
শেখ ইমরান,তালা থেকে: চিকিৎসা সেবার নামে যেন এক কসাই খানা। ক্লিনিকটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ উঠলেও কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় দেদারছে চলছে তালা সার্জিক্যাল কিøনিকের রমরমা রিপোর্ট বাণিজ্য।
এরই ধারবাহিকতায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রাজিব সরদারের স্বাক্ষর জাল করে আল্ট্রাসনো রিপোর্ট তৈরী করেছেন কথিত ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলার দক্ষিণ আরশনগর গ্রামের হাচিম আলী জোয়াদ্দারের কন্যা মোছাঃ হালিমা খাতুন(৩৮) ২০২০ সালের ১ মার্চ তালা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে প্রেগনেন্সি প্রোফাইল দেখার জন্য আল্ট্রাসনো করান। উক্ত আল্ট্রাসনো রিপোর্টে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রাজিব সরদার এর স্বাক্ষর দেখানো হয়। অতপর একই দিনে হালিমার গর্ভের সন্তান অবৈধ ভাবে গর্ভপাত করান কথিত ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়।
এই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে হালিমা বেগম বাদী হয়ে সন্তান নষ্টের কারন দেখিয়ে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন তার স্বামী ও দেবর সহ আত্নীয় স্বজনের বিরুদ্ধে। মামলাটি তদন্তের জন্য তালা হাসপাতালের উপর নির্দেশ প্রদান করেন।
যাহার প্রেক্ষিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত রিপোর্টে প্রতিয়মান হয় যে আল্ট্রাসনো রিপোর্টের স্বাক্ষরটি ডা. রাজিব সরদারের নহে। এবং আলাদা একটি পত্রে ডা. রাজিব সরদার আদালতের কাছে জবানবন্দী প্রদান করেন।
তাহাতে উল্লেখ্য করেন, আমি ডা. রাজিব সরদার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, সাতক্ষীরা। গত ইং ১.৩.২০ তারিখে হালিমা খাতুন(৩৮) নামে তালা সার্জিক্যাল ক্লিনিক যে আল্ট্রাসনো রিপোর্ট এ আমার স্বাক্ষর সংবলিত তথ্য দিয়েছেন তাহা আমার করা নহে এবং স্বাক্ষরটি আমার নহে।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, তালা সার্জিক্যাল ক্লিনিক সরকারী নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই অনিয়ম আর দূর্ণীতির মধ্য দিয়ে চলছে । কোন সার্জন তো নেই, নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার, নেই ডিপ্লোমাধারী নার্স, নেই প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ওয়ার্ডবয়। এমনই আজব প্রতারনার ফাঁদ পেতেছে তালার আলোচিত এই ক্লিনিক। অনাড়ী হাতুড়ী ডাক্তারের ভূল চিকিৎসায় প্রসূতি মা সহ একের পর এক রোগীর মৃত্যুতেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। সরকারী নিয়ম অনুযায়ী, উপজেলা পর্যায়ে একটি ক্লিনিকে ৯ টি বেড, ১ জন সার্জন, ১ জন আবাসিক মেডিকেল অফিসার, ১ জন ডিপ্লোমা সহ ৫ জন নার্স, প্রশিক্ষিত ওয়ার্ডবয় থাকার কথা থাকলেও তার বালাই নেই তালা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে। একজন রোগী এলে তাকে অপারেশন টেবিলে উঠিয়ে তারপর শুরু করে বিভিন্ন নাটক। এমনি কায়দায় চলছে তালা সার্জিক্যাল ক্লিনিক। এদের খুটিঁর জোর কোথায়! প্রশ্ন জনমনে।
এ ব্যাপারে ক্লিনিক মালিক বিধান চন্দ্র রায়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করার জন্য প্রায় ২ ঘন্টা অতিবাহিত করার সত্বে সে দেখা করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন। এবং বলেন আমার বিরুদ্ধে যা খুশি তাহা করেন ।
স্বাক্ষর জালিয়াতির বিষয়ে ক্লিনিকের ম্যানেজার মশিউর রহমান বলেন, আমি মাত্র কয়েক মাস এখানে যোগদান করেছি। এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রাজিব সরদার বলেন, আমার কাছে আদালত হতে একটি তদন্ত প্রতিবেদন চাওয়া হয়। উক্ত তদন্ত প্রতিবেদনে আমি বলে দিয়েছি আল্ট্রাসনো রিপোর্টের স্বাক্ষরটি আমার নহে। এবং তদন্ত করিবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর তিনজন কর্মকর্তা উপর দায়িত্ব দিলে তাহারও আমার স্বাক্ষর জাল বলে তদন্ত রিপোর্ট এ উল্লেখ করেছেন।