
ভয়াবহ ক্ষতির মুখে দেবনগর বিলের ধান ও পাট
- মাটিতে মিশে গেছে অধিকাংশ ক্ষেতের পাট
- বিঘা প্রতি ধান নষ্ট হয়েছে ৬-৮ মন
- বিচালি নষ্ট হয়ে বিক্রীর অনুপযোগী
আহাদুর রহমান/জগন্নাথ রায়:
গত কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছেন সদর উপজেলার দেবনগর বিলের কয়েকশত চাষী। অনেকের কাটা ধান বৃষ্টির জমা পানিতে পঁচে যাচ্ছে। সেই সাথে নষ্ট হচ্ছে বিচালি। পাটের অবস্থাও বেশ নাজুক। এ অবস্থায় এখনও পর্যন্ত তাদের খোঁজ নেয়নি উপজেলা কৃষি অফিস। অভিযোগ আছে বিশেষ কৃষক ও অর্থনৈতিক সুবিধা ছাড়া তাদের খোঁজ নেয়না অত্র এলাকার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা কিরণ বাবু।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের দেবনগর বিলের ধান নষ্ট হয়েছে টানা বর্ষণে। সেই সাথে হঠাৎ শিলা বৃষ্টি হওয়ায় ধান ক্ষেতে ঝরে পড়েছে। একই সাথে ক্ষতি হয়েছে পাটেরও। শিলার আঘাতে পাটের ডগা ভেঙে গিয়েছে বেশির ভাগ চাষের জমিতে। এমন ক্ষতির মুখে পড়ে কৃষকরা এখন দিশেহারা। এ ছাড়াও গত ৪ মে ২০২০ তারিখে ১২.১১.০০০০.০১২.৩৮.০০১.১৮/১২৭৩ নং স্মারকে যে সকল জেলা-উপজেলায় পাট চাষ হয় সে সকল এলাকার পাট চাষীদের পাটের বিভিন্ন রোগ ও পোকা দমনের জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেয়ার কথা। কিন্তু এ পর্যন্ত রোগ ও পোকা দমনের কোনরকম নির্দেশনা এ অঞ্চলের কৃষকরা পাননি। সব মিলিয়ে সুবিধা বঞ্চিত দেবনগর বিলের অধিকাংশ চাষি।

আনারুল ইসলাম
সদরের দেবনগর গ্রামের চাষী আনারুল ইসলাম জানান, শিলা বৃষ্টির কারনে বিঘা প্রতি ৬-৮ মন ধান নষ্ট হয়েছে। বিচালিগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। আর এ মাঠে শুধু এক ফসল হয়। আমি কোন রকম সরকারি সহায়তা পাইনা।

আজিজুল হক
আরেক চাষি আজিজুল হক জানান, শিলা বৃষ্টিতে আমার পাট আর ধানের ক্ষতি হয়েছে। পাটের ডগা নেই। আমার ভাগের ৪ বিঘা জমিতে প্রায় ৬০ বস্তার মত ধান পাওয়ার কথা। এখন হয়তো ৩০/৩৫ বস্তা পেতে পারি। সবাই ঘুষ ছাড়া কাজ করেননা কিরণ বাবু। আমরা কোন রকম সহায়তা পাই না। যারা চাষ করে না বা বেশ বড় মাপের চাষী তাদের সহায়তা করেন তিনি।

মহসিন
একই গ্রামের মহসিন হোসেন জানান, আমি এক বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। জমির মধ্যে হাজারে একটা দুইটা গাছ আছে। এই পাটের কোন ভবিষ্যৎ নেই। নতুন করে পাট বোনার সময় না থাকায় দুঃচিন্তায় আছেন তিনি। এখনও পর্যন্ত কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি।

মোকলেসুর রহমান
পাট চাষি মোকলেসুর রহমান জানান, ধান থেকে পাট চাষ লাভজনক। তাই এবার সাড়ে পাঁচ বিঘা জমিতে পাট বুনেছিলেন। হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে পাটের ডগা ভেঙে ক্ষতির সম্মুখীন হন তিনি। এ পর্যন্ত প্রায় পনের হাজার টাকা খরচ করেছেন তিনি।
তরুন উদ্যোক্তা সাইদুর রহমান জানান, আমার ৪ বিঘা জমির ধান পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা সাধারণত বিচালিও পশুখাদ্য হিসেবে বিক্রি করি। বিচালিও নষ্ট হয়েছে। এখন আমি ধানের সাথে সাথে গরুর খামার নিয়ে চিন্তিত। কিছু জমিতে পাটের চাষ করেছিলাম সেটাও নষ্ট হয়ে গেছে। কিরণ বাবু আমাদের কোন রকম সহায়তা করেননা। বিশেষ দরকার ছাড়া এই এলাকা মাড়াননা।
একই ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ এই বিলের সব ধান ও পাট চাষিরা।
সকল চাষীরা প্রায় একই সুরে বলেন, তাদের দিকে নজর দেয়নি কেউ। কোন রকম সরকারি সহায়তা পাননা তারা। ধান, পাট ও রবি শষ্যের চাষের সময় দেখা মেলা ভার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার। অভিযোগ আছে আর্থিক সুবিধা নিয়ে তিনি বিশেষ বিশেষ লোকদের সহায়তা করে থাকেন। অন্ধকারে থাকে প্রকৃত চাষী।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমজাদ হোসেন বলেন, উপযুক্ত প্রমাণ পেলে অবশ্যই কিরণ বাবুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেব। আর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ সহ আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টিও দ্রুত সমাধান করব।