রুবেল হোসেন: ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আশাশুনি উপজেলা শাখার কার্যক্রম চলছে জোড়াতাড়ি দিয়ে। দলটির উপজেলা শাখার শীর্ষ নেতারা ব্যক্তিগত স্বার্থ সিদ্ধিতে ব্যস্ত। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা। সোমবার (২২ মে) কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি দায়সারা ভাবে পালন করায় আবারও আলোচনায় এসেছে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগ। দায়সারা ভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি পালন করায় উপজেলা জুড়ে বইছে নিন্দার ঝড়। তৃণমূল নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ আর উৎকন্ঠা।
ঘটনা সুত্রে প্রকাশ, রাজশাহী জেলা বি.এন.পির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকী দেওয়ার প্রতিবাদে দলটির দপ্তর সম্পাদক ব্যারিষ্টার বিপ্লব বড়–য়া স্বাক্ষরিত এক পত্রে সোমবার (২২ মে) সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয়। কিন্তু সেই কর্মসূচী সম্পর্কে সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের অবহিত না করে শীর্ষ নেতার অনুগত মুষ্টিমেয় কতক লোদজন নিয়ে দায়সারা ভাবে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ সমাপ্ত হয়। বিক্ষোভ মিছিলে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলটির মনোনয়নে নির্বাচন করা কোন চেয়ারম্যান প্রার্থী উপস্থিত ছিলো না।
সোমবার (২২ মে) বিকাল ৫ ঘটিকার সময় খুবই অল্প সংখ্যক লোক নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা শুরু হয়। সেই প্রতিবাদ সভায় যে ব্যানার করা হয়েছে, সেই ব্যানারে ছিল মারাত্মক ভুল । উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিম এবং সাধারণ সম্পাদক শম্ভু চরণ ম-ল দুইজনই সেই ভুলে ভরা ব্যানার নিয়ে সমাবেশ ও মিছিল করেছেন। সঙ্গত কারণেই কেন্দ্রীয় কর্মসূচি নিয়ে দলটির উপজেলা শাখার শীর্ষ নেতাদের উদাসীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজনৈতিক মহলে।
দলটির জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান, এমনকি উচ্চ আদালতের রায়ে স্বীকৃত আমাদের জাতীয় স্লোগান “জয় বাংলা” কথাটিও ব্যানারে লেখা হয় নি। এছাড়াও যার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে সেই বি.এন.পি নেতা আবু সাঈদ চাঁদ এর নাম ভুল লেখা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জৈষ্ঠ্য (কন্যা) শব্দটির বানানও ভুল করা হয়েছে, কন্যা বানান ভুল রয়েছে। এ যেন দায়সারার পর্যায় নিয়ে এসেছে দলটিকে। আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ত্যাগী নেতাকর্মীদের না ডেকে সমাবেশে উপস্থিত করা হয় এক সময়কার বিএনপির কিছু নেতার।
এই দলের নিবেদিত কিছু ত্যাগী নেতা কর্মীদের সাথে কথা বললে তারা মন্তব্য করেন এই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দিয়ে এই ভুল করাটা খুব স্বাভাবিক। কারন এই দলটাকে তারা আর্দশের জায়গা থেকে গ্রহণ করতে পারে নাই। একজন ছিলেন ভিন্ন দল করার পরে এই দলে যোগদান করা মানুষ। আরেকজন এই পদ পাওয়ার পূর্বে সক্রিয় ছিল না কখনো আওয়ামী লীগে ।
আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম শাহনেওয়াজ ডালিম বলেন, “উপজেলা আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে আমাকে ডাকা হয় নি। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু না থাকা বা একাধিক বানান ভুল থাকা সংশ্লিষ্টদের রাজনৈতিক দুরদর্শীতার অভাব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শম্ভুজিত মন্ডল সাতনদীকে জানান, “শুধুমাত্র আশাশুনি প্রোপারের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রোগ্রাম করা হয়েছে এবং সেটি রুহুল হক স্যারের (সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আ.ফ.ম. রুহুল হক) নির্দেশ মতো করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব ইউনিয়নে প্রোগ্রাম করেছে। আশাশুনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসেনুজ্জামান হোসেন কে ডাকলেও তিনি আমাদের সাথে না এসে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে আলাদা প্রোগ্রাম করেছে। ” ব্যানারে ভুল থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ ব্যানারে ভুল থাকার বিষয়টি আমাদের নজরে আসলেও তখন কিছু করার সময় ছিল না। আমরা অল্প সময়ের নোটিশে হঠাৎ করে প্রোগ্রাম করেছি। ব্যানারে ভুল থাকার বিষয়ে তাদেরকে (ব্যানার তৈরির কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি/ছাপাখানা) আমরা গালিগালাজ করেছি।”
সবাইকে ডাকা হয় নি এমন অভিযোগ অস্বীকার করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ.বি.এম মোস্তাকিম সাতনদীকে জানান, “সকল ইউপি চেয়ারম্যানকে আমি নিজে ফোন করে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য বলেছি। যারা এসেছে আমরা তাদের কে নিয়ে প্রোগ্রাম করেছি। কেউ না আসলে আমরা তো তাদের জোর করে আনতে পারি না। সেখানে আমাদের এম.পি মহোদয়ও মোবাইলে বক্তব্য দিয়েছেন। সুতরাং পক্ষপাতিত্ব করার অভিযোগ সঠিক নয়।”
ব্যনারে ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু না থাকা বা বানান ভুল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা তো ব্যানার ঐভাবে দেখি না। ব্যানারে কোন ভুল ছিল কিনা সেটা আমি খেয়াল করিনি।”
গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিক নিয়ে বিজয়ী হওয়া একাধিক চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার জায়গা থেকে বেরিয়ে না আসতে পারলে দেউলিয়া হতে খুব বেশি সময় লাগবেনা উপজেলা আওয়ামী লীগের। যার বিরূপ প্রভাব পড়বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে।