এগারো এপ্রিল সন্ধ্যা ছয়টায় কুল্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ বাছেত আল হারুন চৌধুরী ও তার পরিষদের ৯ জন গ্রাম পুলিশের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের হাজির হাট খোলায় সন্ত্রাসী হামলার এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার কিছু পূর্বে চেয়ারম্যান মোঃ বাছেত আল হারুন ও পরিষদের ৯ জন গ্রাম পুলিশ হ্যান্ডমাইক নিয়ে কাদাকাটির হাজির হাট খোলায় বসা” সপ্তাহিক হাটে জমায়েত শত শত মানুষকে নিরাপদ দুরত্বে থাকার জন্য এবং সাপÍাহিক হাট নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন বলে প্রচার চালাচ্ছিলো। মাহামারী করোনাকে মোকাবেলা করতে সরকারের নির্দেশনা পালন করতে গিয়েই সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন চেয়ারম্যান ও তার গ্রাম পুলিশরা সদস্যরা। তারা জানায়, সন্ত্রসী হামলার নেতৃত্ব দেয় স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এ বি এম মোস্তাকিমের দূর সম্পর্কের ভাগ্নে সাজ্জাদুল হক টিটল। মোজাম ডাক্তারের পুত্র টিটল কে স্থানীয় ভাবে সবাই মাদকাসক্ত হিসেবেই জানে। বিগত কূল্যা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর টিটল বিভিন্ন সভা সমাবেশে গিয়ে আগামী কূল্যা ইউনিয়ান পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদন্দিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে টিটল পোষ্টার, ব্যানার ও ফেষ্টুনে মোস্তাকিমের ছবিও ব্যবহার করছেন। স্থানীয় ভাবে সাধারন মানুষ সাজ্জাদুর হক টিটলকে এ বি এম মোস্তাকিমের নিকট আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠ জন হিসেবেই চেনে।
১১ এপ্রিলের সন্ত্রাসী হামলার পর জন মনে প্রশ্ন জেগেছে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান মোঃ বাছেত আল হারুন চৌধুরী ছোট বেলা থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত। গত উপ-নির্বাচনে স্থানীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম রুহুল হকের একক চেষ্টায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা মনোনীত করেন চেয়ারম্যান মোঃ বাছেত আল হারুন চৌধুরীকে। তার ও পরিষদের ৯জন গ্রাম পুলিশকে কি ভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ভাগ্নে তার বাহিনী নিয়ে সন্ত্রাসী হামলা চালায়। পাশাপাশি একশ্রেনীর লোক ও পর্যবেক্ষকের ধারনা চেয়ারম্যান মোঃ বাছেত আল হারুন চৌধুরী সৎ ও সাহসী। সে কারও পকেটে বন্দি নয়। সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলতে সে পছন্দ করেন। এ কারনেই এ বি এম মোস্তাকিম তাকে পছন্দ করেননা। আগামী ইউপি নির্বাচনের আগে-ভাগেই ভাগ্নে টিটলকে মাঠে নামিয়েছেন। আর চেয়ারম্যানের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এ সন্ত্রসী হামলার ঘটনা।
১১এপ্রিল টিটল তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে হামলা চালিয়ে চেয়ারম্যান সহ ৯ জন চৌকিদার কে মারপিট করেছে। তাদের কাছে থাকা ৬০ হাজার টাকা ও কাগজপত্র এবং সিলমোহর ছিনিয়ে নিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকেই তাৎক্ষনিক ভাবে মোবাইল ফোনে চেয়ারম্যান জানানোর পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাথে পুলিশ নিয়ে ঘটনা স্থলে আসেন এবং ততোক্ষনে হামলাকারিরা সটকে পড়ে। তাৎক্ষনিক ভাবে তিনি থানায় এজাহার দেয়ার জন্য চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা প্রদান করেন। ঘটনার পরের দিন ১২ই এপ্রিল টিটল সহ ১১ই জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করেন। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের শক্ত অবস্থানের কারনে অবশেষে মোঃ বাছেত আল হারুন চৌধুরীর দেয়া এজাহারটি ১৩ই এপ্রিল পুলিশ রেকর্ড করেছেন।
মামলা রেকর্ড হলেও পুলিশ গতিহারা। হামলাকারীরা দম্ভোক্তি করে প্রকাশ্যে ঘূরে বেড়াচ্ছে। কারণ হামলা কারীদের নেপথ্যে প্রভাবশালী গডফাদার আছেন।
জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে আমার প্রশ্ন একজন এসিল্যান্ড ও একজন পুলিশ ইন্সপেক্টরকে সন্ত্রসীরা পেটালে – বেইজ্জতি করলে যে আইন পদক্ষেপ নেয়া হত, সে পদক্ষেপের সঙ্গে চেয়ারম্যান ও তার পরিষদের ৯ জন গ্রাম পুলিশকে পেটানোর ঘটনার আইনি পদক্ষেপের মধ্যে পার্থক্য কি? পুলিশ সুপার-জেলা প্রশাসক কি বলবেন তা এখানে জানানো সম্ভব নয়। তবে আমরা তা জানি। এখানে আমরা যা জানি তা হলো পুলিশ ইন্সপেক্টর কিম্বা এসিল্যান্ড হামলার শিকার হলে ঝড়ের আগে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করতেন। সাথে সাথে ব্লকরেইড দিয়ে হামলাকারীদের পাকড়াও করা হতো। এমনকি ঝুলিয়ে পিটানোরও ব্যাবস্থা হতো। কোন কোন ক্ষেত্রে বন্দুক যুদ্ধে মারাও যেতে পারতো।
এক কথায় এক হাটে দুই দর। আর এই এক হাটে দুই দরের কারণেই সাধারণ মানুষের প্রশাসনের ওপর আস্থার ঘাটতি হয় কখনো কখনো। এ অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এ বি এম মোস্তাকিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তিনি স্থানীয় পুলিশের ওপর প্রভাব খাটান। দূর্বল শ্রেনীর পুলিশ কর্মকর্তারা অনেক সময় ঘাবড়ালেও নৌকার মাঝি ঠিকই আছেন। আর তাই মামলা রেকর্ডে একটু গড়ি মসি হলেও মাঝির কারণে থানায় মামলা রেকর্ড হয়। তবে আইনি পদক্ষেপের গতি হারায়। সাধারন জনগন এটি প্রত্যাশা করেন না। তাদের প্রত্যাশা সু-শাসনের। এখন দেখার পালা মোস্তাকিমের গুনধর ভাগ্নেকে ধরতে পুলিশ ব্লকরেইড দেয় কিনা ?
লেখক: হাবিবুর রহমান, সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক সাতনদী।