মেহেদী হাসান, খুলনা থেকে: শেষ হলো আরেকটি শিক্ষাবর্ষ। নতুন বছর মানেই নতুন ক্লাস, আর নতুন বইয়ের উৎসব। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস। উৎসব আমেজে নতুন বই হাতে পাওয়ার লোভে বছরের প্রথম দিনটির জন্য অপেক্ষায় থাকে সারাদেশের কয়েক কোটি শিক্ষার্থী। যেন শুধুই নতুন বছরের প্রথম দিনের ক্ষণ গণনা। ওই দিন দেশজুড়ে চলবে বই উৎসব। নতুন বই হাতে নিয়ে নতুন স্বপ্নের বীজ বুনবে শিক্ষার্থীরা। নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা শিক্ষার্থীর উচ্ছ্বাস ছুঁয়ে যাবে শিক্ষক অভিভাবকদেরও। তবে এবার বছরের প্রথম দিনে সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে উৎসব করে বিনা মূল্যের পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও সব বই পাওয়া নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে শিল্পনগরী খুলনায়।
গত বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত খুলনায় আসেনি প্রাথমিকের ৭০ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৫০ শতাংশ বই। ০১ জানুয়ারি সকাল ১০টায় খুলনা সিএমবি কলোনির মডেল স্কুলে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনায় ১ হাজার ৫৭১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। বইয়ের চাহিদা রয়েছে ১০ লাখ ৬৫ হাজার ২৩১টি। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত ৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৪১টি বই এসেছে। বাকি বইগুলো দু-একদিনের মধ্যে চলে আসবে। চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৩০ শতাংশ বই এসেছে। অন্যদিকে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪২০টি ও ১৩৬টি মাদ্রাসা রয়েছে। বইয়ের চাহিদা রয়েছে ২৯ লাখ। পর্যন্ত চাহিদার অর্ধেক এসেছে। ফলে বই উৎসবে খালি হাতে ফিরতে হতে পারে অনেক শিক্ষার্থীকে। সরবরাহের ধীর গতির কারণে শিল্পনগরী খুলনায় এসেছে প্রাথমিক পর্যায়ের মাত্র ৩০ শতাংশ আর মাধ্যমিক পর্যায়ের ৫০ শতাংশ বই। তবে দু-একদিনের মধ্যে সব বই এসে পৌঁছাবে বলে আশাবাদী শিক্ষা কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয় ২০১০ সালে। টানা ১১ বছর দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হচ্ছিল। এ দিনটিকে বই উৎসব হিসেবে পালন করে আসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর এই উৎসবে ছেদ পড়ে। করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম দিনে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে উৎসব করে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। এ জন্য নভেম্বরের মধ্যে প্রত্যেক জেলায় পৌঁছে দেয়া হয় বই এবং তা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বিদ্যালয়ে পাঠানো হয়। তবে এ বছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেও সব বই হাতে পায়নি জেলার শিক্ষা বিভাগ। বৃহস্পতিবার গোডাউন থেকে বই বিতরণ আর গ্রহণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা।
খুলনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নতুন বছরের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হবে। আমাদের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বই উৎসবকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করেছে। তিনি বলেন, চাহিদার বিপরীতে প্রায় ৩০ শতাংশ বই এসেছে। বাকি বইগুলো দু-একদিনের মধ্যে চলে আসবে।
খুলনা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা খো. রুহুল আমিন বলেন, খুলনায় এ বছর বইয়ের চাহিদার প্রায় অর্ধেক পেয়েছি। স্বল্প বই নিয়েই পহেলা জানয়ারি বই উৎসবের জন্য আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আশা করি শিক্ষার্থীরা বই উৎসবের দিন খুশি মনেই বাড়ি ফিরবে।
খুলনা বিভাগের দুই জেলা চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরে প্রাথমিকের এখনও কোনো বই পৌঁছায়নি। তবে দ্রুত সময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উপ-পরিচালক মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, আমরা আশা করছি পুরো সেট না হলেও ১ জানুয়ারি সব শিক্ষার্থীই কিছু বই পাবে। কেউ বাদ পড়বে না। এ ছাড়া জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব বই পেয়ে যাবে। এ ছাড়া যে দুটি জেলায় প্রাথমিকের কোনো বই পৌঁছায়নি আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত এই সমস্যা সমাধানের।
পূর্ববর্তী পোস্ট