
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদনহীন ও নিম্নমানের মিনারেল পানিতে (জার) সয়লাব হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা বাজার। বর্তমানে এলাকায় বাসা-বাড়িতে অবৈধভাবে কারখানা বসিয়ে পরিশুদ্ধ ছাড়াই বাজার ও বিভিন্ন বাসায় জারে করে পানি বিক্রি করছে তিনটি পানি বিক্রতা প্রতিষ্ঠান। অথচ এ সকল কোম্পানীর ল্যাব না থাকলেও কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই পরিশুদ্ধ ছাড়াই বাজারে সর্বত্র দূষিত পানি বিক্রয় করছে ইউনিয়নে অবস্থিত এই তিনটি অবৈধ প্রতিষ্ঠান।
গত সোমবার (১৬নভেম্বর) সরেজমিনে ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের তিনটি পানি পরিশুদ্ধ প্রতিষ্ঠান গোবিন্দকাটি পল্লী বিদ্যুৎ সড়কে হাফিজুল ইসলাম ও সোহাগ হোসেনের পরিচালনায় ‘মোকাব্বির ড্রিংকিং ওয়াটার’, বাজারের আল-হেরা মডেল একাডেমির নীচতলায় হুমায়ুন কবির সাজুর ‘বিশ্বাস পিওর ড্রিংকিং ওয়ার্টার’, পাথরঘাটা গ্রামে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের ‘সিয়াম রাজা ড্রিংকিং ওয়াটার’ ঘুরে দেখা গেছে, সরকারি কোন অনুমোদন ছাড়াই এসব প্রতিষ্ঠান পানি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এমনকি এই পানি পরিশুদ্ধতার নামে প্রতিষ্ঠানে নেই কোন উপযুক্ত ল্যাব এবং বিএসটিআই এর অনুমোদন।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, ক্রেতা অধিকার সংরক্ষণের লক্ষ্যে গড়ে তোলা সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলো শুধু বার্ষিক শোভাযাত্রা আর মতবিনিময় অনুষ্ঠানাদির মধ্যেই নিজেদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। নকলবাজ কারখানা ও ভেজাল পণ্য বাজারজাতকারীদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও কোনো নজির নেই। যদিও মাঝে মধ্যে নির্দিষ্ট কিছু দোকানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলে, দেওয়া হয় জরিমানা/দন্ড। কিন্তু তদারকির অভাবে দন্ডপ্রাপ্তরা জরিমানার টাকা পরিশোধ করে পুনরায় ভেজাল পণ্যের বাণিজ্য অব্যাহত রাখছে বছরের পর বছর। তবুও তাদের কঠোর কোনো শাস্তির আওতায় আনা হয় না।
তারা আরো জানান, মোবাইল কোর্টে শাস্তি পাওয়া নকল কারখানাগুলোর মালিক ও ভেজাল পণ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিএসটিআই’র এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে মাসোহারা চুক্তি গড়ে ওঠে। এ কারণে অভিযুক্ত ভেজালকারীরা পরবর্তীতে আর কোনো ঝামেলার মুখে পড়েন না বলেও অভিযোগ করে বলেন।
এদিকে বাজারের দোকানী শরিফুল ইসলাম জানান, জারের পানি প্রতি গøাস এক টাকা করে বিক্রি করছি। তবে পানির মান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমার পরিচিত স্বজনের পানির কোম্পানী। তারা আমার কাছ থেকে ৩০ টাকা করে প্রতি জার নিয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি সরকারের কোন অনুমোদন রয়েছে কিনা এসব আমি কিছুই জানিনা।
ঝাউডাঙ্গা বাজারের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই ধরণের পানি পান করলে মানুষের হেপাটাইটিস রোগ ছাড়াও ডায়রিয়া, আমাশয় সহ পেটের বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানির জারের বিষয়ে এসব চিকিৎসকরা সকলকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
এ ব্যাপারে সিয়াম রাজা ড্রিংকিং ওয়াটার প্রতিষ্ঠানের মালিক স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম রেজা সহ অন্য দুই প্রতিষ্ঠানের মালিকের কাছে অনুমোদন ছাড়াই কিভাবে পানি বাজারে ছাড়ছেন জানতে চাইলে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিকই অভিন্ন সুরে বলেন, আমরা বিএসটিআই অনুমোদন জন্য আবেদন করেছি। দ্রæতই পেয়ে যাবো। এ সময় তারা তাদের বাজারজাতকৃত পানির মান ভালো বলে দাবি করেন।