
নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার শ্যামনগরে একাধিক নাশকতা মামলার আসামী ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ভয়ে বেশ কিছুদিন ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এক প্রবাসীর স্ত্রী। প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের ক্রয়ক্রত জমিকে নিজের জমি দাবী করে তার বিরুদ্ধে নানারকম ষড়যন্ত্রে করে চলেছে স্থানীয় এক মামলাবাজ ও তার দোসররা। গৃহবধূ ফাতেমাকে সর্বশান্ত করার লক্ষ্যে নিত্য নতুন কৌশল অবলম্বন করে চলেছে তারা। কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় অসহায় ঐ গৃহবধুর জামিন লাভে সহায়তা করায় এবার তারা এক জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ নেতা এবং প্রবাসীর ঐ স্ত্রী সহ ৮জনের নামে আরও একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। আর হামলা মামলার শিকার হয়ে বাড়ী ছাড়া হয়ে দূর্বিসহ জীবন যাপন করছে প্রবাসীর ঐ স্ত্রী।তাই স্থানীয়দের অভিমত কুচক্রী ঐ মহলটির ষড়যন্ত্র রুখতে ও সাধারণ মানুষকে স্বাভাবিক জীবন যাপনের নিশ্চয়তা দিতে সঠিক তদন্ত পূর্বক প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশু ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে,শ্যামনগর উপজেলা সদরের জাওয়াখালী গ্রামের সৌদি প্রবাসী আজাদ হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের ক্রয়কৃত জমি থেকে ৬ শতক জমি নিজে ক্রয় করেছেন বলে দাবী করে আসছেন প্রতিবেশী মৃত জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী হাসিনা খাতুন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। নিজের দাবীর পক্ষে কাগজপত্রানুয়ায়ী সুবিধা করতে না পেরে বাঁকা পথ ধরেন তিনি। স্থানীয় কতিপয় সন্ত্রাসীদের কাজে লাগান নিজের পক্ষে। সন্ত্রাসী চক্রের অপকৌশলে হুমকি-ধামকি, ঘরবাড়ি ভাঙচুর সহ মিথ্যা মামলা দায়ের করে সর্বশান্ত করা হচ্ছে প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমাকে।
ফাতেমার নামে একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে তারা। এ মামলায় কোর্ট থেকে ইতোমধ্যে জামিন লাভ করেছে ফাতেমা। যহেতু ফাতেমা একজন মহিলা এবং তার স্বামীও থাকে বিদেশে। তাই মামলা থেকে পরিত্রানের জন্য স্থানীয় ইউপি সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা সহ কতিপয় ব্যক্তির সহায়তা চান তিনি। কিন্তু কে জানতো একজন অসহায় মহিলাকে সহায়তা করলে তাদের ভাগ্যেও জুটবে মামলা ? হলোও তাই!
ফাতেমা বাড়ীতে না থাকা সত্ত্বেও তাকে ফাঁসাতে গত ২১ ফেব্রুয়ারী রবিবার দিবাগত রাত পৌনে ১০টার দিকে হাসিনা গং সন্ত্রাসীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে খড়-কুটা ও বাঁশ দিয়ে তৈরী হাসিনার একটি ছোট্ট রান্নাঘরে আগুণ ধরিয়ে দেয়। ঘটনার কিছুক্ষণ পর শ্যামনগর থানার এসআই তরিকুল ইসলাম সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরাও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফিরে যাওয়ার পর ঘরে আগুন দেয়ার মিথ্যা অভিযোগ করে ঐ রাতেই ফাতেমার নামে মামলা করার চেষ্টা করে। কিন্তু থানা পুলিশ মামলা গ্রহন না করায় পরদিন সোমবার তারা মামলা করতে সাতক্ষীরা কোর্টে যায়। তবে তারা এ সংক্রান্ত সাজানো মামলা দায়ের করতে ব্যার্থ হয়। সেখান থেকে ফিরে তারা আবারও থানায় ঘোরাঘুরি করলেও থানা পুলিশ এ সংক্রান্ত কোন মামলা গ্রহণ করেনি।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী এসআই তরিকুল ইসলামের সাথে সে সময় যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রান্না ঘরে আগুণ লাগানোর ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে।
কিন্তু হাল ছেড়ে দেয়নি ষড়যন্ত্রকারীরা। তারা আবারও সাতক্ষীরা কোর্টে যায় মামলা করতে। এবার তারা সক্ষম হয় আরও একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করতে।স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা রান্না ঘরে আগুণ দেয়ার সাজানো ঘটনার প্রতিবাদ করায় এবং পূর্বের মামলায় ফাতেমার জামিন লাভে সহায়তা করায় হাসিনা খাতুন বাদী হয়ে ফাতেমা সহ ৮জনের নামে বিজ্ঞ আমলী আদালত নং (০৫) সাতক্ষীরায় ১৬৩/২১ নং একটি মামলা দায়ের করেছে বলে নিশ্চিত করেছে ভূক্তভোগী ফাতেমা খাতুন। ফাতেমা ছাড়াও মামলায় স্থানীয় ইউপি সদস্য শক্তি শেখর চক্রবর্তী, শ্যামনগর সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দূর্গাপদ চক্রবর্তী, ফাতেমার মা মর্জিনা বেগম সহ অপর এক নারী ও স্থানীয় অপর সাধারণতিন ব্যক্তিকে আসামী করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে আগামী আগামী ২০ মে ২০২১ তারিখের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য শ্যামনগর থানা পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আলহাজ¦ নাজমুল হুদা’র সাথে কথা বলার জন্য গতকাল মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেওতিনি ফোন রিসিভ করেননি।
মামলা দায়েরের এ ঘটনায় হতবাক হয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।এ মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক ও সাজানো উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, রান্নাঘরে আগুণ দেয়ার ঘটনার দিন পুলশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই এর প্রতিবাদ করেন। তারা থানা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ফাতেমা বাড়িতে নেই অথচ তাকে ফাঁসানোর জন্যই এ পরিকল্পিত ঘটনা ঘটানো হয়েছ। যদি এ ঘটনাকে পুঁজি করে ফাতেমাকে আবারও ফাঁসানো হয় তাহলে প্রয়োজনে তারা রাস্তা অবরোধ ও আন্দোলনের হুমকি দেন। তারা বলেন, স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা ও তার সেকেèড ইন্ড কমান্ড এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর ছত্রছায়ায় হাসিনা এ ধরনের নাটক সাজিয়েছে।প্রশাসনের নাকের ডগায় যদি এভাবে ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা ঘটতে থাকে তাহলে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায় ?
এ ব্যাপারে প্রবাসীর স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বলেন,“আমাকে জব্দ করার লক্ষ্যেই ঐদিন রাতে তারা নিজেদের রান্না ঘরে আগুণ লাগিয়ে আমাকে ফাঁসাতে চেয়েছে। স্থানীয়রা দেখেছে সে দিন কি ঘটেছে। ঐ সময় আমি বাড়িতেও ছিলাম না। অথচ তারা নাটক সাজিয়ে আমার নামে আবারও একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে আমাকে সহায়তকা করায় তারা স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আওয়ামীল নেতা সহ অতি সাধারণ আরও কয়েকজনকে মামলার আসামী করেছে। তাদের এহেন ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবী করছি আমি এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানচ্ছি।”