নিজস্ব প্রতিবেদক: সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজারে সরকার অনুমোদিত দেশি মদের দোকানের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত তিন দিন দোকান বন্ধ থাকার পর রবিবার (৩ জানুয়ারী) অবশেষে দোকান খুলেছে। গত তিন দিন (১, ২ ও ৩ জানুয়ারী) দোকান বন্ধ থাকায় সরকার মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও অভিযুক্ত রনজিৎ ঘোষের (দোকানের অর্ধেক মালিক) বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি সাতক্ষীরা জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এমনকি দোকানের অপর মালিক ববিতা রানী ঘোষ জেলা কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করায় তাকে দোকানের মালিকানা থেকে বাদ দেয়ার হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উক্ত দপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। তার প্রশ্ন বৃটিশ আমলের সরকারী দেশী মদের দোকানের লাইসেন্স কিভাবে অর্ধেক মালিককানা হলো তাও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে নানা মহলে।
বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কয়েকজন নেতা জানান, ৩১ ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে রনজিৎ ঘোষ জেলা মাদকদ্রব্য কর্মকর্তাদের ৩০ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে দোকান পার্টনার ববিতা রানীকে বাদ দিয়ে নিজের নামে দোকানের লাইসেন্স করে নিয়েছে এমন দাবি করে দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। পরে সরকারের রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ায় স্থানীয়দের চাপে রবিবার ববিতা রানীকে (অর্ধেক মালিক) খুলনার সরকারি ডিপো থেকে কাগজ পত্র জটিলতার কারনে মদ উত্তোলন করতে না পেরে রনজিৎ ঘোষের নিকট থেকে দেশি মদ ক্রয় করে বিক্রি করার শর্তে দোকানের চাবি দেয়া হয়েছে। তারা বলেন, এই সুযোগে রনজিৎ ঘোষ মদের সাথে বিপুল পরিমান নিম্ন মানের পানি মিশিয়ে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এসব ব্যবসায়ী নেতাদের অভিযোগ স্বারাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনুমোদিত দোকানে জোরপুর্বক তিন দিন তালা ঝুলিয়ে বন্ধ রাখলেও সাতক্ষীরা জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ উর্দ্ধতন কেউ এ বিষয়ে নিরব ভুমিকা পালন করেছেন। এবিষয়ে তারা সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিকট ঘুষ গ্রহনসহ বিষয়টি দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার চার দিন পরও সাতক্ষীরা জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নুরুজ্জামান এঘটনা তাদের জানা নেই বলে জানিয়েছেন। অন্য এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিষয়টি বড় স্যারেরা দেখছেন, আমি কিছুই বলতে পারব না। খোজ নিয়ে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ঝাউডাঙ্গায় দেশি মদের দোকান প্রথম পরিচালনা করতেন পাথারঘাটা গ্রামের কেষ্ট পদ ঘোষ। পরে তার মৃত্যুর পর তার উত্তরসুরি হিসেবে ছেলেরা দোকান পরিচালনা করে আসছিলেন। গত চার বছর আগে মৃত কেষ্ট পদ ঘোষের দৌহিত্র অশোক কুমার ঘোষ দোকানের অর্ধেক মালিকানা নিজ ভাই রাধেশ্যাম ঘোষ এবং কলারোয়া উপজেলার মুরারিকাটি গ্রামের রনজিৎ ঘোষের নিকট বিক্রি করে দেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ রাধ্যেশ্যাম ঘোষের মৃত্যু হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী তার স্ত্রী ববিতা রানী ঘোষ (নোমিনি) হিসেবে অর্ধেক দোকানের মালিকানা পেয়ে দোকান পরিচালনা করে আসছেন। সম্প্রতি রাধেশ্যাম ঘোষের মৃত্যুর পর জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে অপর দোকান মালিক রনজিৎ ঘোষ প্রকৃত মালিক ববিতা রানী কে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নিজের নামে করে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এঘটনার পর আকস্মিক ১ জানুয়ারী, ২০২১ রনজিৎ ঘোষ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের এক বিশেষ কর্মকর্তার নাম ব্যবহার করে জানান, ববিতা রানী কে বাদ দিয়ে ঝাউডাঙ্গা দেশি মদের দোকান তার নিজ নামে দোকান পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যার কারনে গত তিন দিন দোকান বন্ধ করে দেয়। যার ফলে সরকার মোটা অংকের টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে। (প্রিয় পাঠক দেশী মদের দোকানের পার্টনার রনজিৎ ঘোষের হঠাৎ করে অঢেল সম্পদের মালিক হওয়া ও এলাকায় বাহিনী গড়ে তুলে রাম রাজত্ব কায়েম করার ২য় পর্ব দেখতে সংগ্রহ করুন দৈনিক সাতনদী)।