জাতীয় ডেস্ক:
হাজার হাজার নারীকে জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন পুশ করা হলো। বিষয়টি একেবারেই জানত না সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য এবং ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। এদিকে নকল ভ্যাকসিন বিক্রি করে প্রতারক চক্র হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।
জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন দেয়া প্রসঙ্গে সম্প্রতি সময় সংবাদকে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন জানান, দায় এড়ানোর সুযোগ নেই প্রতিষ্ঠানগুলোর।
তিনি বলেন, ‘কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে টিকা পরিচালনার দায়িত্ব কিন্তু সরকার দেয়নি। স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ জেলায় যতটুকু আছে, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের জনবল বা স্কুল-কলেজের শিক্ষক, সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ; শুরুতেই ধরে ফেলা উচিত ছিল চক্রটিকে।’
এদিকে তিন বছর ধরে বাংলাদেশে জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন ‘সেরাভিক্স’ আমদানি বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ‘জেনে ভেক বি’ এমনিতেই আমদানি নিষিদ্ধ হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন। অথচ প্রতারক চক্র এই দুটি ভ্যাকসিনই বিক্রি করছে বাজারে। তবে তা আসল নয় নকল।
হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিনের একটি অ্যাম্পুল খুলে ১০টি জরায়ু ক্যানসারের নকল ভ্যাকসিন তৈরি করে বিক্রি করছে অসাধু চক্রটি। ঢাকাসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ছয় হাজার নারীকে এ নকল ভ্যাকসিন এরই মধ্যে প্রয়োগ করেছে চক্রটি। হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক কোটি টাকা। গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার চক্রের পাঁচজন স্বীকার করেছে যে, প্রায় ১৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প করে নকল টিকা দেয়া হয়েছে। অথচ স্বাস্থ্য অধিদফতর, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর; এমনকি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিষয়টি সম্পর্কে জানতই না।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি প্রধান) হারুন অর রশিদ সময় সংবাদকে বলেন, এখন পর্যন্ত জরায়ু ক্যানসারের নকল টিকা প্রয়োগকারী তিনটি প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। পুরো চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছেন গোয়েন্দারা।
তিনি আরও বলেন, যারা মূল কাজটি করেছে তারা হলো: ডা. এআর খান ফাউন্ডেশন দারুস সালাম, আল নূর ফাউন্ডেশন দক্ষিণ খান ও পপুলার ভ্যাকসিন সেন্টার চেরাগআলী। আরও অনেকের নাম পেয়েছি; যারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাজারজাত করে এটি।
তবে বিষয়টি নজরে আসার পর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৮ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা মিরপুরের এ আর খান ফাউন্ডেশন পরিদর্শনে গিয়ে নকল এ ভ্যাকসিনটির আলামত পেয়েছেন। বেসরকারি পর্যায়ে ভ্যাকসিনেশন করতে হলে ঔষধ প্রশাসন বা স্থাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন থাকতে হবে। এসব নকল ভ্যাকসিন বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে অধিদফতর।