মেহেদী হাসান, খুলনা: খালিশপুরের বিআইডিসি সড়কে নির্মাণাধীন রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের প্রকৌশলী ওয়াং সিয়াও হুই (৪৪) এর লাশ গত ২৬ আগস্ট সকালে ভৈরব নদ থেকে উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। এ ঘটনায় তার সহকর্মী দোভাষী তুহিন মিয়া বাদী হয়ে ২৭ আগস্ট রাতে রূপসা থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেন। তাকে হত্যা করা হয়েছে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন, নাকি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্নিষ্টরা। নৌ পুলিশের তদন্তের পাশাপাশি আইজিপির নির্দেশে গুরুত্ব দিয়ে ছায়া তদন্ত করছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, জেলার রূপসা থানা পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি ও র্যাব। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেএমপি সদর নৌ থানা পুলিশের এসআই মো. বজলুর রহমান জানান, তিনি একাধিকবার ঘটনাস্থল, চরেরহাটে নদীর ঘাট, খালিশপুরে তার কর্মস্থল নির্মাণাধীন রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। সেখানকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান গেটের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছেন। ওই ফুটেজে দেখা গেছে, চীনা প্রকৌশলী ২৪ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাইরে বের হন। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে কাছেই ডান পাশের একটি সেলুনে গিয়ে চুল কাটান। সেই সেলুন কর্মীর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। কিন্তু এরপর তিনি কোথায় যান সে ব্যাপারে এখনও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আশপাশের এলাকা এবং ভৈরব নদ তীরবর্তী এলাকাগুলোর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। তিনি কীভাবে বা কোন পথে নদীর তীরে গিয়েছিলেন সে তথ্য পাওয়া যায়নি। কীভাবে তার মৃত্যু হয়েছে তা স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। তিনি জানান, ইতোমধ্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যেতো। তবে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, ময়নাতদন্ত করা চিকিৎসক জানিয়েছেন, নিহতের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। এখন কেমিক্যাল এক্সামিনেশনও করা হবে। তারা চীনা প্রকৌশলীর মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন।
পিবিআই জানায়, বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নদীতে যাওয়ার রাস্তা, নদীর তীর এবং আশপাশের এলাকার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া ওই প্রকৌশলীর মোবাইলের ইনকামিং ও আউটগোয়িং কলের তথ্য সংগ্রহ করার পর পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
খালিশপুর থানা পুলিশ জানায়, নিহত ওয়াং সিয়াও হুই নগরীর খালিশপুরে নির্মাণাধীন রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের একাংশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সানডং সানলং সান হুই এর ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। গত ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তিনি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ ছিলেন। ওই ঘটনায় তার সহকর্মী দোভাষী তুহিন মিয়া ২৫ আগস্ট বিকালে খালিশপুর থানায় জিডি করেছিলেন। পরে ২৬ আগস্ট সকালে ভৈরব নদ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছিল নৌ পুলিশ। ওই প্রতিষ্ঠানের সেফটি অফিসার মো. আলামিন ও দোভাষী তুহিন মিয়া জানান, চীনা প্রকৌশলীর সঙ্গে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারও কোনো বিরোধ ছিল না। নিহতের সহকর্মীরা জানান, প্রকৌশলীর বাড়ি চীনের হানান প্রদেশে এবং তিনি বিবাহিত ছিলেন। তার স্ত্রী চায়নাতে থাকেন। আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মরদেহ চায়নাতে পাঠানো হবে।