
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউপির ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি, নব নির্বাচিত ইউপি সদস্য ও কুখ্যাত মাদক সম্রাট আজাদ হোসেনের জামিন আবেদন ও রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছে আদালত। মঙ্গলবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ জিয়ারুল হক মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তার সাত দিনের রিমান্ড আবেদন আসামীপক্ষের জামিন আবেদন শুনানী শেষে এ আদেশ দেন।
স্থানীয় দায়িত্বশীল স‚ত্র জানায়, রাজনৈতিক পালা বদলের সাথে সাথে জাতীয় পার্টি ছেড়ে যুবলীগে যোগদান করে প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগে যোগদান করেন ঝাউডাঙ্গা মাদক সম্রাট হিসেবে খ্যাত আজাদ হোসেন। পরবর্তীতে উর্দ্ধতন নেতাদের ম্যানেজ করে সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি ৪নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বনে যান তিনি।
আজাদ চোরাকারবারি ও মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে এ পর্যন্ত ১০টি মামলার আসামী হয়েছেন। খেটেছেন জেল। ট্রান্সপোর্ট ব্যবসার আড়ালে ঝাউডাঙ্গা সদরের পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্রতি মাসে বিপুল পরিমান ফেনসিডিল, ইয়াবা ও বিদেশী মদ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে আজাদের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে বিজিবি’র নাম ভাঙিয়ে টাকা নেওয়ার অভিযোগে বাড়ি থেকে তুলে এনে ঝাউডাঙ্গা বিশেষ ফাঁড়িতে তাকে পেটায় বিজিবি। এরপরও থেকে থেমে নেই তার চাঁদাবাজি। ইতিমধ্যে তিনি ২৬ বিঘার ও বেশি জমি স্বনামে ও বেনামে বন্ধক রেখেছেন। দু’ স্ত্রীর জন্য মোজাইক টাইলস দিয়ে পৃথক দু’টি আলিশান বাড়ি বানিয়েছেন। নিজের অবস্থান ধরে রাখতে পুষেছেন ডজন খানিক মাদক ব্যবসায়ি, মাদক সেবী ও চোরাচালানিকে। ইতিমধ্যে ব্যাংকে জমিয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ। ২০১৬ তে ইউপি সদস্য ব্যর্থ হলেও টাকার প্রভাব খাটিয়ে গত ইউপি নির্বাচনে তিনি ঝাউডাঙ্গা ইউপি’র ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন।
স‚ত্রটি আরো জানায়, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের একজন বড়মাপের জনপ্রতিনিধি তার নিজের নির্বাচনী প্রতিপক্ষদের জব্দ করতে অশিক্ষিত আজাদ হোসেনেকে প্যানেল চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করান। তাকে দিয়েই শালিসের নামে প্রতিপক্ষদের জব্দ করার প্রাথমিক কাজ শুরু করে আজাদের বাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে তার জামাতা। ২০১২ সালের ২৪ মার্চ ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় বিশেষ প্রতিবেদনে উঠে আসা একই গ্রামের কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ি ও সন্ত্রাসী কামরুজ্জামান রানা। ২০১৪ সালের ২২ আগষ্ট সাতক্ষীরা সদরের গোপীনাথপুর গ্রামের জগদীশ গোস্বামীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে কালিয়ানি- ছয়ঘরিয়া সীমান্তে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ওই মামলার অন্যতম এজাহারভুক্ত আসামী কামরুজ্জামান রানা। গত বৃহষ্পতিবার ভোরে গোবিন্দকাটি গ্রামের মতিয়ার রহমান ও বাপ্পি হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাদের দেওয়া তথ্য মতে রানার বাড়ি থেকে ওই গাজা উদ্ধার করার সময় আটক করা হয় রানাকে। এ খবর পেয়ে শ্বশুর আজাদের সহযোগিতায় রানা পুলিশের লাগানো হাতকড়াসহ পালিয়ে যায়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহায়তায় আজাদ তার জামাতা রানার সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই হাতকড়া ফিরিয়ে দেয়। পাঁচ কেজি গাজা উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ। আজাদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দেয়। শনিবার মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক ইসমাইল হোসেন গ্রেপ্তারকৃত আজাদ, মতিয়ার ও বাপ্পি হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আদালত শুনানীর জন্য আদালত মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। একইভাবে আসামী আজাদ এর পক্ষে আইনজীবী অ্যাড. এম শাহ আলম আদালতে জামিন আবেদন করেন। তবে হাতকড়া নিয়ে পালিয়ে যাওয়া রানাকে গত ছয় দিনেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যরা। আসামী আজাদের রিমান্ড আবেদন ও জামিন আবেদন না’মঞ্জুর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু।