প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে বাসায় ফিরে সরাসরি বাসায় ঢুকতে পারি না। গেটের বাইরে গাড়ি থেকে আমাকে নামতেই হয়। গেট আগলে থাকে এক গাদা ছিন্নমূল বাচ্চা-কাচ্চা আর কিছু অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। গাড়ী থেকে নেমেই বাচ্চা-কাচ্চাগুলোর সালামের উত্তর দিতে হয়।
ওদের উৎফুল্লতা মন ভরিয়ে দেয়। আমাকে দেখে ওদের মনের গভীর থেকে যে ভালবাসার প্রকাশ হিসেবে ' আসসালামু আলাইকুম স্যার' শব্দগুলো বের হয়ে আসে, তা আমি মনের গভীর থেকে অনুভব করি।
ওরা সৃষ্টিকর্তার কাছে তার রহমত আমার জন্যে কামনা করে বলেই মনে হয় অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও শয়তান আর তার দোসররা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। ওদের হাসি মাখা মুখ দেখলে আমার মনে হয়, জন্ম আর বেচে থাকা যেনো সার্থক।
সরকারি এ বাসায় আসা অব্দি প্রতি শুক্রবার এরা আমার নিয়মিত মেহমান, এ কথা আমি আগেও বলেছি। তবে করোনার কারণে এ শুক্রবার এরা নাও আসতে পারে, এমন একটা ধারণা মনে থাকলেও মেহমান আপ্যায়নের প্রস্তুতি আমাদের ঠিকই ছিলো। আমাদের প্রস্তুতি বিফলে যায়নি। নামাজ থেকে ফিরে যথারীতি মেহমানদের মুখদর্শন থেকে বঞ্চিত হতে হয়নি। কিন্তু মনে ভয়, প্রতি সপ্তায় যেভাবে বাসার মধ্যে এরা গাদাগাদি করে বসে ভোজন পর্ব সমাপন করে, আজকে যদি তেমনটা করে, তাহলে কে কোনদিক দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে আমার দফারফা করে ছাড়বে।
হয়তো হেডিং হবে " আইনের রক্ষক যখন ভক্ষক - র্যাব পরিচালকের বাসভবনে গণসমাবেশ আর ভোজন অনুষ্ঠান"। ভিতরের খবরের রসে তো সোশ্যাল মিডিয়া সয়লাব হয়ে যাবে। চারিদিকে শেয়ার আর লাইকের বন্যা। করোনার চেয়েও বহুগুণ দ্রæত ছড়াবে এই সংবাদ।
তাই এসব বিবেচনায় বিকল্প পন্থা অবলম্বন করতে হলো। মেহমানতো আমি ফেরত যেতে দিতে পারি না। বাসার সামনে রাস্তার দুপার্শ্বে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তাদের বসার ব্যবস্থা করতে হলো। তবুও যে মেহমানদের ফেরত যেতে হয়নি, এজন্যে মহান সৃস্টিকর্তাকে ধন্যবাদ। কোনোদিন যেনো আমার বাসা থেকে এদের ফেরত যেতে না হয়, মহান সৃস্টিকর্তার কাছে এ আমার আকূল মিনতি।