করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে টানা বন্ধের পর গতকাল রবিবার ৬৭ দিনের মাথায় খুলেছে সরকারি সব অফিস। এদিন প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীই উপস্থিত ছিলেন। কিছু ক্ষেত্রে যাঁদের না এলেই নয়, এমন ব্যক্তিরা শুধু অফিস করেছেন। আগে থেকে কোনো নির্দেশনা না থাকায় কোনো কোনো দপ্তরে উপস্থিত ছিলেন প্রায় সবাই। তবে দর্শনার্থী পাস বন্ধ থাকায় সচিবালয়ে তেমন ভিড় ছিল না।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার রাজীব ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, সচিবালয়ে বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত হয়েছিলেন বলেই মনে হয়েছে। তবে অসুস্থ এবং গর্ভবতী বা বয়স্ক নারীদের কেউ সচিবালয়ে আসেননি। তিনি জানান, দর্শনার্থী পাস বন্ধ আছে। নতুনভাবে অফিস খোলার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যেসব নির্দেশনা তিনি পেয়েছেন তাতে দর্শনার্থী পাসের বিষয়ে কিছু বলা নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরীক্ষামূলক ১৫ দিনের অফিস চলার সময়ে সচিবালয়ে দর্শনার্থী পাস বন্ধ থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগেরও প্রায় সব কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তবে তুলনামূলকভাবে কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল কম। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসন অনুবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিশেষভাবে প্রয়োজন আছে, তেমন কর্মচারীদের শুধু অফিসে আসতে বলা হয়েছিল। নারী কর্মচারীদের প্রায় সবাইকে অফিসে আসতে বারণ করা হয়েছে। এই বিভাগের যুগ্ম সচিব (প্রশাসন) খলিলুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, সাধারণ ছুটির পুরো সময়ই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খোলা ছিল। তাই এদিনের (রবিবার) অফিস তাঁদের কাছে নতুন কিছু নয়। আগামী দুই সপ্তাহও তাঁরা আগের মতোই পালা করে অফিস করবেন বলে জানান তিনি। তথ্য মন্ত্রণালয়ের বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীও উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
তবে আজ সোমবার থেকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রত্যেককে পাঁচ দিন করে অফিস করার জন্য আদেশ জারি করেছে মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন বিভাগ। এই মন্ত্রণালয়ের মোট ১২টি অনুবিভাগ আছে। একেকটির নেতৃত্বে আছেন একজন করে অতিরিক্ত সচিব। প্রতিদিন দুটি করে অনুবিভাগ খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজনে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ফোন করলেই অফিসে আসতে হবে। কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।
এভাবে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ স্ব স্ব ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে ১৫ দিনের অফিস পরিচালনার প্রস্তুতি নিয়েছে। গত ২৮ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি অফিস আদেশ অনুসরণ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও সরকারি অফিসগুলোর জন্য আলাদাভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত ১২ দফা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ছুটি শেষে অফিস করার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘দীর্ঘদিন বাসায় বসে খবর শুনতে শুনতে অফিসে আসার আগে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছিল। অফিসে এসে অনেকটা ভালো লাগছে, সবার সঙ্গে দেখা হয়েছে। তবে ভয় একটু তো আছেই।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা মহামারি যেভাবে ছড়াচ্ছে তাতে ঘরে থাকলেও রক্ষা নেই। সতর্কতা মেনে কাজ করাই ভালো। আর আমাদের জন্য সরকার যে সুবিধা দিয়েছে সাধারণ মানুষ তো সেটা পাচ্ছে না, তার পরও তাদের কাজে নামতে হচ্ছে। আমরা বসে বসে নিয়মিত বেতন-বোনাস পাচ্ছি। আক্রান্ত হলে বাড়তি টাকাও মিলবে। তাই ভয় পাওয়ার কী আছে?’
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহ্মুদ চৌধুরী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা প্রমুখ সচিবালয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে। সূত্র: কালের কন্ঠ