ইয়ারব হোসেন/ আহাদুর রহমান:
ঝাউডাঙ্গা বাজর ইজারাদারের বিরুদ্ধে নিয়ম বর্হিভ‚ত ভাবে খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতাদের থেকেও অধিক খাজনা আদায় করা হচ্ছে। ধানের খাজনা আদায় করা হচ্ছে সাড়ে তিনগুন। এমনভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ব্যবসায়ীরা ব্যাবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে বলে জানান।
ঝাউডাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হঠাৎ করে বেচা-কেনার উপর খাজনা আরোপ করে বাজারের নতুন ইজাদার মাসুদুর রহমান। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বাজারে সকল ক্রেতা ও বিক্রেতা। পাইকাররা পড়ছেন বিপাকে। প্রতিযোগিতা মূলক বাজারে টিকে থাকতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের।
ঝাউডাঙ্গা বাজারে চাল কিনতে আসা শহিদ গাজী বলেন, আমরা গরীব মানুষ। খোরাকির জন্য অল্প চাল কিনলেও টাকা দেওয়া লাগছে। এটা অচিরেই বন্ধ হওয়া উচিত।
অভিন্ন সুরে আরও কয়েকজন জানান, আমরা কোনদিনও শুনিনি যে রড, সিমেন্ট, চাল, ডাল কিনলে খাজনা দেওয়া লাগে। এই ইজারাদার নতুন নিয়ম করেছে। এমনেই করোনায় আয়-রোজগার বন্ধ। তাতে বাড়তি খাজনার টাকা কোথা থেকে দিব।
এ বিষয়ে ঝাউডাঙ্গা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন বলেন, ঝাউডাঙ্গা বাজারটি ঐতিহ্যবাহী এবং অনেক পুরাতন বাজার। এ বাজারে প্রতিদিন কোটি টাকার উপর লেনদেন হয়। আমারা কোনদিন মুদি দোকান, রড সিমেন্টের দোকান বা এ ধরেনর কোন দোকানের খাজনা দেই নাই। অন্য ইজারদারও খাজনা তুলে নাই। এ বছর মাসুদুর রহমান ইজারা পেয়েই এ অনিয়ম শুরু করেছেন। এখানকার মুদি ব্যবসায়ী, রডসিমেন্টের ব্যাবসায়ীরা টিন সার্টিফিকেট, ট্যাক্স-ভ্যাট, ইউনিয়ন পরিষদের থেকে ট্রেড লাইসেন্স বাবদ সরকারকে অনেক টাকা রাজস্ব দিয়ে থাকি। আবার হাটের ইজারাদারকে কেন অতিরিক্ত খাজনা দিতে যাব।
ঝাউডাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী গোলাম রহমান জানান, আমরা বিভিন্ন মুদি মাল ঢাকা, যশোর, খুলনা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমদানি করে পাইকারি বেচা কেনা করি। দেশ স্বাধীনের পর থেকে কোন ইজারাদার মুদি দোকান থেকে এক টাকাও খাজনা নেয়নি। নতুন ইজারাদার এখন আমাদের উপর অতিরিক্ত খাজনা আয়ের জন্য জোর প্রয়োগ করছে। আমরা মাননীয় জেলা প্রশাসকের কাছে জরুরী ভিত্তিতে এর প্রতিকার চাই।
ঝাউডাঙ্গা বাজারের অপর ব্যবসায়ী ও ঝাউডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি আব্দুল খালেক বলেন, এতদিন মুদি, রড-সিমেন্টের দোকানে কোনদিন খাজনা দেওয়া লাগেনি। বর্তমানের এই ইজারাদার জোরপূর্বক খাজনা আদায়ের চেষ্টা করছে।
অতিরিক্ত খাজনা আদায় প্রসঙ্গে ঝাউডাঙ্গা বাজারের ইজারাদার মাসুদুর রহমান বলেন, গত ৭ বছর ধরে ধানের খাজনা চলে আসছে বস্তাপ্রতি ৪ টাকা। আমি কৃষকদের সুবিধার্থে খাজনা কমিয়ে ৩টাকা করেছি। মুদি বাজারে কোন খাজনা নেওয়া হচ্ছে না। যদি কেউ এই তথ্য দেয় ভুল দিয়েছ। তবে পুরো এক গাড়ি ভুষি আসলে সরকারি হিসেবে খাজনা আসে ৮০০ টাকা। আমি ব্যবসায়িদের সুবিধার্থে খাজনা আদায় করেছি ২৫০ টাকা। তারা সৌহাদ্যে মাত্র দুই দিন খাজনা দিয়েছে। তৃতীয় দিন যখন যাচ্ছি তখন তারা আমাকে খাজনা দিচ্ছেনা। মুদি বাজার খাজনার আওতায় না। মুদি বাজারের খাজনা আমি নিচ্ছিনা। যদি কেউ এরকম তথ্য দিয়ে থাকে তাহলে তা ভুল। খুচরা চাল, ডাল কেনাকাটা খাজনার আওতায় পড়েনা। তাই এর খাজনা আদায় অসম্ভব। বাজারটি সামাজিক উন্নয়নের জন্য। এখানে যতটুকু বেনিফিট আসে তা লোকজনের মাঝে বিলিয়ে দেয়ার জন্য। এখানে ব্যাক্তি স্বার্থ কিছুই না। আমার চল্লিশ লাখ টাকা ডাক আছে। এখান থেকে অলরেডি ৪ লাখ টাকা সাধারণ মানুষের মাঝে চলে গেছে। এখানে একবছরে যত রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রোগাম হবে তার সমুদয় খরচের দায় দায়িত্ব আমি নিয়েছি। হাটে বেকার ১৫জন ছেলে খাটে। তাদের প্রত্যেকের ৯হাজার টাকা করে বেতন নির্ধারিত করা আছে। এখানে আমার কোন ব্যাক্তি স্বার্থ নেই এবং কোনদিন থাকবেও না।
ঝাউডাঙ্গা বাজারে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের ব্যপারে জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, এই বিষয়টি কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। অচিরেই তদন্তপূর্বক ইজারাদারে বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।