আহাদুর রহমান জনি: সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বীর মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে ক্রমেই রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তের পূর্বেই মিসিং জিডিকে উপেক্ষা করে পুনারায় সামেক হাসপাতালের পরিচালকসহ চারজনের নাম উল্লেখ পূর্বক নিহতের পুত্রকে দিয়ে হত্যা মামলার ঘটনায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
চলতি সপ্তাহের রবিবার বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলী মন্ডলের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনার দিনই বিষয়টি তদন্তে সহকারি পরিচালক ডা. অজয় কুমার সাহাকে প্রধান ও আরএমও ডা. আহমেদ আল মারুফকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২৪ ঘন্টার মধ্যে তদন্ত কমিটিকে রিপোর্ট প্রদান করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্তে দোষী শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি বলে ১১ অক্টোবর রিপোর্ট প্রদান করে এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে ঘটনার বিস্তারিত জানান তদন্ত কমিটি। তদন্ত রিপোর্ট পেয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গত ১১ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েও চিঠি দেয়া হয়। এ ঘটনায় করণীয় নির্ধারণে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারগণ বুধবার এক জরুরী সভায় মিলিত হন। পরষ্পর মতামত ও পরামর্শের ভিত্তিতে করনীয় নির্ধারন হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। লিফটম্যান হিসেবে দুইটি পদ সৃষ্টি হলেও দীর্ঘদিন যাবৎ প্রশাসনিক অনুমোদন না পাওয়ায় পদ দুটি শুন্য রয়ে যায়। সুতারং শুন্য পদে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়েদ আলী মন্ডল নিহতের ঘটনায় কারো দোষি সাবস্ত করা জটিল হয়ে দাড়িয়েছে।
মঙ্গলবার অকেজো লিফট থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলী মন্ডল এর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় তার ছেলে আব্দুল্লাহ বাদী হয়ে করে। অথচ গত ৪ অক্টোবর বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলী মন্ডল নিখোঁজের পর সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডাইরি করে নিহতের পরিবার। পরে ৪ দিন পর সামেক হাসপাতালের অকেজো লিফ্টের গ্রাউন্ড থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। রীতি অনুযায়ী লাশ উদ্ধারের পর মিসিং ডায়রিটি প্রক্রিয়গত ভাবে অপমৃত্যু হিসেবে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন ছিল। পরবর্তিতে তদন্তে হত্যা প্রমানিত হলে আসামীর নাম উল্লেখ পূর্বক আদলতে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। অথচ উল্লেখিত প্রক্রিয়া ব্যতিরেকে পুনারায় নিহতের সন্তানকে দিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত ই খুদা, রেডিওলজির টেকনিশিয়ান আব্দুল হালিম, ওয়ার্ড মাস্টার মুরাদ হোসেন ও লিফটম্যান আরিফ হোসেনকে আসামি করে সুনির্দিষ্ট হত্যা মামলা করায় দোষিরা পর্দার আড়ালে চলে যাচ্ছে। তত্বাবধায়ককে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দিতে, দূর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরকে পদায়ন করাতেই উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এ মামলা করানো ধারনা করছে সচেতন মহল।
উক্ত মামলায় হাসপাতালের চার জনকে আসামী করা নিয়েও চলছে নানা গুঞ্জন। পরিচালককে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সরিয়ে দিতে, দূর্নীতিবাজ ও ঘুষখোরকে পদায়ন করাতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে এ মামলা করানো বলে অভিমত সচেতন মহলের। প্রশ্ন উঠেছে রেডিওলজি বিভাগের দায়িত্বে থাকা টেকনিশিয়ান আব্দুল হালিমকে আসামি করা নিয়েও। এসব প্রশ্নে উত্তর খুঁজতে গিয়ে একশ্রেনীর অসৎ কর্মকর্তা ও দালালদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। যারা পরিচালকের জন্য হাসপাতালে দূর্নীতি ও দালালি কার্যক্রম চালাতে অক্ষম হয়ে পড়ে। এ ঘটনাকে পুঁজি করে তারা তৎপর হয়ে ওঠে। সৎ ও সজ্জন ব্যক্তি পরিচালককে সরাতে তারা মামলাটি করায়।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সাতনদীকে জানান, “শুধু বীর মুক্তিযোদ্ধা নয় যেকোন ব্যক্তির এভাবে মৃত্যু দুঃখজনক। তবে এ হাসপাতালের পরিচালককে দায়ী করে মামলার ঘটনা মানবতার সেবকদের ওপর কষাঘাত। জনবল সংকটের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, লিফটে অপারেটর পদে ২টি পদ সৃষ্টি হলেও নিয়োগের জন্য প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি। তাই নিয়োগ হয়নি।’
লিফট সম্পর্কে তিনি বলেন, গত কয়েকমাস ধরে লিফটি অকেজো থাকায় আমরা কোম্পানিকে বার বার জানিয়েছিলাম কিন্তু লিফটি মেরামত করতে কাউকে পাঠানো হয়নি।’