*অনুমোদিত রুবি-জুয়েলের কমিটিকে বয়কট
*কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি গঠনের দাবি
রুবেল হোসেন: গঠনতন্ত্র বহির্ভুতভাবে সাতক্ষীরা জেলা কৃষক লীগের পকেট কমিটি ঘোষনা করায় তৃণমূলে কৃষকলীগের কর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ। কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক ঘোষিক পকেট কমিটি প্রত্যাখান করে কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে কমিটি করার দাবি জানিয়েছেন পদ প্রত্যাশী সম্মেলনের প্রার্থী সহ সাধারণ কাউন্সিলররা। এদিকে ৫ নভেম্বর আহুত সম্মেলনে সেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপির অশালীন আচরণের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জেলা কৃষক লীগের সম্মেলনের কাউন্সিলর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মোমেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ নূর আলী সরদার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আলাউদ্দীন জোয়াদ্দার, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী বিশ্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা ময়নুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত পত্রে সাতক্ষীরা জেলা কৃষকলীগকে বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গণ।
জেলা কৃষক লীগের কমিটি মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় গত ৫ নভেম্বর শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে সম্মেলনের আয়োজন করে জেলা কমিটি। বিভিন্ন উপজেলা থেকে ২৩৭ জন কাউন্সিলর সহ হাজার হাজার নেতাকর্মী সম্মেলনে অংশ গ্রহণ করে। সম্মেলনের প্রথম পর্ব শেষ হলে দ্বিতীয় পর্বে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব হয়। সভাপতি পদে বিশ্বজিৎ সাধু, মাহফুজা সুলতানা রুবি, শাহ আনারুল ও আতিয়ার রহমান প্রার্থী হন। অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হন মঞ্জুর হোসেন, এ্যাড.আল মাহমুদ পলাশ, সামসুজ্জামান জুয়েল, সেলিম রেজা সেলিম, ও রাশেদ সরোয়ার শেলী। কেন্দ্রিয় নেতৃবৃন্দ প্রার্থীদের সাথে সমঝোতা করে একক প্রার্থী নির্বাচনের প্রচেষ্টা চালালেও স্ব স্ব প্রার্থী নিজ নিজ অবস্থানে অনঢ় থাকায় জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত কাউন্সিলরবৃন্দ ভোট গ্রহণের প্রস্তাব করেন। এক পর্যায়ে ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে মূল মঞ্চে ব্যালট বক্স আনা হয়। ব্যালট বক্স দেখে ক্ষিপ্ত হন কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি। এসময় তিনি উত্তেজিত হয়ে গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে কেন্দ্রিয় কৃষক লীগের সহ সভাপতি ও খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ আশরাফ আলীর উপর চড়াও হন তিনি। কেন্দ্রিয় সেক্রেটারি কর্তৃক অপমানিত হয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ আশরাফ আলী পদত্যাগের ঘোষনা দিয়ে মঞ্চ থেকে নেমে যেতে উদ্যত হলে সাধারণ কাউন্সিলররা বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ আশরাফ আলীকে থাকতে হবে মর্মে স্লোগান দেন। এতে করে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক। তিনি মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে চুপ সবাই চুপ বলে স্লোগানকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকী দেন। এক পর্যায়ে কেন্দ্রিয় সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ আশরাফ আলীকে ম্যানেজ করে তার মুখ দিয়ে ঘোষনা দেওয়ান যে, “এখন কোন সিদ্ধান্তে যাওয়া সম্ভব নয়। পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।” ফলে হতাশ হয়ে নেতা কর্মীরা ফিরে যান। দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা । এমন পরিস্থিতিতে গত ১০ নভেম্বর কেন্দ্রিয় সভাপতি সমীর চন্দ্র চন্দ ও সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি স্বাক্ষরিত এক পত্রে মাহফুজা সুলতানা রুবিকে সভাপতি ও সামসুজ্জামান জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষনা দেওয়া হয়। ফলে হতাশ হন সাধারণ নেতাকর্মীরা।
কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক কর্তৃক কাউন্সিলরদের প্রতি অসদাচারন করায় গত ৬ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলরবৃন্দ জানান, “কাউন্সিলর বৃন্দ সরাসরি ভোটের কথা জানালেও তা উপেক্ষা করা হয়। কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতির অশালীন আচরনে উপস্থিত নেতাকর্মী বৃন্দ মনোক্ষুন্ন হয়েছেন এবং অপমানিত হয়েছেন। কাউন্সিলরদের দাবীকে অগ্রাহ্য করে তারা ( কেন্দ্রিয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন বলে আমরা মনে করি।”
এ বিষয়ে জেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার গিয়াসউদ্দীন বলেন, “কেন্দ্রিয় কমিটির গঠনতন্ত্র বহির্ভুত পকেট কমিটি আমরা মানি না। আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে সাধারণ কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে পরবর্তী নেতৃত্ব চাই।”
জানতে চাইলে সাতক্ষীরা জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও ৫ নভেম্বর আহুত সম্মেলনের সভাপতি প্রার্থী বিশ্বজিৎ সাধু সাতনদীকে জানান, “ জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আমরা ৫ তারিখে সম্মেলনের আয়োজন করি। ২৩৭ জন কাউন্সিলর সহ হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হন। আমি সহ সভাপতি পদে আরো ৩ জন প্রার্থী থাকায় এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ৫ জন প্রার্থী হওয়ায় সাধারণ কাউন্সিলররা ভোগ গ্রহণের দাবি জানান। কিন্তু কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজা সুলতানা রুবির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একক সিদ্ধান্তে ভোট গ্রহণ না করে তিনি পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান। পরবর্তীতে বিতর্কিত রুবিকে সভাপতি করে তিনি কমিটি ঘোষনা করেছেন। ফলে আমরা হতাশ হয়েছি। কেন্দ্র যখন পকেট কমিটি অনুমোদনই দিবে তাহলে সম্মেলনের নামে তামাশা করার কি দরকার ছিল? আমরা উক্ত পকেট কমিটি বয়কট করে পুনরায় কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানাচ্ছি। তাতে আমি নির্বাচিত না হয়ে অন্য কেউ নির্বাচিত হলেও মেনে নেব। অন্যথায় ঘোষিত পকেট কমিটির বিরুদ্ধে তৃনমূলের কর্মীদের সাথে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে কেন্দ্রিয় কৃষক লীগের সহ সভাপতি ও খুুলনা বিভাগীয় সম্মেলন কমিটির আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী আশরাফ সাতনদীকে জানান, “কেন্দ্রিয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গঠনতন্ত্র বহির্ভুতভাবে উক্ত কমিটি ঘোষনা করেছে। সম্মেলনের দিন সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলরদের সাথে অশালীণ আচরণ করে। এক পর্যায়ে সম্মেলনের দিন কমিটি ঘোষনা করলে এবং ভোটাভুটি করলে বিশৃঙ্খলা ঘটতে পারে বলে আমাকে ভুল বুঝিয়ে পরবর্তীতে কমিটি ঘোষনা করা হবে বলে ঘোষনা দেওয়ায়। কিন্তু আমি ফেসবুকে দেখলাম ১০ তারিখে তারা কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক) একটি আংশিক কমিটি ঘোষনা করেছে। কথা ছিল আমার সাথে আলোচনা করে কমিটি দিবেন অথচ এই কমিটি অনুমোদন সম্পর্কে তারা আমার সাথে কোন আলোচনা করে নি।
এহেন পরিস্থিতিতে জেলার রাজনীতিতে বিশৃঙ্খলা এড়াতে দ্রুততম সময়ে উক্ত পকেট কমিটি বাতিল করে কাউন্সিলরদের মতামত নিয়ে কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন সাধারণ কাউন্সিলর রা।