
হাফিজুর রহমান:
দাবীকৃত ৩০ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় সাতক্ষীরা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে একটি মামলায় আসামীর নিকট হতে মোটা অংকের টাকা ঘুষ নিয়ে বাদীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মন গড়া প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে কালিগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য ১৬ নভেম্বর সোমবার বেলা ১১টার সময় সমাজ সেবা কর্মকর্তার অফিসে যেয়ে বাদীনি নুরুন্নাহার এবং তার পিতা হতদরিদ্র নুরুল আমিন এবং ইউপি সদস্য তপন মন্ডল উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের সামনে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ না দেওয়ায় মিথ্যা বানোয়াট রিপোর্ট প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে বেশি বাড়াবাড়ি করলে উল্টো মামলায় বাদিনীর পিতাকে ফাঁসানোর হুমকি দেন।
বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সাতক্ষীরার মামলার সূত্রে এবং কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামের হতদরিদ্র মামলার বাদিনী এবং তার পিতা নুরুল আমিন ওরফে রুহুল আমিন মোড়ল জানান ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক তার কন্যা নুরুন্নাহার সঙ্গে পাশ্ববর্তী কালিকাপুর গ্রামের আকবার আলী মোড়লের পুত্র শাহিন আলম (২৮) এর সঙ্গে গত ০৮/০৮/২০১৪ইং তারিখে বিবাহ হয়। বিবাহের পর হতে স্বামী শ্বশুর শ্বাশুড়ী যৌতুকের জন্য প্রায় শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন করে আসছিল।
বিষয়টি নিয়ে গত ২২/৯/২০১৯ইং তারিখে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ৫৭২/১৯ নং পিটিশান মামলা দায়ের করে। পরে স্বামী আর নির্যাতন করবে না মর্মে মুচেলিকা দিয়ে আপোষ মিমাংসা করে মামলা তুলে নিয়ে পুনরায় ঘর সংসার করতে থাকে। কিছুদিন ভালোভাবে থাকলেও আবারো শুরু হয় স্ত্রী নুর নাহারের উপর যৌতুকের দাবীতে মারপিট ও নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে গত ১৮/০৯/২০২০ তারিখে মারাতœক জখম অবস্থায় নুরুন্নাহারকে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি করে।
বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী নুরুন্নাহার থানায় মামলা করতে ব্যর্থ হয়ে নিজে বাদী হয়ে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে গত ২১/৯/২০২০ ইং তারিখে ৩৯০/২০ নম্বর একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি তদন্তের জন্য বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল সাতক্ষীরা (ভারপ্রাপ্ত) বিচারক (জেলা জজ) শেখ মফিজুর রহমান কালিগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তাকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করে স্বাক্ষীদের গৃহিত জবানবন্দীর কপি সহ রিপোর্ট দাখিল করতে নির্দেশ দেন। আরও উল্লেখ করেন বিবাদীগণ কে অবগত করানো বা থাকার কোন আবশ্যকতা নাই।
মামলাটি নিয়ে গত ৪ নভেম্বর বেলা অনুমান ১১টার সময় সমাজ সেবা কর্মকর্তার অফিসে বাদিনী, তার পিতা এবং স্বাক্ষী এবং আসামীদের তার অফিসে ডেকে জবানবন্দি নিয়ে বাদিনী নুরুন্নাহার ও পিতা নুরুল আমিনের নিকট কড়া প্রতিবেদন দেওয়ার নাম করে ৩০ হাজার টাকা দাবী করেন। ঐ সময় গরীব অসহায় মানুষ এত টাকা কোথায় পাবো বলতেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে তার অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়।
পরে সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন তার সুপারভাইজারকে সাথে নিয়ে তার পরের দিন গোপনে আসামীদের বাড়িতে যেয়ে মোটা অংকের টাকা নিয়ে বাদিনীর বিপক্ষে একটি মন গড়া বানোয়াট কাল্পনিক প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে গত ২৫/১০/২০২০ তারিখে দাখিল করে। প্রতিবেদনে বাদিনী জখমী অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও তার উপর কোন নির্যাতন করা হয়নি বলে উল্লেখ করেন। বিষয়টি নিয়ে কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন জুড়ে সমাজসেবা কর্মকর্তার ভুমিকা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তপন মন্ডল, আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল মাজেদ সহ একাধিক ব্যক্তি জানান, তদন্তের সময় আমাদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষীদের জবানবন্দি নিলেও পরে সাদা কাগজে সহি নিয়ে চলে যেতে বলেন। এর পরে বাদিনীর বাবা নুরুল আমিন কে আলাদা ডেকে নিয়ে ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করেন যা অত্যান্ত দুঃখজনক। টাকা না দেওয়ায় গোপনে তদন্ত প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে পেশ করেন। তদন্তে সমাজসেবা কর্মকর্তা আসামীদের বাড়িতে গেলেও বাদিনী ও স্বাক্ষীদের কোন খোঁজ নেননি এবং আমাদের সাথে কোন যোগাযোগ ও কথা বলেননি।
ঘটনার সত্যতা জানার জন্য সোমবার বেলা আনুমানিক ১১টার সময় প্রথমে মুঠো ফোনে সমাজ সেবা কর্মকর্তার নিকট কথা বললে তিনি অফিসে যেতে বলেন। অফিসে যেয়ে বাদিনীর হাসপাতালের ভর্তির বিষয় জিজ্ঞাসা করলে তিনি কিছু জানেন না বলে জানান। ঘুষের বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলে তিনি অস্বীকার করে বলেন আমি বাদিনী বা তার পিতার কাছে কোন টাকা চাইনি। তদন্ত করে যেটা সত্যতা পেয়েছি সেটাই আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেছি। এ ব্যাপারে আমি কারোর কাছে কোন জবাব দিতে বাধ্য নই।