদের তালিকাভুক্ত করেছেন তারা। এ ছাড়াও, দলীয় নেতাকর্মীদের কার্ড করে দিয়েছেন।
খেশরা ইউনিয়নের ০৮ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওবায়দুল রহমান মিঠু জোয়ার্দার জানান, অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে বাদ পড়তে পারে। নতুন করে চালের কার্ড করা হবে। তবে চালের কার্ড করে দেওয়া হবে বলে টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
খেশরা ইউনিয়নের ০৯ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনিছুর রহমান জানান, যাদের কার্ড ছিলো তাদের নাম আমি বাদ দেয়নি তবে অনলাইনের মাধ্যমে বাদ পড়তে পারে।
খেশরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামরুল ইসলাম লাল্টু বলেন, ‘নির্দেশনা মোতাবেক যারা অস্বচ্ছল, যারা ভিজিডি সুবিধা পায় এবং যারা মারা গেছেন তাদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে ভুল করে কিছু বিত্তবান এই তালিকায় আসতে পারে। এটা দ্রুতই সমাধান করা হবে এবং পুরানো কার্ডের তালিকা থেকে যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের সংযুক্ত করা হবে।
এবিষয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত বিশ্বাস জানান, আমরা চাই সরকারের সুবিধায় অস্বচ্ছল ব্যক্তিরা যেন অগ্রাধিকার পান। ভোক্তাদের নতুন তালিকা হালনাগাদের সময় কোনো অস্বচ্ছল ব্যক্তি বাদ পড়ে গেলে বা স্বচ্ছল পরিবারের নাম যোগ হলে তা সংশোধনের সুযোগ রয়েছে।