মো. কামাল উদ্দিন: গত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে শনাক্ত সংখ্যা ৭১ জন এবং মারা গেছেন একজন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৭ হাজার ৫১৬ জন। চট্টগ্রামে করোনা শানাক্তের দিকে দ্বিতীয়। কিন্তু হাসপাতাল গুলোতে তার উল্টো চিত্র! রোগী সংকট রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজসহ শহরের বিভিন্ন করোনা হাসপাতালে। প্রায় ১ হাজার ৬১২ জন করোনা রোগীকে সেবা দেওয়ার পর রোগী সংকটে বন্ধ হয়েছে চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের কার্যক্রম।
এদিকে রোগী ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগ উঠছে হাসপাতাল গুলোর বিরুদ্ধে। কিন্তু এই নিয়ম শুধু সাধারণ মানুষের উপর বর্তায়। টাকাওয়ালা প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবান রাজনীতিকরা আক্রান্ত হলেই চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে তেলেসমাতি করে নিয়ে যাওয়া হয়। যা দেখে মার্চের শুরুর সেই চিত্রের কথাই মনে করছে সাধারণ মানুুষ।
লকডাউনে শনাক্ত রোগীর চিকিৎসা করাতে জোর করে ধরে নিয়ে গিয়েছিল হাসপাতালে। তখন মজার বিষয় ছিল হাসপাতালে না যেতে করোনা শনাক্ত অনেকে গাঢাকা দেয়। এখন হাসপাতালে ধরে নেয়া তো দূরের কথা, শনাক্ত রোগীকে বলা হচ্ছে হাসপাতালে আসার দরকার নেই। দেয়া হচ্ছে ঘরে থেকে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ। দুই-তিনটি ওষুধের নাম বলে দেয়া হচ্ছে মুঠোফোনে। সেগুলো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে দায় সারছে চিকিৎসকরা। এমন মন্তব্য করোনা আক্রান্ত অনেক রোগীর।
নগরীর পাহাড়তলী এলাকার করোনা আক্রান্ত জসিম উদ্দিন বলেন, গত বুধবার রাতে চমেক হাসপাতালের ল্যাব থেকে মুঠোফোনে আমার করোনা পজেটিভ হওয়ার খবর জানান। তখন আমি হাসপাতালে ভর্তির কথা বললে দরকার নেই বলে ঘরে থাকার পরামর্শ দেন। দুটি ওষুধের নাম বলেন। সেগুলো খাওয়ার ২১ দিন পর যোগাযোগ করতে বলেন। এতে আমি মৃত্যুর শঙ্কায় ভুগছি, কারণ আমার শ্বাসকষ্ট হচ্ছে।
একমাত্র চমেক হাসপাতালে ৯৫ জন, জেনারেল হাসপাতালে ৯৬ জন এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ৩৬ জন রোগী ভর্তি আছে। অথচ জুন মাসেও এসব হাসপাতালে ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই রব ছিল। এদিকে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা করোনা আইসোলেশন সেন্টারগুলোতে এ পর্যন্ত মাত্র ২৪ জন রোগী ভর্তি আছে।
এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য তৈরি করা ৯টি হাসপাতালের ৭৮২ বেডের মধ্যে প্রায় ৬০০ বেড খালি। এরমধ্যে তিনটি হাসপাতালে এই মুহূর্তে কোনো রোগীই নেই। তিনটি হাসপাতালে ৬ থেকে ৮ জন করে করোনা শনাক্ত রোগী আছে।
চমেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক আফতাবুল ইসলামের মতে, চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে হাসপাতালে প্রচুর রোগীর ভিড় ছিল। তবে এখন করোনা রোগীদের মধ্যে ঘরে চিকিৎসা নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অনেকে সুস্থও হচ্ছেন। এটা অবশ্যই ভালো দিক।
সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বী বলেন, করোনা চিকিৎসায় চট্টগ্রামে অনেক ঝক্কি-ঝামেলা গেছে। যেখান থেকে মানুষ বিরক্ত ও আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এ কারণে হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা নিতে অনীহা এসে গেছে। মূলত সে কারণে হাসপাতালে রোগী নেই। তবে যেসব হাসপাতালে রোগী নেই সেগুলো ধীরে ধীরে গুটিয়ে ফেলা হবে।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার জন্য ৯টি হাসপাতাল আইসোলেশন সেন্টার চালু করে রোগী ভর্তি শুরু করে। কিন্তু করোনা রোগী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ রোগীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামের অনেক নামিদামি হাসপাতাল করোনা সন্দেহে রোগী ভর্তি না নিয়ে সাধারণ রোগীদের তাড়িয়ে দেয়। হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে অনেক। এসব ঘটনার মাস পার হতে না হতেই করোনার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো এখন রোগীশূন্য।