প্রিন্ট এর তারিখঃ জানুয়ারী ১১, ২০২৫, ৩:৫৭ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ এপ্রিল ১৩, ২০২০, ৯:১৬ অপরাহ্ণ
চোর-বাটপার জনপ্রতিনিধি এবং ধ্বংস যাত্রার শিল্পপতি
সাঈদুর রহমান রিমন :
ত্রাণের খাদ্যপণ্য চুরিসহ লুটেরা জনপ্রতিনিধিদের ঘৃণ্য চেহারা দেখার পাশাপাশি এখন বাটপার জনপ্রতিনিধিদের মুখ দেখারও দুর্ভাগ্য হচ্ছে জাতির। সরকারি ত্রাণ দেয়ার ক্ষেত্রে নানারকম জটিলতা পাকিয়ে মূলত: চাল-আটার বস্তাগুলো নিজস্ব গোডাউনে ঢুকানোর কুটকৌশলে ব্যস্ত তারা। গোপালগঞ্জের হরিদাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাইকিং করে অভিনব ঘোষণা প্রচার করে বেড়াচ্ছেন। ভোটার ব্যতিত অন্য কারো জন্য সরকারি ত্রাণ দেওয়ার নির্দেশনা নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। ত্রাণের খাদ্য পণ্য গুদামজাত করে হরিদাসপুরের চেয়ারম্যান এখন ভোটার আর নাগরিক বাছাইয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে গুদামে খাদ্য সামগ্রি মজুদ থাকতেও রাস্তায় রাস্তায় বুভুক্ষু মানুষজনের আহাজারি চলছে, চেয়ারম্যানের সেসব দেখারও ফুসরৎ নেই।
ভোটার না হলে ত্রাণ পাবেন না, দলীয় লোক পাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে- এমন অমানবিকতার নিয়ম প্রসব করেছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। তিনি টঙ্গী এলাকায় প্রথম ত্রাণ দিতে গিয়ে দলীয় লোকজন (নিজের নির্বাচনী প্রচারকর্মি) আর ভোটার ব্যতিত বাকিদের লাইন থেকে বিতাড়িত করে দেন। কয়েকদিনের অনাহারী মানুষের আর্তনাদও তার মন গলাতে পারেনি। দিশেহারা মানুষজনের ক্ষুধার্ত অভিব্যক্তি এসব জনপ্রতিনিধি বোঝেন না, বুঝতে চান না। বাস্তবেই নেতৃত্ব দখল আর জনপ্রতিনিধিত্ব এক বিষয় নয়, জনপ্রতিনিধি হতে হলে অভিভাবকত্বের গুণ থাকতে হয়-শব্দহীন কান্না শুনে তা বোঝার যোগ্যতা থাকতে হয়।
সম্পর্কিত খবর
মাননীয় জনপ্রতিনিধি, আপনার এলাকায় যদি দেশের কোনো মানুষ অনাহারে অঘটনের শিকার হন তার দায়ভার কিন্তু মান্যবর প্রধানমন্ত্রীর উপরই বর্তায়। অথচ প্রধানমন্ত্রীরই প্রতিনিধি দাবি করে জনপ্রতিনিধি কিংবা নেতারা অনাহারী মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন-দায় তুলে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীরই কাধে? হঠাত লকডাউনে বহু মানুষ নানা জায়গায় আটকে পড়েছেন, তারা এদেশেরই মানুষ-কেউ ভিনদেশী বা ভিন গ্রহের নয়। সবকিছুর উর্দ্ধে মানবতা- সেটাই ছিটেফোটা প্রদর্শন করে চাল চুরি, ভোট চুরি, দখলবাজি, লুটপাটের অতীত গ্লানি মোচনের চেষ্টা করুন, অর্জন করুন মানুষের অকৃত্তিম ভালবাসা।
করোনা ভাইরাসকে ঘিরে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এক মাসেরও বেশি সময় ধরে নানা তৎপরতায় গলদঘর্ম হয়ে উঠেছেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সাংবাদিক, ডাক্তার, সমাজ সচেতন মানুষজন। কিন্তু বাঙালি কী এক দুর্ভাগ্যের অমোঘ ললাট লিখন নিয়ে যে জন্মেছেন তা বুঝে ওঠা মুশকিল। বুদ্ধেশ্বর অতি লোভী গার্মেন্টস ব্যবসায়িরা অজানা জিঘাংসায় ঢাকামুখি জনস্রোত ঘটিয়ে জাতির মহাসর্বনাশ ঘটিয়ে ফেললেন। এখনো কিছু ব্যবসায়ি শিল্পপতি জাতিকে খাদের কিনারে ঠেলে দিয়ে নিজের আখের গোছানোর কাজে বড়ই তৎপর রয়েছেন। দেশের প্রসিদ্ধ শিল্পগোষ্ঠী আবুল খায়ের গ্রুপের এ কে স্টীল কারখানা এ দুর্যোগেও চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা বোঝার সাধ্য নেই কারোর। চট্টগ্রামের চৌধুরীঘাটার এ কারখানায় সাড়ে তিন হাজার কর্মীর নিত্য মিলনমেলা সচল রেখেছে এ শিল্প গ্রুপটি। আসলেই সরকারসহ সবাই মিলে অক্লান্ত পরিশ্রমে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার চেষ্টা চালালেও একেকজন শিল্পপতি মুহূর্তেই তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে ছাড়ছেন। তাদের ভিন্ন জগত, ভিন্ন সাম্রাজ্য- এদেশ না হলেও চলে...
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
Copyright © 2025 দৈনিক সাতনদী. All rights reserved.