সিরাজুল ইসলাম, শ্যামনগর : জনবল সঙ্কটে ভুগছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীর ২৪৬টি পদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ১৩ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৭ জন, ৩য় শ্রেণির কর্মচারী ৩৭ জন, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ৮ জন সহ সর্বমোট ৬৮ টি পদই দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে । এতে করে উপকূলীয় অঞ্চল শ্যামনগরের প্রায় সোয়া চার লক্ষ মানুষ পর্যাপ্ত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেবামূলক এ প্রতিষ্ঠানের সুফল ভোগ করতে পারছেন না তারা। যে কারণে, অতিদ্রুত জনবল সঙ্কট নিরসন করে প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন ভূক্তভোগী চিকিৎসা বঞ্চিত সাধারন জনগন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অফিস সূত্রে জানা যায়, বারটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় প্রায় সোয়া চার লক্ষ মানুষের বসাবস। যার মধ্যে নয়টি ইউনিয়ন নদীবেষ্টিত। জীবন জীবিকার তাড়নায় লবন পানির সাথে সংগ্রাম করে দিনাতিপাত করা এখানের নিত্য দিনের চিত্র। অধিকাংশ এলাকাতে সুপেয় মিষ্টি পানির প্রচন্ড আকাল । যার কারনে পেটের পীড়া, খোস-পাচড়া সহ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এখানকার অধিকাংশ জনগোষ্টি। শিশু ডাযরিয়া, নিউমোনিয়া সহ শিশুরা নানারকম জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আইলা, বুলবুল ও আম্ফান বিধ্বস্ত উপকূলীয় এ অঞ্চলের অধিকাংশ জনগোষ্টি দারিদ্র সীমার নিচে বসাবস করে। যার ফলে এ জনগোষ্টি চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভিড় জমায়। কিন্তু এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবল না থাকায় বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে অসহায় আত্মপীড়িত মানুষেরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায় যে, অত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিত হলেও চিকিৎসক ও পর্যাপ্ত জনবল সংকটের কারণে বৃদ্ধি পায়নি সেবার মান। জুনিয়র কনঃ (সার্জারী) ০১ জন, জুনিয়র কনঃ (মেডিসিন) ০১ জন, জুনিয়র কনঃ (এ্যানেসথেসিয়া) ০১ জন, জুনিয়র কনঃ (শিশু) ০১ জন, জুনিয়র কনঃ (গাইনী) ০১ জন, জুনিয়র কনঃ (আর্থো) ০১ জন, জুনিয়র কনঃ (চর্ম ও যৌন) ০১ জন, জুনিয়র কনঃ (চক্ষু) ০১ জন, জুনিয়র কনঃ (ইএনটি) ০১ জন, জুনিয়র কনঃ (কার্ডিও) ০১ জন, সহকারী সার্জন (ইউনিয়ন) ০২ জন সহ র্ মোট ১৩ জন চিকিৎকের সংকট থাকায় অধিকাংশ রোগীদের জেলা সদরে স্থানান্তর কারা হচ্ছে। এছাড়াও সিনিয়র স্টাফ নার্স ০৭ জন, ফার্মাসিস্ট, স্টোর কিপার, চিকিৎসা সহকারী মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট, জুনিয়র ম্যাকানিক, নিরাপত্তা প্রহরী, আয়া, ওয়ার্ড বয় সহ সর্বমোট ৬৮ পদ শূন্য রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হলেও এখানে প্রতিনিয়ত ভর্তি থাকেন শতাধিক রোগী। যার ফলে খাদ্য ও হাসপাতালের বেড সংকটে ফ্লোর ও বারান্দাতে অবস্থান করে অসংখ্য রোগীরা। এ বিষয়ে নার্স সুপারভাইজার লতা বলেন, আমরা হাসপাতালের নিয়ম ও সিরিয়াল মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকি। যা মেনে নিতে কষ্ট পোহাতে হয় হতদরিদ্র অসহায় রোগীদের। আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি ও এক্সরে মেশিন বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন। অপারেশনের থিয়েটরের গুরুত্বপূর্ণ অটি লাইটটি নষ্ট। নষ্ট হয়ে পড়ে আছে ফটোথেরাপি মেশীন, নবকজাতকের বেী ইনকিউরেটার মেশিন, জি এ মেশিন ডায়াথেরাপি মেশীনসহ ব্লাড ব্যাংক রেফ্রিরেজাটর। পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদী না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ডেন্টাল ইউনিট। পুরাতন কমপ্লেক্স ভবনের ছাদে বিভিন্ন স্থানে ফাটল লক্ষ্য করা গেছে। যেকোন মুহুর্তে ছাদ ধসে বড় ধরনের দূর্ঘটনা করতে পারে। এ জনবল সঙ্কটের কারণে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোগীদের প্রকৃত সেবা বা পরামর্শ দিতে হিমসিম খাচ্ছেন। তাছাড়া প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এ অঞ্চলের হতদরিদ্র অসহায় রোগীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ জিয়াউর রহমান কাছে জানতে চাইলে এই প্রতিবেদককে জানান, ভবন নির্মানের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর আবেদন জানিয়েছি। পাশাপাশি পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জামাদূ সরবারহের জন্য উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। আমরা রোগী পর্যাপ্ত সেবার দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, পর্যাপ্ত জনবল, চিকিৎসায় ব্যবহৃত সরঞ্জামাদীর ব্যবস্থা করে, উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছে চিকিৎসা বঞ্চিত ভূক্তভোগী মহল এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি খাতুন বলেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উপজেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা এই উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দূর দূরান্ত থেকে রোগিরা চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন আমি ইতিমধ্যে উপজেলা হাসপাতাল টি পরিদর্শন করে অনেক তুরুটি দেখেছি বিষয় গুলো উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। অতি দ্রুতই সব কিছুর সমাধান হবে বলে তিনি মনে করেন।