
অনলাইন ডেস্ক: শরীয়তপুর জেলা পরিষদের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে ঠিকাদাররা কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে নামমাত্র কাজ করে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
এসব কাজে শুধু ঠিকাদারই নয়, খোদ জেলা পরিষদের কর্মকর্তারাও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
জানা গেছে, সরকারি নীতিমালায় জনস্বার্থে কাজ করার কথা থাকলে তা না করে অনেক কাজই করা হয়েছে ব্যক্তিস্বার্থে। আবার অনেক জায়গায় প্রকল্প দেখিয়ে কোনো কাজ না করেই হাতিয়ে নেয়া হয়েছে সরকারি টাকা।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের অভিযোগ সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শরীয়তপুর জেলা পরিষদ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১২৬টি প্রকল্পের অনুকূলে ১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩১৫টি প্রকল্পে ১ কোটি ৯৭ লাখ ৮০ হাজার ১৬৬ টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৮৩টি প্রকল্প ১ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার বাস্তবায়নের জন্য হাতে নেয়া হয়।
এ প্রকল্পের মধ্যে এডিবি, রাজস্ব তহবিল ও স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য শরীয়তপুর জেলা পরিষদের অধীনে দরপত্র আহ্বান ও সিপিপিসির মাধ্যমে প্রকল্প হাতে নেয়।
তা ছাড়া সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে জনস্বার্থের পরিবর্তে ব্যক্তিগত স্বার্থে সরকারি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে– ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুটিজুরি বারাকা ফিলিং স্টেশনে ২টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন, ডামুড্যা উপজেলার দুবখোলা গ্রামের মো. আবু তাহেরের বাড়িতে একটি স্ট্রিট লাইট স্থাপন করা হয়েছে।
সদর উপজেলার ১নং ওয়ার্ডে সাত্তার শেখের বাড়িতে স্ট্রিট লাইট স্থাপন। ডামুড্যা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে হাবিব খানের বাড়ির কবরস্থানের গাইডওয়াল নির্মাণ। এ ছাড়া একই অর্থবছরে রাজস্ব খাতের ১ থেকে ২৬নং পর্যন্ত অনেক গণকবরস্থান দেখানো হয়েছে। অথচ সরেজমিন গিয়ে কোনো গণকবর পাওয়া যায়নি।
কোদালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিজান সরদারের বাড়িতে ২টি স্ট্রিট লাইট নির্মাণ, ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরপাইয়াতলী মোল্লাবাড়ি পুকুরে ঘাটলা উন্নয়ন ৩ লাখ টাকা। ভেদরগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকায় সফি রাড়ির বাড়ির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ।
একই উপজেলার ৩নং ওয়ার্ডে মুশরীখোলা দরবার শরিফের ওয়াজ মাহফিলের জন্য একটি সাউন্ড সিস্টেম ক্রয় বাবদ ১ লাখ টাকা। ডামুড্যা উপজেলার পৌর এলাকায় ২নং ওয়ার্ডে ঠেংগার বাড়ির মান্নান পাগলার গেট উন্নয়ন, নড়িয়া উপজেলার বিঝারি ইউয়িনের ৯নং ওয়ার্ডেও নান্নু মৃধার বাড়ির ঘাটায় কাঠেরপুল নির্মাণ।
এমনও প্রকল্প আছে– দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে, তরে কোনো কাজ না করেই ঠিকাদার টাকা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে।
এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব খাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার কানারবাজার-ভেনপাবাজার সড়ক থেকে চাদসার জামে মসজিদ পর্যন্ত সিসি রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সংস্কৃতি প্রকল্পের পালং ইউনিয়ন পরিষদের আসবাবপত্র ক্রয়। যেখানে কোনো পরিষদের ঘর নেই যে আসবাবপত্র থাকবে।
ভেদরগঞ্জ শিল্পকলা অ্যাকাডেমির বাধ্যযন্ত্র ক্রয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের রাজস্ব তহবিলের নড়িয়া উপজেলার কাঞ্চনপাড়া আওলাদে রসুল রহ. আল মাদানি নুরানি মাদ্রাসা এতিমখানার মাঠ উন্নয়ন। এমনিভাবে শরীয়তপুর জেলা পরিষদে উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে অনেকই সরকারি টাকার তছরুপ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
পেছনে তাকালে দেখা যাবে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এমনিভাবে অনেক প্রকল্প দিয়ে টাকা উত্তোলন করে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কোনো কাজ হয়নি।
এ ব্যাপারে জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ নূর হোসেন বলেন, ‘আমার জানামতে কেউ ভুয়া কোনো প্রকল্প দিয়ে টাকা নেয়নি। হয়তো বা এমন হতে পারে প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। টাকা তুলে নিয়ে থাকলে অনিয়ম হলে তদন্ত করে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক সফিকুল ইসলাম রাড়ি বলেন, ‘আমাদের কয়েকটি বাড়িতে বৃষ্টিতে পানি জমে থাকার কারণে জেলা পরিষদের টাকা নিয়ে ড্রেন নির্মাণ করেছি। মশুরি খোলা দরবার শরিফের নামে জমি দলিল করে দেয়ার পর সেখানে উন্নয়ন ও সাউন্ড সিস্টেমের জন্য ১ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়েছি। এটি জনস্বার্থের কাজ।’
শরীয়তপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, ‘আমি খুব চিন্তাভাবনা করে প্রকল্প গ্রহণ করে থাকি। আমার পরিষদের সদস্যদের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে। ওই সব বরাদ্দের অনুকূলে তারা প্রকল্প দাখিল করে। সেখানে কোনো অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। ইতিমধ্যে ২-১টি প্রকল্পের বরাদ্দ বাতিল করা হয়েছে।’