
আব্দুর রহমান: চাকরি না ছেড়েই আমেরিকায় পাড়ি দিয়েছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বল্লী ইউনিয়নের ৮৭নং ঘরচালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তাহেরা সুলতানা। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস। অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে তাহেরা সুলতানা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তিনি ডাকযোগে মেডিকেল ছুটির আবেদন পাঠিয়ে কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে পরদিনই আমেরিকায় চলে যান। পরে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠালে তার স্থায়ী ঠিকানায় চিঠি পৌঁছায়, কিন্তু উত্তরে সাড়া দেন তাঁর পিতা মো. রিজাউল হক।’ তাহেরা সুলতানার স্বামীর ঠিকানায় পাঠানো চিঠিটি ফেরত এসেছে কারণ তিনি তখন আমেরিকায় ছিলেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তাহেরা সুলতানার পিতা বিদ্যালয়ে এসে মেয়ের নামে আরও একটি মেডিকেল ছুটির আবেদন জমা দেন। তবে আবেদনপত্রে স্বাক্ষরটি সন্দেহজনক বলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাহামুদুল্লা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জানান।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, তাহেরা সুলতানা অতীতেও একাধিকবার দীর্ঘ ছুটি নিয়ে বিদেশে ছিলেন। ২০১০ সালে ১২০ দিন, ২০১৭ সালে ৯০ দিন, ২০১৮ সালে ১৮ দিন, ২০১৯ সালে ৭৪ ও ২৭ দিন, ২০২২ সালে ৯০ দিন এবং ২০২৩ সালে ১৮০ দিনের ছুটি নিয়েছেন তিনি। অফিস সূত্রের দাবি, ২০০৬ সালে নিয়োগপ্রাপ্ত এই শিক্ষক এখন আমেরিকার নাগরিক। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি চাকরিতে ২৫ বছর পূর্ণ করে পেনশন সুবিধা নেওয়ার পর স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাসের পরিকল্পনা করছেন।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. মাহামুদুল্লা বলেন, “আমি তাঁর খোঁজে গিয়ে কাউকে পাইনি। তাঁর পিতা বলেন, মেয়ে অসুস্থ, কিন্তু কোথায় আছে জানেন না।” এ ঘটনায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’ ও ‘পলায়ন’-এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করেছে। পাশাপাশি ঘটনাটি তদন্তে একটি তদন্ত বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
তাহেরা সুলতানার পিতা রিজাউল হকের সেলফোনে কল দিলে তার কন্যা নীলা জানান, ‘আব্বার চোখের সানি অপারেশন করেছে, অসুস্থ অবস্থায় পূর্ণ বিশ্রামে আছে। এখন কথা বলতে পারবেন না। তার বোন তাহেরা সুলতানার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কথা বলতে আমার ভাইয়ার (তাহেরা সুলতানার স্বামী) সাথে কথা বলেন।
সহকারী শিক্ষক তাহেরা সুলতানার স্বামী আমিরুল ইসলাম পরিচয়ে মোবাইলে বলেন, দিনের পর দিন মানুষ কিন্তু ছুটিতে থাকেন, মেডিকেল বা কোন কারণে ছুটি নিলে তার কোন নিউজ হয়না। আর এটা দুই মাস এখনও হয়ে পারেনি, ছুটিতে আছে। এটা নিয়ে কেন নিউজ হচ্ছে? বা আগেও একটা নিউজ হয়েছে। বিভাগীয় মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিভাগীয় মামলা ডিপার্টমেন্টের প্রসিডিউর। এখানে পত্রিকা কেন জড়াচ্ছে? ডিপিও স্যার একজন ভালো মানুষ, আমার মনে হচ্ছে অন্য কোন থার্ড পার্সন এটা নিয়ে উৎসুক। তাহেরা সুলতানার অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী মানসিকভাবে অসুস্থ, তিনি ছুটিতে আছেন। আর তার সাথে দেখা করতে গেলে আপনাকে খুলনা বা ঢাকায় আসতে হবে। সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আপনাদের সাথে দেখা করে বিস্তারিত জানাবো। কিন্তু একের পর এক তালবাহানা করে তিনি সংবাদটি প্রকাশ না করার জন্য সময় ক্ষেপন করেন।

