[caption id="attachment_49017" align="alignright" width="300"] সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিব ইমরানকে ও সাধারণ সম্পাদক হাছানুর জামান[/caption]
নিজস্ব প্রতিবেদক: কমিটি দেয়ার নামে জেলা জুড়ে অর্থ বাণিজ্যে নেমেছে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ সুমন হোসেন। হেভিওয়েট চারটি কমিটি বিক্রি করে ইতোমধ্যে প্রায় পৌণে কোটি টাকা আদায়ের অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। বাকি কমিটিগুলো বিক্রি করে দু’জনেই কোটিপতি হওয়ার চেষ্টা আছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
জেলা ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি এস এম আশিকুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ সুমন হোসেন শুরু থেকেই বিতর্কিত। আগেই তাদের একজনের বিরুদ্ধে বিবাহিত ও অপরজনের বিরুদ্ধে মাদক সেবনের অভিযোগ উঠেছিলো। সে বিতর্কের রেশ শেষ হতে না হতেই সাতক্ষীরার বিপুল পরিমান টাকার বিনিময়ে তালা উপজেলা ও কলারোয়া উপজেলার ছাত্রলীগের কমিটি গঠন করা হয়। এরইমধ্যে সাতক্ষীরা পৌর কমিটিও গঠন করা হয়। সব বিতর্ক ছাপিয়ে যখন তালার টর্চার সেলে ঘটনায় পুরো বাংলাদেশের চোখ যখন সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের ওপর তখনই দুই ইসলামী ছাত্র শিবিরের সদস্যদের কাছে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা কমিটি বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদিকে প্রত্যেকটি উপজেলা কমিটি দিতে উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ১০ লাখ টাকা করে জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দিতে হয়।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, ১৭ লাখ টাকায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা শাখার আংশিক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুজনেই শিবিরকর্মী। সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক মো: সুমন হোসেন স্বাক্ষরিত এক পত্রে রাজিব ইমরানকে সভাপতি ও হাছানুর জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে এই কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। তবে, গত বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) অনুমোদিত হলেও বিষয়টি প্রকাশ পায় দেরীতে। আর প্রকাশ পাওয়ার পরই বেরিয়ে এসেছে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিশেষ করে সদ্য অনুমোদিত এই কমিটির সভাপতি রাজিব ইমরানের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগে অপরিচিত মুখ রাজিব ইমরানের ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইল ঘেটে রীতিমত বিস্মিত হয়েছেন অনেকেই। সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটির সভাপতি রাজিব ইমরান ও সাধারণ সম্পাদক হাছানুর জামান দুজনই শিবিরের সক্রিয় সদস্য। এমনকি আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধেও তারা নানা সময় কথা বলেছেন বলে তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক পোস্ট সহ একাধিক প্রমাণ পাওয়া গেছে।
২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাজিব ইমরান তার ব্যক্তিগত প্রোফাইলে https://web.facebook.com/rajib.spi দা হাতে একটি শিশুর ছবি পোস্ট করেছেন, যেখানে লেখা আছে, ‘আমি লেংটা মনির, নৌকায় ভোট চাইতে আইলে ঠ্যাং কাইট্টা রাইখা দিমু।’ ২০১৪ সালের ৪ জানুয়ারি তিনি তার প্রোফাইলে আরও একটি ছবি পোস্ট করেছেন। যেখানে ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে লেখা আছে, ‘হালার-পো হালা, আজ তোর একদিন, কি আমার একদিন! ভোট না দিয়ে যাবি কৈ?’
২০১৮ সালের ৬ আগস্ট তিনি তার প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘কাদের সাহেব, “যারা হেলমেট পড়ে বা মুখ ঢেবে ছাত্রদের মারধর করে এবং লাঠি, চাপাতি নিয়ে পুলিশের সাথে ঘুড়ে বেড়ায় তাদেরকে কি বিএনপি জামাত শিবির বলে, আপনার চাইতে মখা ভাল ছিলো।”
২০১৮ সালের ৮ আগস্ট তিনি তার প্রোফাইলে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, মেজর অব শাহ আলম যা বলছিলেন সেটা এখন আমাদের কাছে পরিষ্কার, Make zourself prepared be stronger, অনেক অস্র দেবো পরিশিক্ষণ হবে, prepared to remain readz to fight our common enzmz. ce ce ce hasina lojjai বাচিনা।
আর ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়ার পর ৩০ এপ্রিল প্রথম প্রহরে তিনি তার প্রোফাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন হোসেনের সাথে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ধন্যবাদ দিলে আপনাকে ছোট করা হবে ভাই, অনেক আগে থেকে আপনার সাথে আমার পরিচয়, সব সময় নিজের ছোট ভাইয়ের মত ভালবাসা দিয়েছেন, ভুলগুলো সব সময় ধরায় দিবেন, আর যে দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন তার সঠিক ব্যবহার যেন করতে পারি তার জন্য দোয়া করবেন।’
অপর দিকে, সাধারণ সম্পাদক হওয়া হাসানুজ্জামান সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ-সম্পাদক ও ইউনিয়নের জাহানাবাজ গ্রামের কাওছার আলীর ছেলে। ধুলিহর ইউনিয়ন আ’লীগের নেতারা জানান, আওয়ামী রাজনীতিরসাথে কখনো জড়িত না থাকলেও বিগত সময়ে পকেট কমিটির মাধ্যমে হাসানুজ্জামানকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ-সম্পাদক করা হয়। যেটা নিয়ে আপত্তি ছিলো তৃণম‚ল পর্যায়ের ত্যাগী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ভিতরে। কখনো হাসানুজ্জামানকে তারা সরকার দলীয় কোন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে দেখেননি। বরং উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছিল। যেটা সম্পর্কে সকলে অবগত। কিন্তু, টাকা দিয়ে এক আ’লীগ নেতাকে ম্যানেজ করে তার মাধ্যমে উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছে সে।
ধুলিহর ইউনিয়ন আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বোরহান উদ্দীন, সাধারণ-সম্পাদক মিজানুর রহমানসহ একাধিক নেতারা বলেন, হাসানুজ্জামান আওয়ামী পরিবারের সন্তান না। অথচ বিগত সময়ে ত্যাগী নেতাদের বঞ্চিত করে হাসানুজ্জামানকে সাধারণ-সম্পাদক করে পকেট কমিটি গঠন করে তৎকালীন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ-সম্পাদক। বিগত সময়ের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ইউপি নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছিল।
নৌকার বিপক্ষে কাজ করার কথা স্বীকার করে সদর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান বলেন, আমি শুধুমাত্র উপজেলা নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছিলাম। ওই ঘটনাকে পুঁজি করে আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার বিপক্ষে নানা রকম অবান্তর তথ্য ছড়াচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা ছাত্রলীগের এক সভাপতি প্রার্থী জানান, জেলা ছাত্রলীগের সম্পাদক সুমন ভাই আমার কাছে ১০ লাখ টাকা দাবি করে। আমি ৫ লাখ টাকা দিতে রাজি হই। তবে রাজিব ইমরান ৮ লাখ টাকা দেওয়ায় তাকে সভাপতি করেছে। আর সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে নিয়েছে ৯ লাখ। যা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার হাত দিয়েই নিয়েছে।
এদিকে আজ ভোরে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এস এম আশিকুর রহমান ও মোঃ সুমন হোসেন স্বাক্ষরিত আরও একটি পত্রে জানানো হয় পরবর্তি ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ছাত্রলীগের কমিট স্থগিত করা হয়েছে।
এসব অপকর্মের বিষয়ে বিতর্কিত নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম সাতনদীকে জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নেতারা আমাদের কথা শুনেনা। তারা আমাদের কাছে তালিকা চাইলে আমরা যাচাই বাছাই করে ১০ জনের নাম পাঠালে তার থেকে একজন বেছে নিয়ে ছাত্রলীগের কমিটি করতে পারে। তাহলে ছাত্রলীগের আর এ ধরনের বদনাম হওয়ার সুযোগ থাকতো না।