মো. কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম নগরীর পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকার যুবদল নেতা রেল স¤্রাট শাহ আলমের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকির অভিযোগ এনে চট্টগ্রাম নগরীর ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত বৃহস্পতিবার নগরীর একাধিক থানায় জিডি করেছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক লিটন চৌধুরী জানান, রেলের হাজার কোটি টাকা লোপাটকারী শাহ আলম এর অপকর্মের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরীর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোচ্চার হলে তিনি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও অলিগলিতে লাশ ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। আমরা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতা প্রাণনাশের শঙ্কায় রয়েছি। ভয়ংকর সন্ত্রাসী শাহ আলম ও তার লালিত জঙ্গি বাহিনীর ভয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে হুমকি প্রাপ্ত ছাত্রলীগ নেতারা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি।
শাহ আলম বাহিনী কর্তৃক হুমকির শিকার চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, শাহ আলম বাংলাদেশ রেলওয়ের বিএনপি জামাতপন্থি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ম্যানেজ করে বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমল থেকে রেলে সকল প্রকার সরবরাহ-টেন্ডার-লিজ-নিয়োগ বাণিজ্য-মাদক-চোরাচালান-চাঁদাবাজি ও পতিতা বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছেন। এই অপকর্মের মূল হোতাকে দ্রুত গ্রেপ্তারপূর্বক শাস্তির দাবি জানান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিকট।
জানা যায়, বাংলাদেশ রেল মানেই পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্ত-শাসিত প্রতিষ্ঠান, বর্তমান রেলমন্ত্রী বলেছেন সরকারের ভিতরে আরেকটা সরকার, তথ্য অনুসারে বাংলাদেশের তিনভাগের একভাগ সম্পদের মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে। রেলের এই বিশাল সম্পদের টেন্ডার, লিজ, নিয়োগ, অনুবোর্ড, ক্যাটারিং, বেসরকারি ট্রেন, দোকান, আবাসিক হোটেল, সবই নিয়ন্ত্রণ করছেন তারেক জিয়ার প্রধান অর্থ যোগানদাতা ও আসামি গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের মামলা পরিচালনাকারী রেল স¤্রাট শাহ আলম।
অনুসন্ধানে জানা যায় চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্মিত বহুতলা তলা বিশিষ্ট ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এর অর্ধেক ভূমির মালিক বাংলাদেশ রেলওয়ে, আর এই অর্ধেক জায়গায় ২৪ তলার টাওয়ারের ১২ হাজার বর্গফুটের একটি মাত্র ফ্লোরের মালিকানা পেয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলের মালিকানাধীন এই ১২ হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্লোরটি প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা (পূর্ব) ও উক্ত দপ্তরের কর্মচারীদের ম্যানেজ করে নামমাত্র বছরে ৭ লক্ষ টাকার বিপরীতে মূল্যে লিজ নিয়েছেন। সেই ফ্লোরটি দুইটি অফিসকে ভাড়া দিয়েছেন মাসে ৬ লক্ষ টাকা করে। সেখানে শাহ্ আলম পেয়ে থাকেন বছরে ৭২ লক্ষ টাকা। রেল রাজস্ব হারাচ্ছে বছরে ৬৫ লক্ষ টাকা। নতুন রেলেস্টেশন ও পুরাতন রেলস্টেশনে দোকান রয়েছে ২০ টি, আবাসিক হোটেল ২টি। শাহ আলমের রেল থেকে প্রতিমাসে আয় হয় ৬ হতে ৭ কোটি টাকা বলে জানা যায়।
আরো জানা যায় চট্টগ্রাম রেল-স্টেশনের পার্কিংয়ে অবৈধভাবে ২৫ টি দোকান নির্মাণ করেছেন এস এ কর্পোরেশন ও লীজের শর্ত অমান্য করে অবৈধ ভাবে ভাড়া দিয়েছেন কভারভ্যান-রিক্সা ভ্যানের মালিকদের। পার্কিংয়ের শেষভাগে শাহ আলমের নেতৃত্বে চলছে মাদক ও জুয়ার আসর। বাংলাদেশের রেলওয়ের প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী সিটের কভার ফ্রী ওয়াশের নামে এস এ কর্পোরেশন চালাচ্ছেন বিজ্ঞাপন বাণিজ্য পাশাপাশি প্রতিটি বগিতে এলইডি টিভি বসিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। তাতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই অন-বোর্ড,ক্যাটারিং ও বেসরকারি ট্রেনের ইজারা নবায়ন করেছেন নামমাত্র মূল্যে শাহ আলম ও রিপন সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের নিয়োগপ্রাপ্ত অন-বোর্ড ও ক্যাটারিং এর কাজে নিয়োজিত কর্মীদের দিয়ে প্রতিনিয়ত চোরাচালান ও মাদক পাচার চালিয়ে যাচ্ছেন “শাহ আলম”। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন মাদক ব্যবসায়ী ফারুক, ইউসুফ, রুহুল আমিন, মোক্তারকে নিয়ন্ত্রণ করেন শাহ আলম। শাহ আলমের মাদক ব্যবসার প্রধান ২ সহযোগী ফারুক ও ইউসুফের কোটি কোটি টাকা শাহ আলমের নিকট রয়েছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে জানান এস এ কর্পোরেশনের এক কর্মচারী ।