সচ্চিদানন্দ দে সদয়, আশাশুনি: আশাশুনি উপজেলায় ৬৭৫টি ভূমিহীন পরিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবর্ষের ঘর ও জমি পেয়ে পায়ের তলার মাটিতে জায়গা করে নিতে পেরে আনন্দাপ্লুত হয়ে উঠেছে। জন্মের পর থেকে গরীব পিতামাতার ঘরের এসব পরিবার রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে চরম বিপত্তি ও শীতের প্রকোপে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছিল। জাতির পিতার কন্যা, মানবতার কান্ডারী, মমতাময়ী মা হিসাবে পরিচিত জননেত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতায় মুজিববর্ষের উপহার হিসাবে সারাদেশের অসহায় ভূমি ও গৃহহীন মানুষ আশ্রয় খুঁজে পেতে শুরু করেছে। এরই অংশ হিসাবে আশাশুনি উপজেলায় এক হাজার ৯৭টি পরিবারকে গৃহ ও জমির ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তড়িৎ পদক্ষেপ ও সুদক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ২০২০-২১ অর্থ বছরে আশাশুনি উপজেলার ২৬৮টি পরিবারকে গৃহ নির্মানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। উপজেলার ১১ ইউনিয়নে ২৬৮টি গৃহ নির্মান করা হয়। প্রত্যেক গৃহের জন্য ব্যয় বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা করে। অসহায় মানুষের প্রত্যাশা পূর্ণ করে ঘরগুলো নির্মান শেষে প্রত্যেকের কাছে দলিলসহ গৃহ হস্তান্তর করা হয়। এরপর ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২৬০ টি পরিবারকে নির্বাচিত করা হয়। যার মধ্যে শোভনালী ইউনিয়নে ৫২, বুধহাটা ইউনিয়নে ৩৩, কুল্যায় ৩৯, দরগাহপুরে ৫, বড়দলে ১৬, আশাশুনি সদরে ৬৬, শ্রীউলায় ৯, প্রতাপনগরে ৩৬ ও কাদাকাটি ইউনিয়নে ৪টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মান করা হয়। প্রত্যেক ঘর নির্মানে ব্যয় বরাদ্দ ছিল ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা করে। নির্মান কাজ শেষে সকলের কাছে জমির দলিল ও ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। ৩য় পর্যায়ে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১৪৭টি ঘর নির্মানের জন্য পরিবার নির্বাচন করা হয়। যার মধ্যে শোভনালীতে ৫১, বুধহাটায় ৫, কুল্যায় ১৭, দরগাহপুরে ১২, বড়দলে ১৬, আশাশুনি সদরে ৪৫ ও শ্রীউলা ইউনিয়নে ১টি ঘর নির্মান করা হয়। ১৪৭টি ঘরের মধ্যে ২৫টি’র প্রত্যেকটি ১ লক্ষ ৯৯ হাজার ৫০০ টাকা করে এবং ১২২ টির প্রত্যেকটি ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা করে ব্যয় বরাদ্দ ছিল। এসব ঘর নির্মান শেষে জমির দলিলসহ ঘর উপকারভোগিদের মাঝে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখন চললে ৪র্থ পর্যায়ের কাজ। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে চতূর্থ পর্যায়ের কাজে আশাশুনিতে ২২১ টি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘর নির্মান ব্যয় বরাদ্দ ২ লক্ষ ৮৪ হাজার ৫০০ টাকা করে। এসব পরিবারের মধ্যে শোভনালীতে ১, বুধহাটায় ৪, কুল্যায় ৬, দরগাহপুরে ৫, কাদাকাটিতে ৪, খাজরায় ১১, আশাশুনি সদরে ২১, শ্রীউলায় ১১, আনুলিয়ায় ৪০ ও প্রতাপনগর ইউনিয়নে ১২১ পরিবার রয়েছে। এসব ঘরের জন্য কিছু স্থানে খাস জমি না থাকায় জমি ক্রয় করতে হয়েছে। ঘরগুলোর কাজ চলমান রয়েছে। ক্রমান্বয়ে ঘরের নির্মান কাজ শেষ হলে ঘরগুলো উপকারভোগিদের মাঝে হস্তান্তর করা হবে। আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়ানুর রহমানসহ সাম্প্রতিক সময়ে বদলী হয়ে যাওয়া ইউএনওবৃন্দের সুদক্ষ নেতৃত্বে পিআইও সোহাগ খানের নিরলস প্রচেষ্টায়, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপারানী সরকারসহ সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে যাওয়া এসি লান্ডবৃন্দে ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দের সহযোগিতায় সুন্দর ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সুরক্ষার মাধ্যমে ঘরগুলো নির্মান করা হয়েছে। কেবল সাধারণ ঘর নয় ঘরে বসাবাসের জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় দিক বিবেচনায় রেখে ল্যাট্রিন, রান্নাঘরসহ নির্মানকাজ করা হয়েছে। ছিন্নমূল, ভূমিহীন, গৃহহীন গরীব অসহায় পরিবারগুলো বসবাসের ঠিকানা খুঁজে পেয়ে নিজেদেরকে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। তারা ঘরের পাশে ক্ষেত তৈরি করে নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি চাষ, ছাগল, হাঁস মুরগি পালনসহ নানামুখী কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে সক্ষম হচ্ছে। এছাড়া জনমজুরি দিয়ে টাকা আয় করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে নতুন ভাবে এগিয়ে চলেছে। নতুন ও নিজেদের ঘর পাওয়াকে স্বপ্ন হিসাবে মনে করে তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তাঁর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গেলে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবর্ষের সারি সারি সুদৃশ্য-নয়নাভিরাম রঙিন ঘর দেখে মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। সবমিলে ৮৯৬টি ঘর নির্মান কাজ এগিয়ে চলেছে। এখনো শতাধিক ঘরের বরাদ্দ বাকী আছে। এগুলোর কাজ আসলে উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের অধিকাংশের ঠিকানা কার্যকর হবে।