এমপি দোলনকে সোনার নৌকা পরিয়ে পথভ্রষ্ট হন বিএনপি নেতা আমজাদ
আমজাদের সকল অপকর্মের নেতৃত্বে ছিল যুবলীগ সভাপতি শফি
আ’লীগের সাথে সখ্যতার জেরে, সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে স্থান পান নি চেয়ারম্যান আমজাদ
নিজস্ব প্রতিবেদক: পথভ্রষ্ট বিএনপি নেতা আমজাদ হোসেন আওয়ামী লীগের সাথে সখ্যতা করে গ্যাড়াকলে পড়েছেন। মৎস্য ঘের দখলে নেতৃত্ব দিয়ে বাড়িছাড়া করেছেন জমির মালিকদের। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। আ’লীগের সাথে সখ্যতার জেরে, সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে স্থান পান নি চেয়ারম্যান আমজাদ । ঘটনাটি শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা রেখে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমজাদুল ইসলাম আমজাদ। বিগত দিনে সক্রিয় ছিলেন না দলীয় রাজনৈতিক কর্মকান্ডে। ত্যাগী নেতাকর্মীদেরও কখনো খোঁজ খবর নিতেন না তিনি। উপরন্তু পদ্মপুকুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শফির সঙ্গে একজোট হয়ে করেছেন নানা অপকর্ম। এখানেই শেষ নয়, স্বয়ং আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য এসএম আতাউল হক দোলনকে নিজ ইউনিয়নে আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রকাশ্যে তার বুকে সোনার নৌকা লাগিয়ে দেন চেয়ারম্যান আমজাদ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর-কালিগঞ্জ আংশিক) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম আতাউল হক দোলন। এসএম আতাউল হক দোলন এমপি হওয়ার পরপরই তার সাথে সখ্যতা গড়তে তৎপর হয়ে ওঠেন পদ্মপুকুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলাম আমজাদ। এক পর্যায়ে ২০২৪ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি (৪ ফাল্গুন) গড় পদ্মপুকুর দাখিল মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মাদ্রাসার মাহফিলে প্রধান অতিথি করে এমপি দোলনকে নিয়ে যান চেয়ারম্যান আমজাদ। ওয়াজ মাহফিলের একপর্যায়ে এমপি দোলনের বুকে স্বর্ণের তৈরি নৌকার স্টিকার লাগিয়ে দেন চেয়ারম্যান আমজাদ। এসময় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নূরুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। সম্প্রতি সেই ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শ্যামনগর উপজেলা জুড়ে নিন্দার ঝড় বইছে। স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ।
এখানেই শেষ নয় তার অপকর্মের ফিরিস্তি। মৎস্য ঘের দখল, লুটপাট, মারপিট, অবৈধ সম্পদ অর্জন, ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়ন মূলক কাজ বাস্তবায়নে একাধিক অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগও রয়েছে চেয়ারম্যান আমজাদের বিরুদ্ধে।
ইতিপূর্বে পদ্মপুকুর ইউনিয়নে কেয়ার রাস্তা করার জন্য ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি শফির সাথে হাত মেলান বিএনপি নেতা আমজাদ। উক্ত রাস্তা তৈরির বরাদ্দকৃত অর্থ পরষ্পর যোগসাজসে আত্মসাৎ করে নি¤œমানের বালি ব্যবহার করেন তারা। বছর পার না হতেই সেই রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে জনগণের চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুথানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বীরদর্পে বেরিয়ে আসেন চেয়ারম্যান আমজাদুল। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করেই রাতারাতি সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ঘের দখলে মেতে ওঠেন তিনি। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর-২৪) রাত ৯ টার দিকে ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক হাফিজুর রহমান, শেখ ইউসুফ আলী, আবু বক্কার সিদ্দিক, আলমগীর হোসেন আলম গংদের সহযোগীতায় ৩/৪ শত দুর্বৃত্ত নিয়ে পদ্মপুকুর ইউনিয়নের ঝাঁপা-সোনাখালী গ্রামে অবস্থিত কালিগঞ্জের কালিকাপুর গ্রামের সমশের হাজীর পুত্র কালিগঞ্জ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রবিউল্লাহ বাহার সহ তার পরিবারের ১২ শ’ বিঘার একটি মৎস্য ঘের দখল নেন চেয়ারম্যান আমজাদ। ঘেরের কর্মচারী হাদি, হাবিবুর ও মুজিবরকে মারধরও করা হয়।
এর আগে সোমবার ১১ নভেম্বর-২৪ সকাল ১১ টায় উক্ত ১২’শ বিঘা চিংড়ি ঘের দখলের হুমকীর প্রতিবাদে শতাধিক হিন্দু ও মুসলমান ঘের মালিক সোনাখালী বাজারে মানববন্ধন করে। মানববন্ধন করায় ঘের মালিকদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ঐদিন রাতেই চেয়ারম্যান আমজাদুলের নেতৃত্বে বাবুল, আবু বক্কার, খোকন, শামিম সহ ২০-২২ জন বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নিয়ে ঘের মালিকদের উপর হামলা করে। তাদের হামলায় আবু মুছা, কাশেম গাজী ও আল আমিন নামে ৩ জন গুরুতর আহত হন।
জমির অপর মালিক ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কাশেম গাজী সাতনদীকে জানান, চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও তার বাহিনী ১২ শ বিঘার চিংড়ী ঘের দখল করে খ্যান্ত হননি। তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী জমির মালিকদের বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে ভয়ভীতিকর হুমকী প্রদর্শন করেন। ফলে আমি সহ অন্তত ১৫ জন জমির মালিক ২ মাস যাবৎ আত্মগোপনে থেকে গত মঙ্গলবার বাড়ি ফিরেছি।