কিশোর কুমার: সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আতিয়ারের রহমানের বিরুদ্ধে ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০১৬ সালে যোগদানের পর তালার শিক্ষা ব্যবস্থাকে চরম দুর্র্নীতির আখড়াখানায় পরিণত করেছেন। বর্তমানে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগের জন্য দিতে হয় দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা। এমন ও অভিযোগ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির । এছাড়া তার অফিসের পিওন হাসমত আলীকে দিয়ে নিয়মিত ঘুষ গ্রহণ করে বহাল তবিয়তে রয়েছে এই শিক্ষা কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তালা উপজেলা শিক্ষক সমিতির এক নেতা জানান, “২০১৬ সাল থেকে যোগদানের পর চলতি বছরের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত ৮০টির বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ মাদ্রাসায় নিয়োগ অনুষ্ঠিত হয় শিক্ষা অফিসার আতিয়ারের তত্বাবধানে। এসব নিয়োগ বানিজ্যকে কেন্দ্র করে এপর্যন্ত সর্বমোট দেড় থেকে দুই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি । তাছাড়া স্কুল ও মাদ্রাসার শিক্ষকদের স্কেলের গ্রেড পরিবর্তনের জন্য মাথাপিছু ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় তাকে । এছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনের জন্য প্রতিষ্ঠান প্রতি দশ হাজার টাকা ঘুষ নেন এই অসাধু শিক্ষা কর্মকর্তা। কিছুদিন আগে এই ঘুষের টাকায় যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলায় কয়েক একর জমি ক্রয় করেছেন তিনি । এছাড়া বর্তমানে খুলনা শহরে মহাসড়কের পাশে নির্মাধানী রয়েছে বহুতল বিলাস বহুল বাড়ি। এ নিয়ে একাধিক বার পত্র পত্রিকায় সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও অদৃশ্য কারনে তার পার পেয়ে যান তিনি।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি ৮৬০ জন শিক্ষকদের নিয়ে কুমিরা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষক প্রতি ৮০ টাকা খাদ্য বরাদ্ধ থাকলেও মাত্র ২৫ টাকার নাস্তা বরাদ্ধ দিয়ে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা কৌশলে হাতিয়ে নেন দুর্নীতিবাজ অফিসার আতিয়ার ।
ওই শিক্ষক নেতা আরো বলেন, সম্প্রতি চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মির্জাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর ৩ পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি পদে ১ লক্ষ টাকা করে সর্বমোট তিন লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন তিনি ।
সুব্রত দাশ নামে এক শিক্ষক বলেন, গত ৬ জানুয়ারি কুমিরা পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চলাকালীন আইসিটি বিভাগের প্রশিক্ষক রিপন নামের একজনকে কুরআন তেলোয়াত ও পবিত্র গীতাপাঠকে কেন্দ্র করে লাঞ্ছিত করেন। পরে শিক্ষকরা তার অপসারনের দাবীতে বিক্ষোভ শুরু করলে তোপের মুখেপড়ে ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান সেই যাত্রা। পরে বিষয়টি নিয়ে ওই দিন বিভিন্ন সংবাদ পত্রে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এসবের পরেও অদৃশ্য কারনে থেমে যায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন।
এ বিষয়ে তালা উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক সজিব উদ্দৌলা বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার প্রশিক্ষণ চলাকালীন এক শিক্ষকে লাঞ্ছিত করেন। পরে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করা হলে তিনি সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। এরপর বিষয়টি জেলা শিক্ষাকর্মকর্তাদের অবগত করা হলে প্রকাশ্যে ক্ষমা চান এই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। তবে তার ঘুষ বানিজ্যে বিষয়টি তালা ওপেন সিকরেট বলে অকপটে স্বীকার করেন এই শিক্ষক নেতা।
ধানদিয়া বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্য আরিফুল ইসলাম মিলন বলেন, বিদ্যালয়ের অবৈধ ভাবে কমিটি গঠনের জন্য সাতক্ষীরা অতিরিক্ত ম্যাজিট্রেট আদালতে মামলা করেন তিনি। এছাড়া যশোর মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সহ খুলনা বিভাগীয় ডিডি ও সংক্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ ও মামলা বিষয়ে কোন তোয়াক্কা না করেই মোটা অংকের অর্থের বিনিমিয়ে অবৈধভাবে নিয়োগ দেন শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার। নিয়োগের বিষয় নিয়ে তার কাছে বার বার গেলেও তিনি কৌশলে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান ।
অভিযোগ অস্বীকার করে তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ আতিয়ার রহমান বলেন, “প্রশিক্ষণে শিক্ষকদের জন্য নাস্তা বরাদ্ধের জন্য ৮০ টাকা বরাদ্দ ছিল সত্য কিন্তু অফিসের ভ্যাট ও বিভিন্ন খরচের কারনে কেটে নেওয়া হয়েছে কিছু টাকা। এ বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল কিন্তু সেটা মিটেও গেছে। বাড়ি ও জমির বিষয়ে তিনি বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি এলাকায় কিছু পৈত্রিক জমি আছে । তবে খুলনা শহরের কোন নির্মানাধীন বাড়ি নেই। নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে ঘুষ গ্রহনের প্রশ্ন তুললে তিনি কৌশলে এড়িয়ে বলেন নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আমি একা দায়িত্বে নেই আরো লোকজন আছে।
এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার আজিত কুমার সরকার জানান, সম্প্রীতি তালা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে শিক্ষকদের সাথে ঝামেলা হয়েছিল বলে শুনেছি। এছাড়া শিক্ষা কর্মকর্তার নিয়োগ সংক্রান্ত হোক বা তার দুনীতির বিষয়ে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।