
মো: কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম অফিস:
র্যাব ৭ এর হাতে গত ১৪ই মে তারিখে রাঙ্গুনিয়া পটিয়ার আংশিক সীমানার গভীর জঙ্গল হতে অস্ত্র ও অস্ত্র তৈরির দু’কারিগর গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারের বিবরণ পটিয়া-রাঙ্গুনিয়ার দুর্গম পাহাড়ি সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করেছে র্যাব। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে ৪টি দেশিয় ওয়ানশুটারগান, ৩ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ১০ রাউন্ড খালি খোসা এবং অস্ত্র তৈরির বিপুল সরঞ্জাম রয়েছে। এসময় অস্ত্র তৈরির প্রধান দুই কারিগরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, রাঙ্গুনিয়া থানার পশ্চিম খুরুশীয়া গ্রামের মো. রোকন (৩৮) এবং একই গ্রামের মো. আবদুল (৩২)। বৃহস্পতিবার পদুয়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাইল্যার বাপের ডেবা পাহাড়ে একটি অস্ত্রের কারখানায় এই অভিযান চালায় র্যাব-৭।

অপহৃত মোঃ মোছলেম ড্রাইভার

অপহরণকারি (পলাতক) সোহেল উদ্দিন রাসিদ

আটককৃত অস্ত্রের কারিগর ও অপহরণকারি মোঃ রোকন ও মোঃ আব্দুল
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে পটিয়া-রাঙ্গুনিয়া সীমান্তে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী পাহাড়ে চাষাবাদ করতে আসা কৃষকদের অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে আসছিল। পটিয়ার খরনা, কেলিশহর, শ্রীমাই, হাইদগাঁও পাহাড় ও আশেপাশের এলাকায় এসব সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন ধরে লেবু ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকদের জিম্মি করে অর্থ আদায় করছিল। স্থানীয়রা আরো জানান, সন্ত্রাসীদের ভয়ে অনেক লেবু বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী পাহাড়ে যেতে ভয় পেতেন। তারা ব্যবসায়ীদের অস্ত্রের মুখে ধরে নিয়ে মোটা অংকের টাকা দাবি করত এবং না দিলে মারধর করত। পটিয়ার পূর্ব হাইদগাঁও এলাকা থেকে অপহণ হওয়া চন্দনাইশের এক ট্রাক ড্রাইভারকে ৪ মাস পরও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অপহরণের শিকার হলেও পরবর্তীতে তারা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন।
র্যাব-৭ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাহমুদুল হাসান মামুন জানান, দুর্গম ঐ পাহাড়ের উপর পলিথিন ও বাঁশ দিয়ে নির্মিত দোচালার নিচে অস্ত্র তৈরি করা হয়- এমন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় সেই কারখানায় অভিযান চালানো হয়। এসময় অস্ত্র তৈরির প্রধান দুই কারিগরকে বিপুল অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার দুই কারিগর জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র তৈরি করে পটিয়া, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়িসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করত। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সহকারী পুলিশ সুপার মো. মাহমুদুল হাসান মামুন।
উদ্ধার হয়নি অপহৃীত ট্রাকচালক মো: মোছলেম, তাঁর পরিবার জানেনা মোছলেম এখনও জীবিত আছে কিনা। বিগত ২১/০২/২০২০ইং তারিখে রাত আনুমুনিক ২১ টা ২০ মিনিট ঘটিকায় চন্দনাইশ থানার অন্তর্গত কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নে পশ্চিম এলাহাবাদ ৩নং ওয়ার্ডের মো: এনুমিয়ার পুত্র মো: মোছলেম ড্রাইভার (৪৮) পরিচয় অজ্ঞাত পাহাড়ী সন্ত্রাসী কর্তৃক অপহরণ হয়। অপহরণের বিষয় নিশ্চিত হয়ে এবং সন্দেহকৃত অপহরণকারিদের নির্দিষ্ট নাম ঠিকানা দিয়ে পটিয়া থানায় অপহৃীত মোছলেম এর ভাই আবু তাহের বাদী হয়ে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন। পটিয়া থানার মামলা নয় ৩৪ তাং ২৩/০২/২০২০ইং মামলার প্রেক্ষিতে পটিয়া থানা পুলিশ রহিমকে গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত রহিমের স্বীকারুক্তি মোতাবেক সাইফুল গ্রেফতার হয় এরপর অপহরণের সাথে জড়িত অভিযুক্ত আরেক আসামী সাবেক পটিয়া ছাত্রলীগের নেতা জমিরকে গ্রেফতার করেন পটিয়া থানা পুলিশ। কিন্তু কয়েকজন আসামী গ্রেফতার হলেও পাহাড়ী এলাকা হতে অপহৃীত মোছলেমকে উদ্ধার করতে পুলিশ গড়মসি করাই মোছলেম এর ভাই আবু তাহের বাদী হয়ে র্যাব ৭ এর বরাবরে এক আবেদন দায়ের করেন এবং তার ভাই মোছলেমকে উদ্ধার ও অপহরণকারিদের গ্রেফতারের বিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন। অপহরণকারিরা সঙ্গবদ্ধ পাহাড় সন্ত্রাসী এবং অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসাবে চিহ্নিত। ঐ সন্ত্রাসী গ্রæপ দীর্ঘদিন যাবত পটিয়া চন্দনাইশ দোহাজারি রাঙ্গুনিয়া এবং বান্দরবান এলাকার পাহাড়ের গভীর জঙ্গলে অবস্থান পূর্বক অপহরণ, চাঁদাবাজী ও ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধ করে আসছে বিশেষ করে পাহাড় হতে কাঠ সংগ্রহকারী ও কৃষি ব্যবসায়ী এবং পটিয়া চন্দনাইশের পেয়ারা ও লেবু বাগানের মালিকদের কাছ হতে প্রতিনিয়ত চাঁদা সংগ্রহসহ অস্ত্র ও দেশি তৈরির মদ সরবরাহ করে থাকেন। তাদের সাথে স্থানীয় একাধিক সন্ত্রাসী ও অস্ত্র এবং চোলাই মদ সংগ্রহকারীদের যোগসাজস রয়েছে বলে জানা যায়। অপহরণকৃত ট্রাক চালক মোছলেম ২১/২/২০২০ইং তারিখে প্রতিদিনের মত চন্দনাইশ ও পটিয়া সীমানার পাহাড়ী এলাকায় ইট ভাটার জন্য নির্দিষ্ট স্থান আজিম সওদাগরের বাগান হতে জ্বালানি কাঠ ভর্তিকরে আনতে গেলে হঠাৎ পাহাড় হতে নেমে আসা পরিচয় অজ্ঞাত পাহাড়ী স্বস্ত্র-সন্ত্রাসী ও মুখোশ পড়া বাঙালী সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের মুখে ট্রাক চালক মোছলেমকে তুলে পাহাড়ের গভীর অরণ্যের দিকে নিয়ে যায়। মোছলেমকে নেওয়ার আগে অপহরণকারি বাগানের মালিক আজিম সওদাগর আছে কি মর্মে খোঁজ করেন। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে গাড়ী চালক মোছলেমকে অস্ত্র ঠেকিয়ে নিয়ে যায়। নিয়ে গিয়ে প্রথমে মুক্তিপন হিসাবে ৩ লক্ষ টাকা দাবী করে। কিন্তু মুক্তিপন চাওয়ার একদিন পর একেবারে নি¤েœ ১০ হাজার টাকা দিতে বলে। তাদের কথামত ১০ হাজার টাকা দেওয়ার পর হতে মোবাইল একেবারে বন্ধ করে দেয়। র্যাব ৭ কে অভিযোগ দায়ের করার পর র্যাব ৭ এর টিম দীর্ঘদিন অনুসন্ধান করে অপহরন দলের দুইজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে রাঙ্গুনিয়া পাহাড়ী অরন্য হতে অস্ত্র তৈরির সরঞ্জামসহ দুইজনকে গ্রেফতার করলেও বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায় যে, তাদের কাছে আরো একাধিক অস্ত্র রয়েছে বিশেষ করে বালু সাইফুলের মামা সোহেল ও বার্মাইয়া কালা জাফর এর কাছে দুইটি একে ৪৭ রাইফেল ও একাধিক অস্ত্র রয়েছে। সোহেল এর বাড়ী সাইফুলের একই এলাকায় বলে জানা যায়। অন্যদিকে অনুসন্ধানে জানা যায় যে, বাগানের মালিক আজিম সওদাগরের সাথে পাহাড়ী ঐ সন্ত্রাসীদের গভীর সখ্যতা রয়েছে। তাদেরকে আজিম সওদাগর বিভিন্ন সময় অর্থ যোগান দিয়ে থাকে- বিস্তারিত আরও অনুসন্ধানি সংবাদ আসছে।