রুবেল হোসেন: জাতীয় শ্রমিক লীগ সাতক্ষীরা জেলা শখার সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ১৫ নভেম্বর। উক্ত কাউন্সিলে সাইফুল করিম সাবু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল খালেক যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। উক্ত কমিটির মেয়াদ হয়ে গেলেও করোনা মহামারীর কারণে জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় নি। জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে গত ১৫ জানুয়ারী জেলা শ্রমিক লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে সকল উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে সে সকল ইউনিটে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করার পর জেলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এমতাবস্তায় গত ২২ জানুয়ারী কেন্দ্রিয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে.এম আযম খসরু স্বাক্ষরিত জা.শ্র.ল ২০২২/০১/২২/০৪ নং স্মারক পত্রের মাধ্যমে জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল্লাহ সরদারকে আহবায়ক ও মোঃ মাহমুদুল হাসান বিবিসিকে সদস্য সচিব করে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। বলা হয় “জেলা শ্রমিক লীগের কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় উক্ত আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হলো। ২২ জানুয়ারী ঘোষিত আহবায়ক কমিটিকে আগামী ৩ মাসের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
উক্ত কমিটি বাতিলের জন্য সাইফুল করিম সাবু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের নেতৃত্বাদীন কমিটি কেন্দ্রিয় কমিটির কাছে আবেদন জানান। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ জানুয়ারি কেন্দ্রিয় শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান স্বাক্ষরিত জা.শ্র.লী/কে/ক/পত্র ২০২২/০০৭ নং স্মারক পত্রের মাধ্যমে গত ২২ জানুয়ারি কেন্দ্রিয় সভাপতি কে.এম.আযম খসরু কর্তৃক প্রদত্ত আহবায়ক কমিটি বাতিল করে সাইফুল করিম সাবু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের নেতৃত্বাধীন কমিটি বহাল রাখা হয়।
ফলে পাল্টাপাল্টি কমিটি নিয়ে উভয় পক্ষের বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করে। জনমনে সৃষ্টি হয় বিভ্রান্তি। এমন অবস্থায় ২৫ জানুয়ারি শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে.এম আযম খসরু স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে গঠনতন্ত্র ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিএম জাফর ও খান সিরাজুল ইসলাম এবং দপ্তর সম্পাদক এটিএম ফজলুল হককে জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রিয় কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়।
পাল্টাপাল্টি কমিটি ও বহিষ্কারের ফলে সাতক্ষীরার তৃণমূল শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার। এ বিষয় নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে চলছে একে অপরকে দোষারোপ করার প্রয়াস। যা নিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে উত্তেজনা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ২২ জানুয়ারি ঘোষিত কমিটির আহবায়ক মোঃ আব্দুল্লাহ সরদার সাতনদীকে জানান, “সাইফুল করিম সাবুর নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে ফলে কেন্দ্র আমাকে আহবায়ক করে কমিটি দিয়েছে। কেন্দ্রিয় শ্রমিক লীগ আমাদের অধিকতর যোগ্য মনে করেছে বিধায় আমাদের কমিটিতে স্থান দিয়েছে।” কেন্দ্রিয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নূর কুতুব আলম মান্নান কর্তৃক আপনাদের কমিটি বাতিল করে পূর্বের কমিটি বহাল রাখা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ নূর কুতুব আলম মান্নান দল থেকে বহিষ্কৃত। ফলে তিনি নবঘোষিত আহবায়ক কমিটি বাতিল করার এখতিয়ার রাখেন না।”
সাইফুল করিম সাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বলেন, “ সাবু শ্রমিক লীগের বর্তমান অফিস ভাড়া দিয়ে অর্থ নিচ্ছে। তিনি শ্রমিকদের জন্য প্রদত্ত ৩৫০ পিছ কম্বল সাধারণ শ্রমিকদের না দিয়ে নিজ অনুগত লোকদের দিয়েছেন। তার কমিটি জাতীয় দিবসগুলো পালন করে না। জেলার শ্রমিক সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে তিনি বিতর্কিত। এমন বিতর্কিত ব্যক্তির স্থান শ্রমিক লীগে হতে পারে না।”
আহবায়ক কমিটিরি সদস্য সচিব মাহমুদুল আলম বিবিসি দৈনিক সাতনদীকে জানান, সাইফুল করিম সাবু ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ খালেকের নেতৃত্তাধীন কমিটি ২০১৭ সালে কেন্দ্রিয় শ্যমিকলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম অনুমোদন দিয়েছিলেন। আমাদের কমিটিও কেন্দ্রের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আযম খসরু অনুমোদন দিয়েছেন তাহলে আমাদের কমিটি অবৈধ হয় কিভাবে?
সাইফুল করিম সাবুর কথায় শ্রমিক লীগের কোন সদস্যকে বিভ্রান্ত না হয়ে বর্তমান আহবায়ক কমিটির কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করার আহবান জানান তিনি।
জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক বলেন, “ করোনার কারণে আমরা সম্মেলন করতে পারিনি। আগামী সম্মেলন পর্যন্ত আমরা দায়িত্ব পালন করবো কেন্দ্রের এমন নির্দেশনা আছে। আব্দুল্লাহ সরদার সব সময় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য কাজ করেন। আমরা সব সময় গঠনতন্ত্র মোতাবেক কাজ করবো।
তবে শ্রমিক লীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আব্দুল্লাহ সরদার একজন অনুপ্রবেশকারী। ইতিপূর্বে তিনি বিএনপি সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। আর তথাকথিত আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাহমুদুল আলম বিবিসিকে আমি চিনি না। সাধারণ শ্রমিকদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। শ্রমিক লীগের ঐক্য আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। অনুপ্রবেশকারীদের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে।”
পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণার পর উভয় পক্ষ পৃথকভাবে আনন্দমিছিল সহ সমাবেশ করছে। এসব সমাবেশ থেকে প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে উষ্কানী মূলক বক্তব্য প্রদান করা হচ্ছে। যার ফলে যে কোন সময় সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
জেলা শ্রমিকলীগের তৃণমূল কর্মীরা মনে করেন, কেন্দ্রের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দ্ব›েদ্বর প্রভাব জেলার রাজনীতি পড়া উচিৎ নয়। দলের সার্বিক উন্নতি এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লক্ষ্যে শ্রমিক লীগের ঐক্য জরুরি।