রুবেল হোসেন: ভারতীয় আমদানি জাত পণ্যবাহী ট্রাক থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগে বুধবার (২১ জুন) সকাল দশটা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয় যা দুপুর নাগাদ পুনরায় চালু হয়। ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা বন্দরের জিরো পয়েন্টে পণ্যবাহী ট্রাক আড় করে দিয়ে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। ভোমরা সি এন্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ভারতীয় ট্রাক প্রতি ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগে আমদানি রপ্তানী কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ভারতীয় ট্রাক ড্রাইভাররা। ভারতের ঘোজাডাঙ্গা রপ্তানিকারক ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের পক্ষে উক্ত টাকা উত্তোলনের প্রতিবাদ জানানো হয়।
গত ৩০ মে সি এন্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক এ.এস এম মাকছুদ খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা এক্সপোর্ট এন্ড ইমপোর্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি / সাধারণ সম্পাদককে ট্রাক প্রতি চাঁদা ১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২০০ টাকা করার বিষয়টি জানানো হয়। আমদানি রপ্তানী কার্যক্রম গতিশীল করা, বন্দরে যানজট নিরসন ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়। যা গত ৮ জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। চিঠি পাওয়ার পর গত ২ জুন ভারতের ঘোজাডাঙ্গা রপ্তানিকারক ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি এ.কে.এম জিয়াউল হক চৌধুরি ও সাধারণ সম্পাদক রাজু সাহাজী স্বাক্ষরিত এক পত্রে ভোমরা সি এন্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনকে বাড়তি চাঁদা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। এবং সামগ্রিক এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হলে ভোমরা আমদানি রপ্তারী কারক সমিতির সাথে আলোচনার অনুরোধ জানানো হয়।
চাঁদা বাড়ানোর বিষয়টি ভোমরা সি এন্ড এফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অনেক কর্মকর্তা ও আমদানি রপ্তানী কারক সমিতির পক্ষ থেকে নিন্দা করা হয়। উভয় দেশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের এমন পরষ্পর বিরোধী অবস্থানের মধ্যে ভারতীয় ট্রাক থেকে ২০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় শুরু হলে বুধবার (২১ জুন) সকাল দশটা থেকে ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে। এদিকে ভারতীয় ঘোজাডাঙ্গা রপ্তানিকারক ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তার অডিও বার্তায় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে কোন টাকা না দিতে এবং আমদানি রপ্তানী কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বলা হয়। এর পর থেকেই সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়ে আমদানি রপ্তানী কার্যক্রম। পরে উক্ত মালবাহী ট্রাকে পচনশীল পন্য থাকায় ২০০ টাকা চাঁদা দিয়ে বন্দরে ভারতীয় ট্রাকগুলো প্রবেশ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোমরা আমদানি রপ্তানীকারক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মোশারফ হোসেন সাতনদীকে জানান, “ভোমরা সি,এন্ডএফ এজেন্ট্স এসাসিয়েশন আমাদের সাথে কোনরূপ আলোচনা না করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে ট্রাক প্রতি ২০০ টাকা করে চাঁদা দেওয়ার জন্য বলে। কিন্তু ভারতীয় ঘোজাডাঙ্গা রপ্তানিকারক ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন স্পষ্টভাবে জানায় তারা কোন চাঁদা দিতে পারবে না। এমনি ভাবে গত ৮ তারিখ থেকে চাঁদা উত্তোলনে ব্যর্থ হয়ে আজ (বুধবার ২১ জুন) সভাপতি রাজু সাধারণ সম্পাদক মাকছুদ খান নিজে উপস্থিত থেকে ট্রাক প্রতি ২০০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলন শুরু করলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমদানি রপ্তানী বন্ধ করে দেয়। এখন পর্যন্ত (বুধবার বেলা ১:৩০ মিনিট) বন্দরে কোন গাড়ি প্রবেশ করছে না। আমরা বিষয়টির তীব্র নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোমরা সি,এন্ডএফ এজেন্ট্স এসাসিয়েশন এর সহ সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বানিজ্য বিষয়ক সম্পাদক শেখ এজাজ আহমেদ স্বপন সাতনদীকে জানান, “ সিএন্ড এফ এর মিটিংয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাঁদা আদায়ের বিরোধীতা করি। তারপরও সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক চাঁদা আদায়ের সিদ্ধান্ত নেন। আমি এখন বাইরে আছি। তবে আমি শুনছি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজে উপস্থিত থেকে চাঁদা উত্তোলন শুরু করলে ভারতীয়রা আমদানি রপ্তানী বন্ধ করে দেয়। এটা সম্পূর্ণ দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক নষ্ট করার জন্য বিরোধী দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এমন কাজ করছে।”
এদিকে আমদানি রপ্তানীর অচলাবস্থা দ্রুত নিরসণ না হলে জাতীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
চাঁদাবাজির অভিযোগে ভোমরা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানীতে অচলাবস্থা
পূর্ববর্তী পোস্ট