আহাদুর রহমান: মাছে ভাতে বাঙালী। বাঙালির চিত্তের সাথে মাছের সম্পর্ক বহুদিনের। ইলিশ মাছ দেখলেই এ জাতির জিবে পানি টলটল করে। বেশ কিছু দিন ইলিশের গায়ে আগুন লাগলেও প্রজণন মৌসুমে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। সেই সাথে কমছে দাম। তাই প্রত্যেকেই তার সাধ্য মত কিনছে ইলিশ মাছ। কিন্তু সাতক্ষীরা বড়বাজারের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই ইলিশ নিয়েও কারসাজি করছেন। টাটকা ইলিশ দেখিয়ে বরফ ও লবন দিয়ে শক্তকরা পঁচা ইলিশ ক্রেতাদের গছিয়ে দিচ্ছেন তারা। এ ছাড়াও প্রচুর পরিমানে জাটকাও বিক্রি হচ্ছে। ২৫ সেন্টিমিটার বা প্রায় ১০ ইঞ্চি সাইজের নিচে সকল ইলিশই জাটকা। তবে বাজারে ৬-৯ ইঞ্চির ইলিশ দেদারছে বিক্রি হচ্ছে।
[caption id="attachment_25857" align="alignright" width="300"] বড়বাজার মাছের চালনিতে বিক্রি হচ্ছে আধা পঁচা জাটকা।[/caption]
বঙ্গোপসাগরে মাছের প্রজনন মৌসুমের সুরক্ষায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মাছ শিকার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল সরকার। গত ২৪ জুলাই থেকে আবার ইলিশ আহরণ শুরু হয়। এরপরই ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে ইলিশের দাম। যা বর্তমানে সর্বনিম্ন। নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে থাকা ইলিশের দাম এখন কিছুটা কম হওয়ায় অনেকেই কিনছে ইলিশ। কিন্তু কৌশলে ব্যবসায়ীরা পঁচা ইলিশে গছিয়ে দিচ্ছেন ক্রেতাদের। চটকদার মাইকিং আর দামে সস্তা দেখিয়ে পঁচা ইলিশ কিনে নিতে ক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করছে মাছ ব্যবসায়ীরা। আর নজরদারির অভাবে এ সংকট এখন প্রকট।
সাতক্ষীরা শহরের বড়বাজারে কৌশলে জাটকাসহ বরফ ও লবন দিয়ে শক্ত করা পঁচা ইলিশ দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে। এ মাছ কিনে ক্রেতারা ঠকছে। কারণ শক্ত দেখে মাছ কেনার পর বাড়িতে নিয়ে কোটার সময় ধরা পড়ছে মাছটি পঁচা। যা খেয়ে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। তবে বাজারে টাটকা মাছের সাথে বরফ দেয়া মাছ বিক্রি হচ্ছেও বলে জানান কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী।
আলমগীর হোসেন নামের এক ক্রেতা সাতনদীকে জানান, গত কয়েকদিন আগে বরিশালের ইলিশের মাইকিং শুনে বাজার থেকে ইলিশ নিয়ে আসি। দামও মাছের সাইজের থেকে কম ছিল। কিন্তু বাসায় এসে মাছ কুটে দেখি ইলিশটি পঁচা।
[caption id="attachment_25858" align="alignright" width="300"] ইলিশের বাজার।[/caption]
ভ্যান চালক রহমান সাতনদীকে জানান, কাল সন্ধ্যায় বড়বাজার থেকে ইলিশ কিনেছিলাম। ছোট সাইজের ইলিশ ২৫০টাকা করে নিয়েছিল। বাসায় যেয়ে দেখি ইলিশগুলো পঁচা।
বাবু নামের আরেক ক্রেতা সাতনদীকে জানান, বাজারের ইলিশ বরফ ছাড়িয়ে ৫-১০ মিনিট রাখলেই পঁচা দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। তাই ইলিশ খুব সাবধানে কিনছি। সেই সাথে আবার ফরমালিনেরও ভয় আছে।
সাজ্জাদুর নামে এক বিক্রেতা সাতনদীকে জানান, কখনোই বাজারে বরিশালের ইলিশ মাছ পাওয়া যায় না। ভোলা, চট্টগ্রাম থেকে মাছ আনা হয়। দোকানদাররা ক্রেতাদের সাথে মিথ্যা বলে বরিশালের মাছ হিসেবে বিক্রি করেন।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মশিউর রহমান সাতনদীকে জানান, আমরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের অভাবে অভিযান পরিচালনা করতে পারিনা। তবে এ বিষয়ে অতিদ্রুুত খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী সাতনদীকে জানান, বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে জানিয়ে আমি এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।