জাতীয় ডেস্ক:
ভারতের গুজরাটে পাচারের পর কিশোরী টুম্পাকে (১৭) হত্যার অভিযোগে নারীসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান খুলনা র্যাব-৬ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. মোসতাক আহমেদ। গ্রেপ্তারকৃররা হলেন- নড়াইলের আলী হোসেন (২০), খুলনার মো. আল আমিন (১৯) ও কুলসুম বেগম (৪৫)।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, ভারতে বসবাসরত যশোরের অভয়নগরের নবাব ও পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়ার উপজেলার বৃষ্টি পরস্পর স্বামী-স্ত্রী। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভারতে মানব পাচারকারী চক্রের মূলহোতা। তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তাদের চক্রের সদস্যদের সাহায্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভারতে পাচার এবং বিক্রি করে অনৈতিক কাজে বাধ্য করে। র্যাব আরও জানায়, এই চক্রের সক্রিয় সদস্য বৃষ্টির মা কুলসুম এবং ভাই আল আমিন খুলনা সদর থানা এলাকায় দীর্ঘদিন বসবাস করে মানব পাচারে তার মেয়ে এবং জামাতাকে সহযোগিতা করে আসছে।
র্যাব জানায়, ওই কিশোরী টুম্পা তার বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার ডেমরা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। আসামিরা আর্থিক প্রলোভন দেখিয়ে টিকটক সেলিব্রেটি বানিয়ে দেয়া ও বিদেশে চাকরি দেয়ার নাম করে বৃষ্টি এবং নবাবের পরিকল্পনায় টুম্পাকে ঢাকা থেকে খুলনায় নিয়ে আসে। এরপর বৃষ্টির মা কুলসুমের বাসায় টুম্পাকে ৩ দিন রাখা হয়। পরে তাকে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হয়। পরে ভারতে একটি বাসায় আটকে রেখে টুম্পাকে ভারতের এনআইডি কার্ড ও আধার কার্ড তৈরি করে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করাতো।
এরপর বৃষ্টি এবং নবাবের নির্দেশে আলী হোসেনের জিম্মায় অনৈতিক কাজ করার জন্য টুম্পাকে ২ মাস আটকে রাখা হয়েছিল এবং জোরপূর্বক টুম্পার সঙ্গে আলী হোসেনের টিকটক ভিডিও বানানো হতো। পাশাপাশি তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। পরবর্তীতে টুম্পা পাচারকারীদের সকল গোপন তথ্য জেনে যায় এবং তাদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে দেশে আসার চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে টুম্পাকে হত্যা করা হয়।
গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের গুজরাট পুলিশ ফোন করে টুম্পার বাবাকে জানায় যে, তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে অন্য একজন ফোনের মাধ্যমে টুম্পার বাবাকে জানায়, আসামি আলী হোসেন তার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে টুম্পার বাবা র্যাবের কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। র্যাব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নড়াইল ও খুলনা থেকে ৩ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকার ডেমরা থানায় হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।