লোটাস: আমার বাল্য বন্ধু জি এম রোকনুজ্জামান মুকুল প্রানোচ্ছল রসবোধ সম্পন্ন এক প্রতিভাবান ক্রিকেটার, এভাবে বলার কারন যে তাকে জেলা ব্যাপী সকলে ক্রিকেটার হিসাবে চিনতো। স্কুলে পড়ার সময়েই নিজের অজান্তেই আমাদের গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে- আমি, মুকুল, ক্রিকেটার ছোট খোকন, মিঠু, সুমন, বুলু লিটিল, আক্তারুল, তপু (কোচ, বিসিবি ) বিপু, সঞ্জীব ব্যানার্জি, শামীম, আক্কাস সহ আরো অনেকের সাথে।
মুকুলের সাথে আমার পারিবারিক ভাবে সম্পর্ক ছিল, খালাম্মা গত হয়েছেন কয়েক বছর হলো। মুকুলের আব্বা খুব ছোট অবস্থায় মারা গিয়েছিলেন। সে কারনে মুকুল খুব আদরের ছিল তার নানার কুলে, ওর মামাদের কারনে মুকুল জেলা ব্যাপী ভাগ্নে হিসাবে স্নেহ ধন্য ছিল। মনে পড়ে ৯২ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ ওদের বাড়িতে দেখেছিলাম খালাম্মা আমাদের মুকুলের মত আদর করে খাওয়াতেন।
সাতক্ষীরাতে ১ম বিভাগ ক্রিকেটে এরিয়ান্স ক্লাবের ২ টা টিম ছিল। আমরা ইয়াং এরিয়ান্সে ১ম বিভাগ ক্রিকেটে মুকুলের মামা, মনিরুজ্জামান কাকন ভাইয়ের ক্যাপ্টেনসিতে আমাদের হাতে খড়ি, মুকুলের উইকেট কিপিং ছিল অসাধারণ কত নামী দামী ব্যাটসম্যান তার স্ট্যাম্পিং এ ধরাশায়ী হয়েছেন। তৎকালীন সময়ে সাতক্ষীরা জেলা ক্রিকেট দলের অপরিহার্য সদস্য ছিল মুকুল।
৯২ সালে পল্লীমংগল স্কুল মাঠে আমাদের এক ঐতিহাসিক পিকনিক হয়েছিল যার নেতৃত্বে ছিল বন্ধু সুমন। ঐ দিন মুকুল গভীর রাতে বাড়ি না ফিরে আমাদের বাড়িতে ছিল, মুকুল, ছোট খোকন আমার নানার বাড়িতেও বেড়াতে গিয়েছিল। মুকুল কর্মজীবন শুরুর পর বেশিরভাগ সময়ই ঢাকায় অবস্থান করার কারনে যোগাযোগ কিছুটা কমে যায়। তবে বন্ধুত্বের কোন ঘাটতি ঘটেনি।
তবে মুকুলের হাসিমুখ না দেখে বুঝতাম তার ক্ষোভ অভিমান ছিল অনেক। মুকুলের আপন ছোট মামা সেই ৮০ দশকের শেষের দিক থেকে স্বপ্নের দেশ আমেরিকার নিউইয়র্কে থাকেন। অনেকের মত আমিও ভেবেছিলাম মুকুল অভিবাসী হিসাবে এদেশের বাসিন্দা হবে, কিন্ত নিয়তি !
মুকুল আল্লাহ পাকের আহবানে সাড়া দিয়ে না ফেরার দেশে, আমরা কেউ আগে অথবা পরে। এসব কথা যখন লিখছি তখন আমার দুচোখ ঝাপসা হয়ে উঠছে। মৃত্যুর জন্য আমদের কি প্রস্তুতি ? আমাদের উচিত আল্লাহ কে ভয় করার নীতি অবলম্বন করা। পৃথিবী নশ্বর, একদিন এই বিশ্ব ব্যবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটবে । মুকুলের পথের পথিক আমরা সবাই। আল্লাহ পাক মুকুলের পুত্র মাহি কে তুমি রহমতের চাদরে আবৃত করে রেখো। আমরা সবাই মুকুলের জন্য দোয়া করি “আল্লাহ পাক তুমি মুকুল কে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান করে নিও, আমিন।”
লেখক: নিউইয়র্ক প্রবাসী।