ইয়ারব হোসেন: একটি সাইকেল চড়ে ভারত থেকে চোরাপথে শালপাতার বিড়ি চোরাচালানই ছিল তার মূল পেশা। এরপর তিনি এক লাফে উঠে যান সোনা পাচার, হুন্ডি কারবার ও ভারতীয় গরুর খাটাল ব্যবসায় । আর এতেই তিনি এখন অঢেল সম্পদের মালিক। হয়েছেন আঙুল ফুলে কলাগাছ। বাড়ি গাড়ি জমি এখন তার হাতের পুতুল খেলার মতো।
মাত্র ছয় বছরের ব্যবধানে এমনই ‘আলাউদ্দিনের আশ্চর্য প্রদীপ’ লাভ করেছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈকারি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. ইশারুল ইসলাম। ২০১৩ এর সহিংসতার সময় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা শহিদ হাসান নাশকতার মামলায় জড়িয়ে ইশারুলের কাছে চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার বুঝে দিয়ে সাতক্ষীরা থেকে পালিয়ে যান। প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগে ইশারুল নিজের প্রভাব ও গন্ডি বাড়িয়ে তোলেন। গড়ে তোলেন নতুন সা¤্রাজ্য। তিনি ভারতীয় শালপাতার বিড়ির কারবার ছেড়ে দিয়ে এবার নাম লেখান ভারতীয় গরু পাচারে। তার ভাগ্নে ভ্যান চালক তাজুলের নামে ভারতীয় গরুর খাটালের অনুমোদন দিয়ে বৈধতার আড়ালে দিব্যি চোরাচালান চালিয়ে যান ইশারুল। এই খাটালের আড়ালে নিত্য মোটা টাকা চাঁদাবাজির পাশাপাশি ইশারুল শুরু করেন স্বর্ণ চোরাচালান। বাংলাদেশ থেকে অঢেল স্বর্ণ পাচার করে ও হুন্ডি কারবারের মাধ্যমে ভারতীয় গরুর মূল্য পরিশোধ করতে থাকেন। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাকে।
শালপাতার বিড়ির কারবারী ইশারুল এখন সাতক্ষীরার ধনীদের তালিকায়। তিনি স্বনামে ও বেনামে কোটি কোটি টাকার ভান্ডার গড়ে তুলেছেন। এখন নিয়মিত বাংলাদেশের রাখালকে ভারতে গরু আনতে পাঠান ইশারুল। প্রতিদিন এভাবেই অবৈধ পথে ভারতীয় গরু চোরাচালান চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এলাকায় প্রচার রয়েছে ইশারুল বাহিনী অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। চোরাচালানে বাধা দিলে তার বাহিনী পাল্টা হামলা করে ।
কালিয়ানি গ্রামে মেম্বর ইশারুলের ছিল দুই কামরা বিশিষ্ট একটি টিনের ঘর। একটি বাইসাইকেল। এখন সাতক্ষীরা শহরের মিলবাজার দাসপাড়ায় ৬০ লাখ টাকার জমি রয়েছে তার। ইশারুলের কয়েক কোটি টাকার এসি ফ্রিজ টিভির ব্যবসা রয়েছে শহরের সোনালী ইলেকট্রনিক নামের একটি দোকানে। বৈকারি ইউনিয়নের দাঁতভাঙ্গা বিলে রয়েছে তার ১৫ বিঘা জমি। কালিয়ানি ছয়ঘরিয়ায় রয়েছে আলিশান বাড়ি। সেখানেও তিনি কিনেছেন আরও ২০ বিঘা জমি। চার বিঘা জমির ওপর রয়েছে ইশারুলের আম বাগান। তার নামে বেনামে রয়েছে ৮ টি ট্রাক। দু’টি দামী মোটর সাইকেল, দামী একটি জীপও ব্যবহার করেন ইশারুল মেম্বর।
ইশারুলের প্রথম স্ত্রী খাদিজা খাতুন। দুই সন্তানের মা তিনি। এরই মধ্যে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন ইশারুল। তাকে তালাক দিয়ে তিনি ফের বিয়ে করেন তন্বী নামের আরেক গৃহবধূকে। এ নিয়ে মামলাও হয়। কিছুদিন পর তন্বীর মৃত্যু হয়। ইশারুল প্রচার দেন তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে গ্রামবাসী বলেন তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ইশারুল আত্মহত্যার প্রচার দিয়েছেন। ইশারুল আবারও বিয়ে করেছেন সাতক্ষীরার আলিপুরে।
ইশারুলের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পৌছেছে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে । এরই মধ্যে অভিযোগের তদন্তও শুরু হয়েছে। বৈকারি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কওসার আলি এই অভিযোগ সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেম্বর ইশারুলের কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন ‘ আমি আগামি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বৈকারিতে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাই। এতে সমস্যায় পড়ে বর্তমান চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অসলে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারে নেমেছেন’। ইশারুল বলেন আমার কোনো গাড়ি নেই। আমার যে দোকান রয়েছে সেতো বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে অগ্রিম বাকি নিয়ে চালাতে হয়। কিছু ব্যাংক ঋণও রয়েছে। সোনা ও টাকা পাচারের সাথে আমি জড়িত নই। তিনি বলেন বৈকারিতে আমার ভাগনে তাজুল ইসলাম ও চেয়ারম্যান অসলের চাচাতো ভাই রাশেদুলের নামে একসাথে গরুর খাটাল ছিল। এখন আলাদা হয়ে গেছি। স্বার্থের কারণে এখন আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ উঠছে। তিনি বলেন আমি ২০০৩ সাল থেকে বৈকারি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্পাদক।
তবে জানতে চাইলে বৈকারি ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আসাদুজ্জামান অসলে বলেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কোনো কমিটিতেই ইশারুলের নাম নেই।