
তালা অফিস থেকে নজরুল ইসলাম: তালা উপজেলায় বিরামহীন অতিবৃষ্টিতে খাল-বিলের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা পাটের ক্ষেত, ধানের বীজতলাসহ অন্য ফসল। কর্মহীন হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না হলে এবছর চাষাবাদ করা সম্ভব না হওয়ার আশঙ্কায় কৃষক।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার খেশরা ও তেতুলিয়া ইউনিয়নের শিরাশুনি, লাউতাড়া, সুভাশিনী, মদনপুর, শুকদেবপুর,পাঁটরোখী,দেওয়ানী পাড়া,সুকদেবপুর, নওয়াপাড়া,তালা সদর ইউনিয়নের বারুইহাটিসহ কয়েকটি গ্রাম, ইসলামকাটি ইউনিয়নের সুজনশাহা, ঘোনা,জালালপুর ইউনিয়ন কিছু অংশ ও কেশবপুর উপজেলার হিজলডাঙ্গা, বাউশলা, পশ্চাক্রন, শ্রীফলা, আঠন্ডা,লক্ষীনাথকাটি এলাকায় অতিবৃষ্টির ফলে খাল-বিলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
শিরাশুনি এলাকার মিজানুর রহমান, জিয়াউর রহমান, নওশের আলী, আক্তারুজ্জামান, কুদ্দুস শেখসহ অনেকেই বলেন, গত বছর এই এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। মানুষের ঘর, উঠান, রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত ছিল। ক্ষেতের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। বীজতলা নষ্ট হওয়ায় অধিকাংশ অধিকাংশ কৃষক ধান চাষ করতে পারেনি। এই অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ প্রায় ৬ মাস পানিবন্দি জীবন যাপন করাসহ হাজার হাজার শ্রমজীবী মানুষ বেকার বসে থাকার কারণে মানবেতর জীবনযাপন করেছে।
তারা আরও বলেন, জলাবদ্ধ হলে অনেকে ছুটে আসেন, সমাধানের আশ্বাস দেন তবে পানি নেমে গেলে কেউ মনে রাখে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম পরিকল্পনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ বলে জানান তারা।
তেঁতুলিয়া ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান, মনিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী, আমিনুর রহমান বলেন,এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতার মূল কারণ অপরিকল্পিত মাছের ঘের। ছোট ছোট মাছের ঘেরে পানি সরানোর ব্যবস্থা না থাকা এবং রাস্তার উপর নির্মিত কালভার্টের মুখ আটকিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করা।
তারা আরও বলেন, এলাকার ঘের মালিকরা ছোট-বড় সব কালভার্টের মুখে বালুর বস্তা ও লোহার গ্রিল দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে। সে কারণে বৃষ্টির পানি কোনোভাবেই খালে বা নদীতে নামতে পারছে না। ছোট লাউতাড়া, সুভাষিণী, শিরাশুনি, হিজলডাঙ্গা, নরনিয়া অঞ্চলের কালভার্টের মুখ পরিষ্কার করতে পারলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে বলে জানান তারা।
হেল্প সেচ্ছেসেবী সংগঠনের সভাপতি এস.এম হাসান আলী বাচ্চু,সাধারণ সম্পাদক বিএম বাবলুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে মিলে এলাকার মানুষের কষ্ট লাঘবে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চালিয়েছে। তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা নিরসনে এই অঞ্চলের সব খাল ও কালভার্টের মুখ পরিষ্কার করে পানি সরানোর ব্যবস্থা করেছে। ধান উৎপাদনের জন্য কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে সাংবাদিক সম্মেলন, মানববন্ধন করা, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এলাকা পরিদর্শন ও পরিকল্পনা ছাড়াআর কিছুই করেনি বলে তিনি জানান।
তেঁতুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এম এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার একাংশ ও সাতক্ষীরার তালা উপজেলা একাংশের পানি ভদ্রা নদী দিয়ে প্রবাহিত হয়। আমাদের এই অঞ্চলের পানি চুকনগর অঞ্চলের নরনিয়া খাল দিয়ে ভদ্রা নদীতে পড়ে। ভদ্রা নদীর তলদেশে পলি জমে সমতল থেকে উঁচু হওয়ার কারণে মনিরামপুর ও কশবপুরের পানি উঠানামা করতে পারে না। তালার এই অংশ অপেক্ষাকৃত নীচু হওয়ায় ওই অঞ্চলের পানি এদিকে ঢুকে পড়ে। নরনিয়া খালের প্রায় ১ কিলোমিটার পলি পড়ে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ভদ্রা নদীতে পানি পড়তে পারে না। এই অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হলে ভদ্রা নদী ও নরনিয়া খাল খননের ব্যবস্থা করতে হবে। নরনিয়া ব্লুইস গেট থেকে কাশিমপুর পর্যন্ত আপার ভদ্রানদী খনন করা না হলে গত বছরের তুলনায় এবছর আরও অধিক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপা রাণী সরকার বলেন, তালা উপজেলায় যোগদান করেই জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করে যাচ্ছি। গতকাল সকাল থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলার তেতুলিয়া ইউনিয়নের নওয়াপাড়া থেকে দেওয়ানিপাড়া পর্যন্ত খালের নেটপাটা অপসারণ করিয়েছি। সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ দেয়া হয়েছে সরকারি খালের নেট পাটা ও কালভার্টের মুখ পরিষ্কার করার জন্য।